রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে বাংলাদেশি সাংসদ কুয়েতের তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। কুয়েতের ওই কর্মকর্তা দেশটির একজন সাংসদের হয়ে ঘুষ নেয়ার বিষয়ে মধ্যস্থতা করতেন। মানবপাচার ও অর্থপাচারের অভিযোগে কুয়েতে আটক বাংলাদেশের সাংসদ শহিদ ইসলাম পাপুলকে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা কাজ পাইয়ে দিতেন
কুয়েতের ইংরেজি দৈনিক আরব টাইমসের খবরে বলা হয়, মানবপাচার ও অর্থপাচারের অভিযোগে কুয়েতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তার সঙ্গে যোগসাজশ করে এসব কাজে সাহায্য করেছেন দেশটির আরও কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা। যাদের মধ্যে কিছু কর্মকর্তা ইতিমধ্যে চাকরির মেয়াদ শেষ করে অবসরে গেছেন। তারা বাংলাদেশের নাগরিকের সন্দেহজনক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় ঘুষ নিতেন বলে কুয়েতি তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছে স্বীকার করেছেন সাংসদ পাপুল।
আরব টাইসের খবরে আরও বলা হয়, তদন্ত কর্মকর্তারা বাংলাদেশি সাংসদের কুয়েত থেকে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশসহ ইউরোপে অর্থপাচারের বিষয়েও জানতে পেরেছেন। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশি সাংসদ আটক হওয়ার আগে কুয়েত থেকে তল্পিতল্পা নিয়ে পালিয়ে যেতে চেষ্টা করেছেন।
গত সোমবার কুয়েতের গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুয়ায়ী, কুয়েতের রেসিডেন্স ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্টের আবেদনে বাংলাদেশি সাংসদ ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী মূর্তজা মামুনকে রিমান্ডে নেয়া হয়।
জানা যায়, কুয়েতের পাবলিক প্রসিকিউশন তদন্ত পুরোপুরি শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই দুজনকে রিমান্ডে রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এদিকে গত শনিবার কুয়েতের উপপ্রধানমন্ত্রী আনাস আল সালেহ দেশটির গণমাধ্যমকে জানিয়েছে, মানবপাচারের অভিযোগের তদন্তে সরকারি কর্মকর্তা ও প্রভাবশালী ব্যক্তি যে–ই হোক না কেন, তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে। কাউকে ন্যূনতম ছাড় দেয়া হবে না। সাধারণ শ্রমিক হিসাবে কুয়েত গিয়ে বিশাল সাম্রাজ্য গড়া পাপুল ২০১৮ সালে লক্ষ্মীপুর-২ (রায়পুর) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পাপুলের মালিকানাধীন মারাফি কুয়েতিয়া গ্রুপে প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি কাজ করেন বলে কুয়েতে বাংলাদেশ কমিউনিটির ধারণা। কোম্পানির ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, সেবা খাত, নিরাপত্তা, নির্মাণ, আবাসন, পরিবহন, তেল শোধন প্রভৃতি খাতে কার্যক্রম রয়েছে মারাফি কুয়েতিয়া গ্রুপের। কুয়েতের বাইরে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে ব্যবসায় রয়েছে তাদের।
পাপুলের বিরুদ্ধে উঠা মানবপাচারের অভিযোগ তদন্ত হওয়ার বিষয়ে গত ফেব্রুয়ারিতে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছিল। সে সময় কুয়েত সিআইডির বরাত দিয়ে বাংলাদেশ থেকে মানবপাচার নিয়ে বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে কুয়েতি পত্রিকা আল কাবাস ও আরব টাইমস। আল কাবাসের খবরে বলা হয়, কুয়েতে মানবপাচার ও ‘ভিসা বাণিজ্যে’ জড়িত থাকার অভিযোগে তিন বাংলাদেশির একটি চক্রের সন্ধান পাওয়ার পর একজনকে গ্রেপ্তার করেছে সেখানকার সিআইডি। বাকি দুজন বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন; তাদের মধ্যে একজন সংসদ সদস্য। ওই চক্রটি ২০ হাজার জনকে কুয়েতে পাচার করে ৫০ মিলিয়ন কুয়েতি দিনার (১৩শ কোটি টাকা) হাতিয়ে নিয়েছেন বলে ধারণা দেয়া হয় ওই দুই সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনে।
ওই সময় আল কাবাস থেকে উদ্ধৃত করে আরব টাইমস পরে আরেক প্রতিবেদনে লিখেছিল, কুয়েত সরকারের কাজ পেতে কর্মকর্তাদের পাঁচটি বিলাসবহুল গাড়ি ঘুষ হিসেবে দিয়েছেন এমপি পাপুল। তিনি তার সম্পদের একটি বড় অংশ যুক্তরাষ্ট্রে সরিয়ে নিয়ে এক মার্কিন নাগরিকের সঙ্গে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে ব্যবসা শুরু করেছেন। কুয়েতি গণমাধ্যম তখন ওই সাংসদের নাম উল্লেখ না করলেও বাংলাদেশের গণমাধ্যমে এমপি পাপুলের নাম উঠে আসে, যিনি কুয়েতে জনশক্তি রপ্তানি এবং দেশে আর্থিক খাতের ব্যবসায় যুক্ত। গত ৭ জুন মানবপাচার ও ভিসা বাণিজ্যের অভিযোগে সংসদ সদস্য শহিদ ইসলাম পাপুলকে আটক করেছে কুয়েত সিআইডি।