পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন কৃষিক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও স্পেনের মধ্যে ব্যাপক সহযোগিতার সুযোগ আছে উল্লেখ করে স্পেনকে বাংলাদেশ থেকে কৃষি শ্রমিক নেয়ার অনুরোধ করছেন । সম্প্রতি স্পেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরানচা গনজালেজ লায়ার সঙ্গে ফোনালাপে তিনি এ অনুরোধ করেন।
এ সময় ড. মোমেন উল্লেখ বলেন, বাংলাদেশ পৃথিবীর চতুর্থ ধান ও ৫ম সবজি উৎপাদনকারী দেশ। সে কারণে করোনা পরবর্তী পরিস্থিতিতে কৃষি কাজে স্পেন বাংলাদেশের কৃষি শ্রমিকদের কাজে লাগাতে পারবে। তাছাড়া স্পেনকে এ দেশ থেকে তৈরি পোশাকের পাশাপাশি চিংড়ি, জাহাজ, পাটজাত পণ্য, ঔষধ, পিপিইসহ বিভিন্ন সামগ্রী আমদানি করারও অনুরোধ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বাংলাদেশের রেলওয়ের উন্নয়ন ও সংযোগ বাড়ানোর ক্ষেত্রে স্পেনের বিনিয়োগের সুযোগ আছে বলেও জানান ড. মোমেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ক্রেতারা যাতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে ক্রয়াদেশ বাতিল না করে সে বিষয়েও তিনি স্পেনের সহযোগিতা কামনা করেন।
মন্ত্রী আরানচা গনজালেজ লায়ার করোনা পরবর্তী পরিস্থিতিতে অথনৈতিক ক্ষেত্রে দু’দেশের সহযোগিতা আরো বৃদ্ধি পাবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশে বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ রয়েছে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, এদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করলে স্পেনের কোম্পানিগুলো যেকোন দেশের তুলনায় লাভবান হবে। এতে বাংলাদেশিদেরও কর্মসংস্থান হবে। তিনি বলেন,বাংলাদেশে বিপুল সংখ্যক তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ জনগোষ্ঠীকে এসব কোম্পানি কাজে লাগাতে পারবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, করোনা পরবর্তী অথনৈতিক সমস্যা মোকাবিলায় পারস্পরিক অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতা জরুরি। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্বের অনেক দেশ করোনার চেয়ে ভয়াবহ বিপর্যয়ের মধ্যে পড়তে পারে। এখনই এ বিষয়ে সতর্ক থাকার প্রয়োজন। ১ মিটার সমুদ্রসীমা বৃদ্ধি পেলে বাংলাদেশের এক-চতুর্থাংশ পানির নিচে চলে যেতে পারে। ফলে এদেশে ৩৫ থেকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ তাদের বাসস্থান হারাতে পারে।
ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের সভাপতি হিসেবে বাংলাদেশকে জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে স্পেন যেনো সহায়তা করেন সেই দাবি করেন মন্ত্রী। জবাবে এ বিষয়ে স্পেনের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে আরানচা গনজালেজ লায়া আশ্বস্ত করেন।
রোহিঙ্গা এবং অন্যান্য প্রসঙ্গ এদিকে ফোনালাপে মন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, বংলাদেশ মানবিক কারণে মিয়ানমারের ১১ লক্ষ জোরপূর্বক বাস্তচ্যুত রোহিঙ্গাকে সাময়িকভাবে আশ্রয় দিয়েছে। মিয়ানমার সরকার তাদের জনগোষ্ঠীকে ফিরিয়ে নিতে চাইলেও গত তিন বছরে মিয়ানমার তাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করেনি এবং কোন রোহিঙ্গাকে ফেরত নেয়নি। রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসনের বিষয়ে তিনি স্পেনের সহযোগিতা কামনা করেন। জবাবে স্পেন নিরাপদ প্রত্যাবাসনের ওপর জোর দেয় বলে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
স্পেনে কর্মরত তিন শতাধিক বাংলাদেশি দেশে এসে করোনার কারণে আটকা পড়ে আছেন। তাদের চাটার্ড ফ্লাইটে স্পেনে ফেরার বিষয়ে সে দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সহযোগিতা চান ড. মোমেন। আরানচা গনজালেজ লায়া এ বিষয়ে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন। এসময় ড. মোমেন মহামারি কারোনা পরিস্থিতে স্পেনে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সার্বিক সহযোগিতার জন্য সে দেশের সরকারকে ধন্যবাদ জানান।