নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছে সংক্ষিপ্ততম সময়ে বাজেট পেশ করার । মাত্র পৌনে এক ঘণ্টায় ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য সর্ববৃহৎ বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। করোনা পরিস্থিতির কারণে স্বাস্থ্যবিধি শতভাগ নিশ্চিত করে এই অধিবেশন পরিচালনা করা হয়। তাই বাজেট পেশকালে অধিবেশনে চিরচেনা উৎসবের আমেজ দেখা যায়নি। সর্বত্র ছিল কঠোর সতর্কতা। অধিবেশনের দ্বিতীয় দিনে গতকাল বেলা ৩টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়। এ সময় সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ স্বল্পসংখ্যক সংসদ সদস্য উপস্থিত ছিলেন। বাজেট পেশের পর বৈঠক শেষ হয় ৩টা ৫২ মিনিটে।
বাজেট পেশ ছাড়াও এ সময় অর্থবিল-২০২০ পেশ করেন অর্থমন্ত্রী। আগামী ২৯শে জুন এই বিল পাস হবে। আর বাজেট পাস হবে ৩০শে জুন। এর আগে আগামী রোববার থেকে বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনা শুরু হবে। এদিকে সংক্ষিপ্ত পরিসরে উত্থাপন হলেও লিখিত বাজেট বক্তৃতা বিগত বছরের চেয়ে ছোট ছিল না। এবারের বাজেট বক্তৃতা ছিল ১৩০ পৃষ্ঠার। যেটা চলতি ২০১৯-২০ অর্থ বছরেরই সমান। অর্থমন্ত্রী ৪৭ মিনিটের মতো বাজেট বক্তব্য দিলেও নিজে পাঠ করেছেন সব মিলিয়ে ৫ থেকে ৭ মিনিটের মতো। বাকি পুরোটাই তিনি ডিজিটাল পদ্ধতিতে উপস্থাপন করেন। গত কয়েক অর্থবছরে বাজেট পেশের পাশাপাশি তার চুম্বক অংশ পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনায় দেখানো হলেও এবারই প্রথম অর্থমন্ত্রী পাঠ না করে প্রায় পুরো অংশই ডিজিটাল পদ্ধতিতে উপস্থাপন করেন। প্রতি বছর বাজেট পেশের দিনটিতে সংসদ ভবনজুড়ে থাকে উৎসবের আমেজ। কিন্তু এবার ছিল ভিন্ন চিত্র। সংসদ ভবন এলাকায় প্রবেশে ছিল কড়াকড়ি। আর মূল ভবনে স্বল্পসংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী দায়িত্ব পালন করেছেন। সংসদ ভবনের প্রবেশমুখে সবাইকেই জীবাণুনাশক স্প্রে করা হয়। এমপিসহ সংশ্লিষ্টদের তাপমাত্রা মাপা হয়। অধিবেশন কক্ষে উপস্থিত সংসদ সদস্যরা বিগত দিনের আসন বণ্টন এড়িয়ে করোনা সতর্কতা মেনে আসন গ্রহণ করেন। অধিবেশন কক্ষে এক থেকে দু’টি আসন পর পর তারা বসেছিলেন। অধিকাংশের মুখে মাস্ক, হাতে গ্লাভস ও মাথায় ক্যাপ ছিল। সংসদ পরিচালনায় দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। প্রতি বছরই বাজেট উত্থাপনের দিন বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত থাকলেও এবার তাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। আগেই সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার স্থগিত করা হয়। তবে বরাবরের মতো রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সংসদে উপস্থিত থেকে বাজেট পেশ প্রত্যক্ষ করেন। অধিবেশন শুরুর আগে প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাক্ষর করেন তিনি। দুপুরে জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠকে ওই বাজেট অনুমোদন দেয়া হয়। সংসদ সচিবালয় জানিয়েছে, একই সতর্কতা মেনে আগামী রোববার থেকে বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনা শুরু হবে। প্রতিদিন সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত আলোচনা চলবে। সংসদ সদস্যরা কে, কবে অংশ নিবেন তা ইতিমধ্যে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।