‘ভয়ঙ্কর’ হয়ে উঠেছে ছিনতাইকারীরা। সন্ধ্যা নামলেই ফাঁকা হয়ে পড়েছে নগর লকডাউনে সিলেটে । রাস্তা-ঘাটে বিরাজ করে সুনশান নিরবতা। আর এই সুযোগে সিএনজি অটোরিক্সা নিয়ে ছিনতাইকারীরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। সিলেটে ছিনতাইকারীদের সাম্প্রতিক এই কর্মকান্ডের বিষয়টি অজানাই ছিলো সবার। তবে- একটি খুনের ঘটনার তদন্তের সময় পুলিশের জালেই ধরা পড়েছে ভয়ঙ্কর খুনী ও ছিনতাইকারী মীর্জা আতিক। সে গ্রেপ্তার হওয়ার পর সিলেটে ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি পুলিশেরই নজরে আসে প্রথমে। এরপর নগরীর পার্কভিউ মেডিকেলের সামনে আরেকটি ছিনতাইয়ের ঘটনায় সিলেটে ছিনতাইকারীদের দৌরাত্মের বিষয়টিও জানান দিয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে- দুটি ছিনতাইয়ের ঘটনার পর সিলেট নগরে টহল বাড়ানো হয়েছে। ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে।
গত
২৬ শে বিকেলে শহরতলীর ইনাতাদের বর্তমান বাসিন্দা সুলতান মিয়ার ছেলে আমির
হোসেন ঈদ উপলক্ষে বেড়াতে এসেছিলেন তাদের পুরাতন বাড়ি কাজিরবাজার তোপখানায়।
সেখানে আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে দেখা করে রাত ৯ টার দিকে বাইসাইকেল চালিয়ে
ইনাতাবাদের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন। সুবিদবাজার এলাকায় পৌছা মাত্র তাকে ঘিরে
ধরে পায়ে ছুরিকাঘাত করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় রক্তক্ষরনের কারনে মারা যান
আমির হোসেন।
আলোচিত এ খুনের ঘটনায় পরিবারের স্বজনরাও অন্ধকারে।
পারিবারিক শত্রæদের দিকে আঙ্গুল তুললেও তারা শেষ পর্যন্ত আসামি অজ্ঞাত
রেখেই মামলা দায়ের করেন তার পিতা সুলতান মিয়া। খুনের প্রকৃত কারন সম্পর্কে
তারা পুলিশকে কিছুই জানাতে পারেননি। তবে- হাল ছাড়েনি সিলেট মহানগর পুলিশ।
তারা খুনের ঘটনার তদন্ত শুরু করে। নেওয়া হয় প্রযুক্তির সহযোগিতাও। এতে
পুলিশ খোজ পায় সিলেটের চিহিৃত খুনী ও ছিনতাইকারী মীর্জা আতিকের। মঙ্গলবার
বিকেলে পুলিশ নগরীর শেখঘাট জিতু মিয়ার পয়েন্ট থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।
রাতে জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে আসল তথ্য।
ছিনতাই করতে গিয়ে আমির হোসেনকে
ছুরিকাঘাত করেছে মীর্জা আতিক। পুলিশের কাছে খুনের দায় স্বীকারের পর
পরবর্তীতে সে আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়েছে। মীর্জা আতিকের
সঙ্গে এ ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত সিএনজি অটোরিক্সা চালক আওলাদকে গ্রেপ্তার
করেছে পুলিশ। মীর্জা আতিক সিলেটের ভয়ঙ্কর ছিনতাইকারী। তার বাড়ি দক্ষিণ
সুরমার ভার্থখলা এলাকায়। আর আওলাদের বাড়ি সিলাম টিলাপাড়া এলাকায়। এর আগে
মীর্জা আতিকের হাতে খুন হয়েছিলো শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
বিশ^বিদ্যালয়ের এক ছাত্রকে খুন করে মালামাল ছিনিয়ে নিয়েছিলো। এ ঘটনায়
পুলিশের হাতে আটক হয়েছিলো মীর্জা আতিক। কারাবরনের পর জেল থেকে বেরিয়ে এসে
আবারো ছিনতাই শুরু করে। এবার তার হাতে প্রাণ গেলো আমির হোসেনের। দুটি খুনের
ঘটনায় ভয়ঙ্কর ছিনতাইকারী হিসেবে সিলেটে পরিচিত পেয়েছে মীর্জা আতিক।
এদিকে-
নগরীর তালতলার পার্কভিউ হাসপাতালের সামনে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। সিএনজি
অটোরিক্সা যোগে পালিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ ও জনতা ধাওয়া করে গ্রেপ্তার করে
দুই ছিনতাইকারীকে। গ্রেপ্তারের পর তারা ছিনতাইয়ের ঘটনা স্বীকার করে। এবং
তাদের দলনেতা হিসেবে নগরীর চিহিৃত ছিনতাইকারী ভুট্টোর কথা জানায়। ছিনতাইয়ের
ঘটনার পর ধাওয়া খেয়ে পালিয়ে গেছে ভুট্টো। পুলিশ বৃহস্পতিবার দুপুরে
শহরতলীর লাক্কাতোড়া চা বাগান এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পর সে
ছিনতাইয়ের কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। ভুট্টো সিলেটের পরিচিত
ছিনতাইকারী। নগরের বিভিন্ন এলাকার ছিনতাই নেটওয়ার্কের সঙ্গে সে জড়িত।
অজ্ঞান পার্টির সদস্যও সে। তার পুরো নাম পারভেজ আহমদ ভুট্টো। বাড়ি সিলেটের
ফেঞ্চুগঞ্জের নুরপুর গ্রামে। বর্তমানে খাসদবির এলাকার শহীদ কুটির ভবনের
বাসিন্দা।
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার (গণমাধ্যম)
জেদান আল মুছা জানিয়েছেন- ছিনতাইয়ের ঘটনাকারীরা পুলিশের তদন্তে এবং জালে
আটকা পড়েছে। ঈদের পরপরই তাদের উৎপাত বেড়ে যাওয়ায় পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছে।
লকডাউনে যাতে অপরাধীরা মাথাচাড়া দিয়ে না উঠতে পারে পুলিশ কার্যকর ব্যবস্থা
গ্রহন করেছে। শুধু ছিনতাইকারীরাই নয়, পুলিশের অভিযানে চিহিৃত মাদক
ব্যবসায়ীরা আটকা পড়ছে।