২১ জনের মৃত্যু হয়েছে রংপুর, বগুড়া ও দিনাজপুরে বিষাক্ত চোলাই মদপানে । এরমধ্যে দিনাজপুরের বিরামপুরে স্বামী-স্ত্রী এবং আপন দুই ভাইসহ ১০ জন, রংপুরে ৯ ও বগুড়ায় ২ জন রয়েছে। গত কয়েকদিনে উত্তরের তিন জেলায় মদপানে এসব মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বিরামপুরের হোমিও ওষুধ ব্যবসায়ী আব্দুল মান্নানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বিস্তারিত আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠনো রিপোর্টেÑ
বগুড়া প্রতিনিধি জানান, গুড়ার ধুনটে মদ্যপানে আব্দুল আলিম (৩০) ও আল-আমিন (২৮) নামে দুই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। বুধবার রাতে উপজেলার কালেরপাড়া ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে। মৃতরা হলেনÑ উপজেলার ঈশ্বরঘাট গ্রামের হাফিজুর রহমানের ছেলে অটোরিকশাচালক আব্দুল আলিম (৩০) ও একই গ্রামের আব্দুর রশিদের ছেলে স্থানীয় কান্তনগর বাজারের মাংস ব্যবসায়ী আল-আমিন (২৮)। বুধবার সন্ধ্যার দিকে গ্রামের রাস্তায় বসে নেশা জাতীয় তরল পদার্থ সেবন করেন আব্দুল আলিম ও আল-আমিন।
এরপর তারা অসুস্থ হয়ে পড়েন। এর মধ্যে আল আমিন রাত ৯টার দিকে
নিজ বাড়িতে মারা যায়। এবং অসুস্থ আব্দুল আলিমকে প্রথমে ধুনট উপজেলা
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরে তার অবস্থা অবনতি হলে বগুড়া শহীদ
জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন
অবস্থায় রাত ৩টার দিকে আব্দুল আলিম মারা যান।
বিরামপুর (দিনাজপুর)
প্রতিনিধি জানান, দিনাজপুরের বিরামপুরে চোলাই মদ পান করে স্বামী-স্ত্রী এবং
আপন দুই ভাইসহ ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। গুরুতর আহত অবস্থায় বিভিন্ন
স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ১৫ জন। ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে হোমিও
ওষুধ ব্যবসায়ী আব্দুল মান্নানের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি
করে বিরামপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের কারেছে। আব্দুল মান্নানকে
গ্রেপ্তার করেছে। মৃত ব্যক্তিরা হলো- বিরামপুর পৌর শহরের হঠাৎ পাড়া মহল্লার
শফিকুল ইসলাম ও তাঁর স্ত্রী মঞ্জুয়ারা, শান্তিনগর মহল্লার মো. আনোর ছেলে
আব্দুল মতিন, মাহমুদপুর মহল্লার আব্দুল খালেকের দুই ছেলে আব্দুল আলিম এবং
মো. শাহিন, মো. তোজাম শাহর ছেলে আজিজুল ইসলাম, সুলতানের ছেলে মহসীন আলী,
আজিজার রহমানের ছেলে সোহেল রানা, আফিল উদ্দিনের ছেলে মো. মনো মিয়া এবং
ইসলামপাড়া মহল্লার তাপস রায়ের ছেলে অমৃত।
বিরামপুর উপজেলা নির্বাহী
কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তৌহিদুর রহমান দশ জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে
জানান, গত বুধবার থেকে বৃহস্পতিবার ভোর পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে বিরামপুর
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ এবং
রংপুর মেডিকেল কলেজে তাদের মৃত্যু হয়।
বিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য
কর্মকর্তা ডা. সোলায়মান হোসেন মেহেদী জানান, মারা যাওয়া ব্যক্তিরা তারা
অ্যালকোহল জাতীয় কোন পানীয় পান করে অসুস্থ হওয়ার পর তাদের মৃত্যু হয়েছে।
বিরামপুর স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এখন পর্যন্ত ১৫ জন গুরুতর অসুস্থ্য অবস্থায়
চিকিৎসাধীন রয়েছে। বিরামপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মিথুন
সরকার গুরুতর অসুস্থদের বরাত দিয়ে জানান, যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তাঁরা আটক
মান্নানের হোমিও দোকান ছাড়াও বিভিন্ন অবৈধ হোমিও দোকান থেকে রেক্টিফাইট
স্পিরিট কিনেছিলো। এরপর কয়েকটি গ্রুপে একসাথে টাইগার নামের কোমল পানিয়ে
মিশিয়ে এসব পান করেছিলো। স্থানীয়দের অভিযোগ বিরামপুরে অবৈধভাবে বিভিন্ন
হোমিও দোকানে রেক্টিফাইট স্পিরিট বিক্রি ছাড়াও মাহমুদপুর আদিবাসী পাড়া,
প্রফেসরপাড়া আদিবাসী পাড়া এবং বেলাডাঙ্গা নামক স্থানে মন্ডল মুরমু, বাবুল
শুকরি এবং দায়াল নামের জনৈক দীর্ঘদিন থেকে প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করে
প্রকাশ্যে চোলাই মদের ব্যবসা চালিয়ে আসছে। সেখানে দিনরাত বিরামপুরসহ আশে
পাশের উপজেলার মাদকসেবীরা এসে প্রকাশ্যে চোলাই মদ খান। এসব চোলাই মদ খেয়ে
প্রায়ই মাদকসেবীরা অসুস্থ হয়ে পড়েন।
এদিকে স্টাফ রিপোর্টার, রংপুর থেকে
জানান, রংপুর সদরের শ্যামপুরে বিষাক্ত চোলাই মদ পানে তিনজন ও পীরগঞ্জের
শানেরহাটে ৬ জনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।