৮৭ শতাংশেরই কোনো আয়ের উৎস নেই নভেল করোনাভাইরাসের মহামারির মধ্যে বিভিন্ন দেশ থেকে ফেরা। এদের মধ্যে মাত্র ৩৩ শতাংশ জমানো টাকায় বড়জোর তিনমাস চলতে পারবেন। আবার ৫২ শতাংশ প্রবাসফেরত জরুরি ভিত্তিতে তাদের আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন।
‘বিদেশফেরত অভিবাসী কর্মীদের জীবন ও জীবিকার ওপর কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাব’ শীর্ষক একটি জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির মোবাইল ফোনে সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে চালানো এই জরিপের তথ্য শুক্রবার গণমাধ্যমকে জানানো হয়।
বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর দেশে ফেরা ৫৫৮ জন প্রবাসী কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জরিপটি চালানো হয় বলে ব্রাকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। ঢাকা, টাঙ্গাইল, মুন্সিগঞ্জ, শরীয়তপুর, নরসিংদী, সিলেট, সুনামগঞ্জ, কুমিল্লা, নোয়াখালী, সিরাজগঞ্জ, রংপুর, খুলনা এবং যশোরে জরিপটি পরিচালনা করা হয়।
জরিপে অংশ নেওয়াদের ৮৬ শতাংশই মার্চে দেশে ফিরেছেন। এদের ৪৫ শতাংশ এসেছেন সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, বাহরাইন, ওমান এবং কুয়েত থেকে। ইতালি, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, মালদ্বীপসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ফিরেছেন বাকিরা।
জরিপে অংশ নেওয়া ৪০ শতাংশ প্রবাসফেরত করোনার কারণে তারা দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন বলে জানিয়েছেন। ছুটিতে আসার কথা বলেছেন ৩৫ শতাংশ। পারিবারিক কারণে ফেরত আসতে হয়েছে ১৮ শতাংশের। আর ৭ শতাংশ তাদের ফেরার সঙ্গে করোনার কোনো সম্পর্ক নেই বলে জানিয়েছেন।
দেশে ফিরে এদের ৮৪ শতাংশই ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন বলে জরিপে উঠে এসেছে। তবে ১৪ শতাংশ প্রবাসফেরত ঠিকমতো কোয়ারেন্টাইন মানতে পারেননি বলে জানিয়েছেন। আর দুই শতাংশ বলেছেন, তারা মাত্র এক সপ্তাহ কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন।
দেশে ফেরত আসার পর প্রচণ্ড দুশ্চিন্তা, মানসিক চাপ, উদ্বেগ ও ভীতির মধ্যে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৭৪ শতাংশ। ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির ১২ জন কাউন্সিলর তাদেরকে মনোসামাজিক সেবা দিয়েছেন।
২৯ শতাংশ বলেছেন প্রতিবেশী এবং আত্মীয়-স্বজনরা তাদের এভাবে ফিরে আসাকে স্বাভাবিকভাবে নেয়নি এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতামূলক মনোভাবও প্রদর্শন করেনি। যদিও এক্ষেত্রে পরিবার সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে বলে ৯৭ শতাংশ জানিয়েছেন।
জরিপে অংশ নেয়া ৩৪ শতাংশ বলেছেন, তাদের সঞ্চয় বলতে কিছু নেই। ১৯ শতাংশের যে সঞ্চয় আছে তা দিয়ে আরও এক-দুই মাস চলতে পারবেন। নিজেদের সঞ্চয় দিয়ে তিন মাস বা তার বেশি সময় চলতে পারবেন ৩৩ শতাংশ।
নিত্যপ্রয়োজনীয় খরচ মেটাতে আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিক উৎস থেকে ঋণ গ্রহণ করেছেন ১০ শতাংশ। আর ১৪ শতাংশ প্রবাসী তাদের সঞ্চয়ের ব্যাপারে কোনো তথ্য দিতে রাজি হননি।