পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন বাংলাদেশে মিডিয়া পুরোপুরি স্বাধীনতা ভোগ করছে এবং দেশের মানুষ মুক্তভাবে তাদের মতামত প্রকাশ করতে পারছে বলে দাবি করেছেন । করোনা পরিস্থিতি নিয়ে ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপের ১০ দূতের সঙ্গে বুধবার এক ভিডিও কনফারেন্সে মন্ত্রী মোমেন এ দাবি করেন।
বৃহস্পতিবার
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৈঠকে ইইউ দূতরা
গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেন এবং এ নিয়ে আলোচনা করেন।
মন্ত্রী
মুক্তভাবে মানুষের মত প্রকাশের অধিকার এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত
করা যে গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রদূতদের এমন বক্তব্যের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ
করেন। তবে তিনি এটাও বলেন, বাংলাদেশে ৩৩টি প্রাইভেট টেলিভিশন নেটওয়ার্ক
রয়েছে, শত শত দৈনিক পত্রিকা বের হচ্ছে। পাশাপাশি অনলাইন সার্ভিসগুলো তথ্য
প্রবাহ নয়, রীতিমত তথ্যের বন্যা বয়ে দিচ্ছে। এমনটি দুনিয়ার বহু দেশ তো নয়ই,
এমনকি ইউরোপেও নেই।
মন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার সঙ্গে অবশ্যই দায়িত্ববোধ থাকতে হবে। তা না হলে সমাজে অরাজকতা তৈরি হবে।
উদাহরণ দিয়ে ইউরোপের দূতদের তিনি বলেন, মুক্ত ইচ্ছার নামে প্রকাশ্যে অস্ত্র উচিয়ে শপিং মলে কিংবা স্কুলে ঢুকে কাউকে হত্যা করতে দেয়া যেমন গ্রহণযোগ্য নয়, তেমনি মিথ্যা বা বানোয়াট খবর পরিবেশন করে মানুষকে উত্তেজিত করতেও দেয়া যায় না। মন্ত্রী আরো বলেন, গণতান্ত্রিক সমাজে সুশাসন নিশ্চিতে মুক্ত সংবাদ মাধ্যমকে একটি গুরুত্বপূর্ণ টুলস হিসাবে সরকার বিবেচনা করে সব সময়।
ভার্চুয়াল ওই বৈঠকে ডেনমার্ক, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, নেদারল্যান্ড, নরওয়ে, স্পেন, সুইডেন, সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ডেলিগেশন প্রধান অংশ নেন।
ইইউ’র ফান্ড ব্যবহারে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা চায় ঢাকা
এদিকে ওই বৈঠকে মন্ত্রী ড. মোমেন করোনা পরিস্থিতি ছাড়াও রোহিঙ্গা ইস্যু, বাক স্বাধীনতাসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বিষয়ে রাষ্ট্রদূতের জিজ্ঞাসার জবাব দেন। করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশকে ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকা প্রদানের ঘোষণায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতৃত্বের প্রতি কৃতজ্ঞা প্রকাশ করেন তিনি। একই সঙ্গে ওই ফাণ্ডসহ উন্নয়ন অংশীদারদের ব্যবহৃত সমুদয় এইড বা ত্রাণ কার্যক্রমের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার তাগিদ দেন। বলেন, এ জন্য কোথায় কত টাকা ব্যয় হচ্ছে তা প্রকাশ করা উচিত। এতে দাতা দেশগুলোর কর দাতারাও জানতে পারবে তাদের দেয়া অর্থ কোথায় কীভাবে খরচ করা হচ্ছে।
রোহিঙ্গা প্রসঙ্গ
ওদিকে
সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মন্ত্রী ও দূতদের মধ্যে ভিডিও কনফারেন্সের
আলোচনায় কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের জন্য ফোর-জি নেটওয়ার্ক চালুর
প্রসঙ্গ আসে। এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, এটি বন্ধ করা হয়েছে নিরাপত্তার জন্য।
যাতে করে মাদক চোরাচালান, নারী ও শিশু পাচারসহ অন্যান্য অপকর্ম রোধ করা
যায়। ওই ক্যাম্পে টু-জি নেটওয়ার্ক আছে যার মাধ্যমে রোহিঙ্গারা কথা বলতে
পারে।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে করোনার ব্যাপক বিস্তার রোধে সরকার সচেষ্ট রয়েছে জানিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রী বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের ১১ লাখ নাগরিকদের অস্থায়ী আশ্রয়ের ৩ বছরে একজনকেও ফেরানো সম্ভব না হওয়ায় চরম হতাশা ব্যক্ত করেন। একই সঙ্গে তিনি ঝুলে যাওয়া প্রত্যাবাসনে প্রক্রিয়ায় গতি আনতে ইউরোপের সক্রিয় সহায়তা কামনা করেন।