লকডাউন বা ছুটি চলাকালীন কারাখানা খুলে দেওয়ার পর এখন পর্যন্ত ৪৮ জন তৈরি পোশাককর্মী প্রাণ সংহারক এই ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন। কর্মক্ষেত্রে অবস্থানগত দিক দিয়ে নভেল করোনাভাইরাস তথা কোভিড-১৯ এর ঝুঁকি বেশি তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের।বড় ধরনের সংক্রমণে যাওয়ার আগে এই খাতের সবাইকে দ্রুত করোনা পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
করোনাভাইরাসে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিয়ে উদ্বেগের মধ্যেই গত ২৬ এপ্রিল থেকে সীমিত পরিসরে কারখানা চালু করার সিদ্ধান্ত নেয় তৈরি পোশাক শিল্পের দুই খাতের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ।
বিজিএমইএ থেকে প্রাপ্ত সবশেষ তথ্য অনুযায়ী বিভিন্ন পোশাক কারখানা খুলে দেওয়ার পর ৪৮ জন পোশাককর্মী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্ত এসব শ্রমিকের মাধ্যমে অন্য আরও কেউ সংক্রমিত হয়েছে কি-না সেই আশঙ্কাও রয়েছে।
পোশাক শ্রমিকদের স্বাস্থ্য বিষয়ে প্রিভেন্টিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. এম এইচ চৌধুরী লেনিন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এই কদিনে ৪৮ জন পোশাক শ্রমিক কোভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়ায় এই সেক্টরে ঝুঁকি অনেক বেড়ে যাবে। এটা মারাত্মক হয়ে দেখা দিতে পারে।’
‘এখন যেটা প্রয়োজন একেকটা কারখানার শ্রমিক-কর্মকর্তা যারাই আছেন এ টু জেড সবাইকে করোনা টেস্ট করা দরকার। সেটি র্যাপিড টেস্ট হোক অথবা আর্টিফিসিয়াল যেটাই হোক। টেস্ট হলেই পরিষ্কার হয়ে যাবে কারা সুস্থ আর কারা ভাইরাসবাহী।’
যারা সুস্থ আছেন স্বাস্থ্যবিধি মেনেই তাদের কাজ করার পরামর্শ দিয়ে হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালের পরিচালক লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘টেস্টে ধরা পড়লে ভাইরাসবাহীদের দ্রুত আইসোলেশনে পাঠাতে হবে। যাদের করোনা লক্ষণ আছে তাদের চিকিৎসা দিতে হবে। একজন রোগী যার হঠাৎ করোনা ধরা পড়েছে সে কিন্তু বেশকিছু মানুষের মধ্যে ভাইরাস ছড়িয়ে থাকতে পারে। একারণে রোগীকে যদি রোগ ছড়ানোর আগে শনাক্ত করা যায় তাহলে রোগটি ছড়াবে না।’
এজন্য প্রতি সপ্তাহে অন্তত একদিন হলেও গার্মেন্টসে সকল শ্রমিক-কর্মকর্তাদের করোনা টেস্টের আওতায় আনার পরামর্শ দিচ্ছেন এই চিকিৎসক।
পোশাক কারখানাগুলোয় করোনা আক্রান্তের তথ্য সংগ্রহ ও চিকিৎসা দিতে বিজিএমইএর বেশ কয়েকটি টিম কাজ করছে। তাদের তথ্যে প্রথম করোনা আক্রান্ত শ্রমিক ধরা পড়ে ২৮ এপ্রিল। সবশেষ ১২ মে পর্যন্ত বিভিন্ন পোশাক কারখানায় মোট ৫৫ জন শ্রমিকের মধ্যে করোনা উপসর্গ পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে ৪৮ জন করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন।
এদিকে কারখানায় স্বাস্থ্য সুরক্ষায় মনিটরিং জোরদার করার পাশাপাশি শ্রমিক–কর্মচারীদের স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের জন্য আশুলিয়া স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দুইজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত টেকনিশিয়ান নিয়োগ দিয়েছে বিজিএমইএ। শুক্রবার, শনিবার এবং বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত যেকোনো শ্রমিক-কর্মচারী চাইলে এখানো করোনা বিষয়ক সেবা নিতে পারবেন।