ঢাকা : ‘বাংলা ভাষা ছাড়া বাংলাদেশে পরিচালিত কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে দেয়া হবে না, ইংলিশ মিডিয়ামসহ দেশের যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাংলা পড়ানো হয় না, সেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্যে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন।
রোববার (১৭ জুলাই) রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিদের নিয়ে আয়োজিত জননিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘এর আগেও বিশ্ববিদ্যালয়টির বিরুদ্ধে পাওয়া অভিযোগের সত্যতা খুঁজে পায় আমাদের তদন্তকারী দল। তখন তাদের কিছু নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। সেগুলো তারা আমলে নেয়নি। পরবর্তীতে নির্দেশনা বাস্তবায়নের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাদের কিছুই জানায়নি। গত কয়েকদিন আগেও তাদের ওখানে আমাদের ইউজিসি’র টিম পাঠানো হয়েছিল। আবারো তাদের করণীয় ঠিক করে দেয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘যারা নিয়ম মানতে পারবেন না, তাদের প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হবে। শিক্ষা নিয়ে বাণিজ্যের কোনো সুযোগ দেয়া হবে না। যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের বিপথে পরিচালিত করেছে, তাদের কোনো রকম ছাড় দেয়া হবে না। তাদের এ অপকর্ম কোনোভাবেই বরদাস্ত করা যায় না।’
গুলশান এবং শোলাকিয়ায় সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার ঘটনায় শিক্ষার্থীদের জড়িত থাকার বিষয়টি জাতীয় অর্জনে শিক্ষার্থীদের সকল অবদানকে ম্লান করে দিয়েছে উল্লেখ করে হতাশা ব্যক্ত করেন নাহিদ।
তিনি বলেন, ‘ভাষা আন্দোলন, শিক্ষা আন্দোলন, ছয় দফা, গণঅভ্যূত্থান, সত্তরের নির্বাচন, মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রসমাজের ভূমিকা অবিস্মরণীয়। জঙ্গিবাদে শিক্ষার্থীদের জড়িয়ে পড়া সব ধরনের অর্জনকে ম্লান করে দিয়েছে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘যারা শিক্ষার্থীদের বিপথে পরিচালিত করেছে তাদের ছাড় দেয়া হবে না।’
তিনি আরো বলেন, ‘দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে। প্রতিষ্ঠানগুলো এতো এতো শিক্ষার্থী ভর্তি করায় শিক্ষকরাই চিনে না কে শিক্ষার্থী, আর কে শিক্ষার্থী না।’
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘এতো শিক্ষার্থী ভর্তি করানোর প্রয়োজন নেই। আপনারা যতো জনকে চিনতে পারবেন, ততো জনকে ভর্তি করান। আমরা চাই সঠিক শিক্ষা পেয়ে শিক্ষার্থীরা দেশ-জাতি-সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখবে।’
মানুষ হত্যা করা বড় পাপ উল্লেখ্য করে মন্ত্রী বলেন, ‘মানুষ হত্যা করা কঠিন পাপ। আমাদের আলেম ওলামাদের উচিত ইসলামের সঠিক ব্যাখ্যা সবার কাছে তুলে ধরা। ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলামের কোথাও মানুষ হত্যার কথা উল্লেখ নেই।’
বাবা-মায়েদের উদ্দেশ্যে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আপনার সন্তানদের প্রতি গভীর মনোযোগ দিন। কোথায় কী করে সবকিছু খেয়াল করুন। সন্তানের প্রতি বিশেষ নজরদারি বাড়ান। কোনো কিছুতে সমস্যা মনে হলে আমাদের সাথে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে যোগাযোগ করুন। আমরা আপনাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা নিশ্চিত করবো।’
দেশবাসীর উদ্দেশ্যে নাহিদ বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আইনি ব্যবস্থা নেবে, পাশাপাশি সামাজিক প্রতিরোধও গড়ে তুলতে হবে। সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে দাঁড়াতে হবে। সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে জঙ্গিবাদ প্রতিহত করতে হবে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘২০০৯ সালে আমরা যখন ক্ষমতায় আসি তখন ৫৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল। এর মধ্যে শর্ত মেনে মাত্র ৪/৫টি বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব ক্যম্পাস প্রতিষ্ঠা করেছে। ১৯৯২ সালে করা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন যা ১৯৯৮ সালে সংশোধিত হয়েছিল, পরিপূর্ণ আইনাকারে ২০১০ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন সংসদে পাস করি।’
তিনি বলেন, ‘সেই আইনের পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন এখনো আমরা করতে পারিনি। কিছু বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব ক্যাম্পাসে স্থানান্তরিত হয়েছে। কিছু বিশ্ববিদ্যালয় জমি কিনেছে, স্থাপনা নির্মাণ করছে। আমরা সবাইকে সময় বেঁধে দিয়েছি। যারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিজস্ব জমিতে ক্যাম্পাস করতে না পারবে তাদের প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হবে।’
শিক্ষামন্ত্রী আরো বলেন, ‘আমরা তাদের (বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলে, তারা
আদালত থেকে স্থগিতাদেশ নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকে।’
নির্দিষ্ট সময়ের পরে আইনানুযায়ী সকলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে বাংলাদেশ পুলিশের ব্যবস্থাপনায় আয়োজিত সভায় সভাপতিত্ব করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন। এতে আরো উপস্থিত ছিলেন- র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ, পুলিশের মহাপরিদর্শক একেএম শহীদুল হক, ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া, শিক্ষাসচিব মো. সোহরাব হোসাইন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল মান্নান ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাসেসিয়েশনের সভাপতি শেখ করিব হোসেন প্রমুখ।