করোনাভাইরাসের আরও শক্তিশালী ও ছোঁয়াচে একটি সংস্করণের সন্ধান পাওয়া গেছে যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে বলেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের লস আলামস ন্যাশনাল ল্যাবরেটরিতে কর্মরত একদল মার্কিন গবেষক দাবি করেছেন, এই নতুন ধরণের (স্ট্রেইন) শক্তিশালী ও ছোঁয়াচে করোনাভাইরাস ইতিমধ্যেই বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে গেছে। কভিড-১৯ মহামারি শুরুর দিকে যে ভাইরাস পাওয়া গিয়েছিল, সেগুলোর চেয়ে এই স্ট্রেইন বেশি ছোঁয়াচে। লস অ্যানজেলেস টাইমস এ খবর দিয়েছে।
খবরে বলা হয়, লস আলামস ন্যাশনাল ল্যাবরেটরি মূলত মার্কিন জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের একটি জাতীয় পরীক্ষাগার। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় চালু হওয়া এই পরীক্ষাগারের মূল কাজ ছিল পারমাণবিক অস্ত্রের নকশা তৈরি করা।
বায়োআরজিভ নামে একটি পোর্টালে ওই বিজ্ঞানীরা তাদের ৩৩ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। এটি এখনও পিয়ার-রিভিউড বা অন্য বিজ্ঞানীদের দ্বারা পরীক্ষিত নয়। তবে এই সংকটের সময় পিয়ার-রিভিউ ব্যতীতই অনেক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ওই গবেষণা রিপোর্টে বলা হয়, ইউরোপে ফেব্রুয়ারির দিকে ভাইরাসের এই নতুন ধাঁচ দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের ইস্ট কোস্টের দিকে চলে যায়।
মধ্য-মার্চের পর থেকে এটিই করোনাভাইরাসের সবচেয়ে আধিপত্যশীল সংস্করণ বা স্ট্রেইন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, “এই ভাইরাস শুধু দ্রুততরভাবে ছড়ায়ই না, পাশাপাশি এই ভাইরাস থেকে রোগী প্রথম দফায় সুস্থ হয়ে উঠলে দ্বিতীয় দফায়ও আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি হয়।” তারা বলছেন, এই ভাইরাসের মিউটেশন বা পরিবর্তন ঘটেছে। এর ফলে করোনাভাইরাসের বহিঃ অংশের কাঁটা সদৃশ স্থানে পরিবর্তন ঘটছে। যার দরুন মানুষের শ্বাসনালীর কোষে সহজেই প্রবেশ করতে পারছে এই ভাইরাস।
লেখকরা বলেন, তারা এই রিপোর্ট প্রকাশ করেছেন, কারণ তারা বিশ্বকে তাড়াতাড়ি হুঁশিয়ার করার তাগিদ অনুভব করছিলেন। যাতে করে বিশ্বব্যাপী ভ্যাকসিন উৎপাদনকারীরা আরও প্রাণঘাতী মিউটেটেড এই স্ট্রেইনের বিষয়ে প্রস্তুতি নিতে পারে।
তবে ঠিক কেন এই ভাইরাস তার পূর্বসূরীদের চেয়ে আরও বেশি সংক্রমণশীল, তা জানা যায়নি। বিশ্বজুড়ে ৬ হাজার করোনাভাইরাস সিকোয়েন্সের কম্পিউট্যাশনাল অ্যানালাইসিসের ওপর ভিত্তি করে ওই প্রতিবেদন করা হয়েছে।
বৃটেনের ডিউক বিশ্ববিদ্যালয় ও শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের সঙ্গে একযোগে কাজ করে লস আলামসের বিজ্ঞানীরা করোনাভাইরাসের মোট ১৪টি মিউটেশন খুঁজে পেয়েছেন।
নিজের ফেসবুক পেইজে বিজ্ঞানীদের দলনেতা বেট করবার লিখেছেন, ‘এটি অত্যন্ত উদ্বেগের। আমরা দেখছি যে, ভাইরাসের একটি মিউটেটেড ধরণ খুব ব্যাপকভাবে ছড়াচ্ছে। মার্চ নাগাদ অন্য সংস্করণের তুলনায় এই ভাইরাসের আধিপত্য বেশি দেখা যায়।’
তিনি আরও বলেন, এই ধরণের মিউটেশনের ভাইরাস যখন কোনো জনসংখ্যায় প্রবেশ করে, তারা খুব দ্রুতই আগে থেকে বিদ্যমান রোগের স্থান দখলে নেয়। অর্থাৎ তারা আগের ভাইরাসের চেয়ে বেশি সংক্রমণশীল হয়ে ওঠে।