দেশে অঘোষিত লকডাইন চলছে করোনাভাইরাসের কারণে । এই পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়েছে পরিবহনের সঙ্গে জড়িত সাধারণ শ্রমিকরা। সড়কে যান চলাচল না থাকায় বেকার এসব মানুষগুলো ‘অভুক্ত’ রয়েছে পরিবার নিয়ে। গাড়ির চাকা না ঘুরলে যেসব শ্রমিকের খাবার বন্ধ থাকে, সেসব শ্রমিকের পাশে নেই মালিক ও শ্রমিক নেতারা।

‘খাবার দিন, না হলে রাস্তায় গাড়ি চালাতে দিন’, ‘আমরা কি না খেয়ে মরব’, ‘‘চাঁদা দিলাম টাকা গেল কই?’ এমন স্লোগানে রাস্তা অবরোধ করে আন্দোলন করেছে সাধারণ শ্রমিকরা।

মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনালের সামনে প্রায় দেড় ঘণ্টাব্যাপী বিক্ষিপ্তভাবে তারা অবস্থান করে। এ সময় মহাসড়কে আটকা পড়ে জরুরি কাজে বের হওয়া পরিবহনগুলো। পরে পুলিশে বুঝিয়ে তাদের রাস্তা থেকে তুলে দেয়।

ডিএমপির দারুস সালাম জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মিজানুর রহমান বলেন, ‘শ্রমিকরা ত্রাণের দাবিতে রাস্তা অবরোধ করেছিল। আমরা তাদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে তুলে দিয়েছি। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।’

এদিকে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, ‘মালিকরা আর কতদিন দেখবে শ্রমিকদের? তাদেরও তো ব্যবসা বন্ধ। সরকারের সাহায্য ছাড়া এই মানুষগুলোকে (শ্রমিক) এখন আর কেউ দেখার নেই।’

কোভিড-১৯ এর বিস্তার রোধে সরকার সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ১৬ মে পর্যন্ত সাধারণ ছুটি বাড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিতে গণপরিবহনও আগামী ১৬ মে পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। দীর্ঘদিন পরিবহন বন্ধ থাকায় বিপাকে রয়েছে পরিবহন শ্রমিকরা।

পরিসংখ্যান বলছে, প্রতিমাসে বাস, ট্রাক, মিনিবাস, কাভার্ডভ্যানসহ বিভিন্ন পরিবহন থেকে মাসে কোটি কোটি টাকা চাঁদা তোলা হয় শ্রমিকদের কল্যাণে। বিপদকালীন সময়ে সেখান থেকে সাধারণ শ্রমিকদের সাহায্য করতে এসব চাঁদা তুলে থাকে পরিবহন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনগুলো। কিন্তু এই করোনা পরিস্থিতিতে সেসব টাকা, কিংবা খাদ্য সহায়তা কিছুই পাচ্ছেন না এসব সাধারণ শ্রমিকরা। গাবতলীতে আন্দোলনকারী বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা বলছে, দেশব্যাপী সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর থেকে তাদের কেউ খোঁজ খবর নিচ্ছে না। পরিবার নিয়ে অনাহারে রয়েছেন তারা। অনেকের পরিবার ছুটির আগেই গ্রামে পাঠিয়ে দিয়েছেন। সেখানে তারা এক প্রকার না খেয়ে রয়েছে। আবার যারা ঢাকায় রয়ে গেছেন তাদেরও একই অবস্থা। মালিক সমিতি, পরিবহন নেতা, সংগঠন কেউ তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছে না। প্রথমদিকে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু সাহায্য করা হলেও সেটা এখন বন্ধ। গাড়ি না চালালে তাদের খাবার কিভাবে জুটবে বা এখন কি করবেন সেটা বুঝতে পারছেন না এসব সাধারণ পরিবহন শ্রমিকরা।

তিনদফা দাবি করেছেন এসব সাধারণ শ্রমিকরা। এসব দাবির মধ্যে রয়েছে- ত্রাণ সহায়তা, শ্রমিকদের কল্যাণের নামে বিভিন্ন শ্রমিক মালিক সমিতির ব্যানারে চাঁদা আদায় বন্ধ ও অবিলম্বে গণপরিবহন চালু করতে হবে।

পাটুরিয়া পরিবহনের সঙ্গে জড়িত কুদ্দুস আলী নামে এক কর্মী জানান, করোনার কারণে গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে। কিন্তু তাদের জন্য কেউ এগিয়ে আসেনি। তারা কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। এলাকার জনপ্রতিনিধিরা তাদের ভোটার আইডি কার্ড নিলেও কেউ এখনও কোনো ধরনের খাবার বা ত্রাণ দেননি। তার মতো কর্মহীন হয়ে পড়েছে কয়েক শতাধিক গণপরিবহনের শ্রমিক।

কুদ্দুস আলী আরো জানান, যখন স্বাভাবিক পরিস্থিতি ছিল তখন শ্রমিকদের কল্যাণের জন্য প্রতিদিন বিভিন্ন জায়গা চাঁদা দিয়েছি। কিন্তু নেতাদের এখন পাওয়া যাচ্ছে না। আবার কারও মোবাইল বন্ধ রেখেছে। এখন আমরা কোথায় যাবে, কী করব!

পরিবহন মালিক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘মালিক সমিতির পক্ষ থেকে সরকারের কাছে এসব শ্রমিকদের জন্য ত্রাণ সহায়তা চাওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে প্রণোদনা চাওয়া হয়েছে। কিন্তু দিচ্ছি,দিবো বলা হলেও আমরা কিছুই পাইনি।’

সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মোস্তাকুর রহমান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘একজন সিএনজি চালক থেকে শুরু করে বাস-ট্রাকসহ বিভিন্ন পরিবহনের শ্রমিকদের প্রতিদিন রাস্তায় বের হলে চাঁদা দিতে হয়। কিন্তু করোনাকালে তাদের পাশে নেই সংগঠনগুলো। আর চাঁদার সেসব টাকা গেল কোথায়!’

এরই মধ্যে জেলা প্রশাসক বরাবর শ্রমিকদের তালিকা পাঠানো হয়েছে জানিয়ে এই ফেডারেশন নেতা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী পরিবহন শ্রমিকদের জন্য প্রণোদনা দিতে চেয়েছেন। আমরা তালিকা দিয়েছি। এখন যত দ্রুত প্রণোদনা দেওয়া হবে শ্রমিকদের ততই মঙ্গল।কারণ অনেক শ্রমিককে পরিবার নিয়ে অনাহারে দিন কাটাতে হচ্ছে।’ ভবিষ্যতে শ্রমিকদের কল্যাণের নামে চাঁদা তোলা বন্ধ করারও দাবি জানান তিনি।

Share Now
January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031