প্রত্যাহার করা হয়েছে পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাঈকা সাহাদাতকে ।
৩০ এপ্রিল জারিকৃত এক প্রজ্ঞাপনে তাকে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) শংকর রঞ্জন সাহা স্বাক্ষরিত উক্ত প্রজ্ঞাপনে আগামী ৩ মের মধ্যে বদলিকৃত কর্মস্থলে যোগদানের আদেশ দেয়া হয়েছে৷
তৎস্থলে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমা সিদ্দিকা আকতারকে পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে৷
পেকুয়ার প্রত্যাহারকৃত ইউএনও সাঈকা সাহাদাতের বিরুদ্ধে সম্প্রতি ১৫ টন চাল কেলেংকারীতে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠে।
আলোচিত এ ঘটনায় টৈটং ইউ পি চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দায়ের করা হয়। এরপর তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।
কিন্তু চাল কেলেংকারীর এ ঘটনায় নেপথ্যে ইউএনও’র সংশ্লিষ্টতা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গত কয়েকদিন ধরে সরব হয়ে উঠে সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের দলীয় নেতাকর্মীরা চাল আত্মসাতের নাটেরগুরু হিসেবে ইউএনও কে দায়ী করে গত কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একের পর এক স্ট্যাটাস দিতে থাকেন। পেকুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম, চকরিয়া পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি জাহেদুল ইসলাম লিটুসহ শীর্ষ নেতারা এ ঘটনার জন্য সরাসরি ইউএনও কে দায়ী করেছেন। তাদের দাবী, জাহেদুল ইসলামকে ফাঁসানো হয়েছে। ইউএনও সাঈকা সাহাদাত তাকে ঠান্ডা মাথায় ফাঁসিয়ে দিয়েছেন।
সাধারণ মানুষ বলছেন, এ ঘটনায় শুধু চেয়ারম্যান নয়, ইউএনওও জড়িত। পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাঈকা সাহাদাত ও টৈটং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম চৌধুরীর যোগসাজসের মাধ্যমে চালগুলো কালোবাজারি করেছে।
সচেতন লোকজনের মতে, শুধুমাত্র টৈটং ইউনিয়নে কোনো ১৫ টন চাল
বরাদ্দ দেওয়া হলো? চাল বরাদ্দের পর ইউএনও এসব চাল বণ্টন হয়েছে কিনা তা
তদারকি করেনি কেন?
পেকুয়া উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের মধ্যে একমাত্র টৈটং
ইউনিয়নের জন্য একসঙ্গে ১৫ টন চাল বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়টি রহস্যজনক বলেও মনে
করছেন একাধিক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান। তারা প্রশ্ন তুলেছেন, অন্য কোন
ইউনিয়ন একসঙ্গে এতটন চাল বরাদ্দ পায়নি কেন?
তাদের প্রশ্ন, ত্রাণের চাল
নয়-ছয়ের ঘটনার নাটের গুরু ইউএনও না-কি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান? ঊর্ধতন
কর্মকর্তারা শুধুমাত্র চেয়ারম্যানের ওপর দোষ চাপিয়ে ইউএনওকে বাচিয়ে নিচ্ছেন
কিনা সে প্রশ্নও তুলেছেন অনেকে। চাল কেলেঙ্কারির এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক
মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হলে ৩০ এপ্রিল এক আদেশে ইউএনও সাঈকা সাহাদাতকে
প্রত্যাহার করে নেওয়া হয় ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা প্রশাসনের
একাধিক কর্মকর্তা দাবি করেছেন, গতবছর ঘুর্ণিঝড় বুলবুল আঘাত হানলে পেকুয়া
উপজেলার জন্য জেলা প্রশাসন থেকে ৪০ টন জিআর চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। সেই ৪০ টন
চাল থেকে ২৫ টন চাল ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বিলি করে বাকী ১৫ টন চাল রেখে
দেওয়া হয়। এবার মহামারী করোনা পরিস্থিতিতে নতুন করে পেকুয়ার জন্য জেলা
প্রশাসন থেকে প্রায় ৯০ টন মতো চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। এই সুযোগে ঘূর্ণিঝড়
বুলবুলের সময় রেখে দেওয়া ১৫ টন চাল টৈটং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাহেদুল
ইসলাম চৌধুরীর নামে উপ-বরাদ্দপত্র দিয়ে খাদ্যগুদাম থেকে চাল উত্তোলন করে
কালোবাজারে বিক্রি করে টাকা হাতিয়ে নিয়ে তাকে বলির পাঠা বানানো হয়েছে।
চেয়ারম্যান উপ-বরাদ্দপত্রে স্বাক্ষর করে খাদ্যগুদাম থেকে চাল উত্তোলন করলেও
এই চালের নিয়ন্ত্রণ তার হাতে ছিল না!
ঘটনার অদ্যোপন্ত বের করতে
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আশরাফুল আফসার, গোয়েন্দা
সংস্থার লোকজন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যাপক অনুসন্ধান চালান। সর্বশেষ চাল
আত্মসাত ঘটনার রেশ ধরে ইউএনও সাঈকা সাহদাতকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হলো।