ঢাকা : আগামী দিনে পথে পথে রাতে ‘গাছ’ই হয়ে উঠবে ‘ল্যাম্পপোস্ট। অন্ধকারে পথ চলতে রাস্তায় আর ল্যাম্পপোস্ট লাগবে না। সন্ধ্যা নামলেই
রাস্তার দু’পাশে সাদা, হলুদ, নীলাভ আর সবুজ আলোয় জ্বলে উঠবে গাছ।
আর তা কোনও বড়সড় গাছও নয়। নয় এমন কিছু, যাকে বলে বৃক্ষ। সেই ‘গাছ’ আদতে কয়েকটি বিশেষ প্রজাতির ছত্রাক। যেটা দেখতে জোনাকির মতো। কিছু কিছু সামুদ্রিক প্রাণির মতো এর আকৃতি। এই গাছ অন্ধকারে আলো দিতে পারে। সেই আলো ছড়াতে পারে আশপাশে।
বিজ্ঞান-জার্নাল ‘কারেন্ট বায়োলজি’-র জুন সংখ্যায় গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হওয়ার পর এখন বিশ্বজুড়ে শুরু হয়ে গিয়েছে আলোড়ন। দুই মূল গবেষক সাইবেরিয়ার ‘ইনস্টিটিউট অফ বায়োফিজিক্স’-এর কনস্তানন্তিন পুর্তোভ ও মস্কোয় ‘ইনস্টিটিউট অফ বায়ো-অরগ্যানিক কেমিস্ট্রি’র ইলিয়া ইয়ামপোলস্কি দেখিয়েছেন, শুধু জোনাকি, মাশরুম বা কয়েকটি অণুজীবই নয়, রাতে, ঘুটঘুটে অন্ধকারে আলো জ্বালানোর চমকে দেওয়া ক্ষমতা রয়েছে কয়েকটি বিশেষ প্রজাতির ছত্রাকেরও। যা, আক্ষরিক অর্থেই, একটি বিরলতম ঘটনা।
ব্রাজিলে আমাজন নদীর তীর ধরে গভীর, গহন অরণ্যে ঢুকলে দেখা যায়, সেই জমাট বাঁধা, ঘুটঘুটে অন্ধকারে জোনাকির আলো জ্বলছে, নিভছে। আর সেই গভীর জঙ্গলের মাটিতে বিশাল বিশাল বৃক্ষের গোড়ার দিকে আলোর দ্যুতি বেরিয়ে আসছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মাশরুম থেকে।
ইয়ামপোলস্কি-পুর্তোভের গবেষণা সেখানেই আলোকপাত করেছে। তারা দেখিয়েছেন, লুসিফেরিন নামে একটি বিশেষ ধরনের প্রোটিন রয়েছে ছত্রাক আর মাশরুমে। আলো জ্বালাতে পারে যে সব ছত্রাক, ওই প্রোটিন সেই সব ছত্রাকে তো রয়েছেই, যে ছত্রাকগুলো মোটেই আলো জ্বালাতে পারে না, তাদের মধ্যে ওই প্রোটিন রয়েছে আরও ১০০ গুণ বেশি। এই লুসিফেরিন এমন একটা প্রোটিন, যা বায়ুমণ্ডলের অক্সিজেনের সঙ্গে বিক্রিয়া করে, লুসিফেরেজ নামে একটি উৎসেচকের সাহায্যে। আর তখনই বেরিয়ে আসে নীলাভ-সবুজ আলো।