বাহরাইনে ২১ শে ফেব্রুয়ারি প্রথম করোনা শনাক্ত হয়। এর পর থেকে ধীর গতিতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছিলো। দু’মাস অর্থাৎ ২১ শে এপ্রিল অবধি মোট আক্রান্ত ছিল দুই হাজারের কম, আর মৃত্যু ৭। ইউরোপ আমেরিকার তুলনায় এটা আলোচনায় আসার মতোই নয়, তাছাড়া রিকোভারি রেটও বেশ ভাল। আক্রান্ত আর রিকোভারিতে এক ধরণের ভারসাম্য ছিল, যা স্বস্তিদায়ক। বলা যায় গত সপ্তাহ পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণেই ছিল উপসাগরীয় দেশটির করোনা পরিস্থিতি। কিন্তু ২২ শে এপ্রিল আচমকা এটি বাড়তে থাকে। ২৩ শে এপ্রিল এক দিনেই ১৯০ শনাক্ত আর একজনের মৃত্যুর খবর, করোনা নিয়ে বাহরাইন সরকারের দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে দেয়। উদ্বেগ বাড়ে বাংলাদেশ কমিউনিটিতেও।
মানামায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. নজরুল ইসলাম এবং
বাংলাদেশ কমিউনিটি থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, এক সপ্তাহে দেড় শতাধিক বাংলাদেশী
নতুন করে আক্রান্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে বাহরাইনে মোট আক্রান্ত বাংলাদেশির
সংখ্যা দাঁড়ায় ২১১ তে। তবে আপাতত স্বস্তির খবর হচ্ছে বাহরাইনে করোনার
উন্মত্ত রূপ নেয়ার চেষ্টা বা বেশ শক্ত কামড় বসানোর ওই সময়েও আক্রান্ত কোনো
বাংলাদেশির অবস্থা গুরুতর নয়। আর সঙ্কটের সূচনা থেকে আজ অবধি কোনো
বাংলাদেশির মারা যাওয়ারও খবর মিলেনি।
বাহরাইনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের
হিসাব মতে, দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা (২৯ শে এপ্রিল পর্যন্ত) ২৮৬৯।
মারা গেছেন ৮ জন এবং দু’মাসের বেশি সময়ে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ১৩৭০
জন।
বাহরাইন সরকারের অ্যাকশন
সঙ্কটের সূচনা
থেকেই করোনা ঠেকাতে সতর্ক বাহরাইন সরকার। আর এ কারণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে
রাখতে মানামা অনেকটাই সফল। বাংলাদেশ মিশন ও কমিউনিটি উভয় সূত্র বলছে,
বাহরাইনের স্বতন্ত্র সিস্টেমের কারণে আক্রান্তরা কঠোর আইসোলেশনে রয়েছেন।
হাতে এক ধরণের বিশেষ সতর্কতা সংকেতযুক্ত ব্রেসলেট পড়িয়ে দেয়া হয়। যার কারণে
তারা নির্ধারিত এরিয়ার বাইরে যেতে পারেন না। ফলে তাদের মাধ্যমে সংক্রমণের
আশঙ্কাও কমে যায়। তাছাড়া বিদ্যমান লকডাউনও স্থান এবং সময় বিবেচনায় শিথিল বা
কঠোর হয়।
অবৈধদের বৈধতার আশা:
বৈশ্বিক সঙ্কট
করোনা বা কোভিড-১৯ এর এই কঠিন সময়ে অবৈধ বা অনিয়মিত বিদেশিদের (প্রতি অনেক
আগেই) বেশ সদয় বাহরাইনের বাদশাহ। দেশটিতে প্রায় ৪০ হাজার বাংলাদেশিসহ
লক্ষাধিক অবৈধ বিদেশীর বাস। তাদের প্রতি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছেন বাদশাহ
হামাদ বিন ঈসা আল খালিফা। ৫ ই এপ্রিল থেকে ৩১ শে ডিসেম্বর ২০২০ অবধি সাধারণ
ক্ষমার ওই মেয়াদের মধ্যে অবৈধরা নতুন পাসপোর্ট জোগাড় করাসহ অন্যান্য
ডকুমেন্ট প্রদর্শনপূর্বক ফি বা মাশুল ছাড়াই সরকারী না হয় কোম্পানী ভিসা
লাগিয়ে বৈধ হতে পারবেন। অথবা জরিমানা ছাড়া নিজ নিজ দেশে ফিরতে পারবেন। শুধু
তা-ই নয়, করোনার কারণে বাহরাইন সরকার এরইমধ্যে বিদেশি কর্মীদের (জুন অবধি)
সব ধরনের মাশুল মওকুফ করে দিয়েছে। তবে যেসব বিদেশি কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা
চলছে, তারা সাধারণ ক্ষমার সুবিধা পাবেন না। মানামাস্থ বাংলাদেশ মিশনের
দায়িত্বশীল কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশ কমিউনিটির ধারণা মতে, বাহরাইনে
কর্মসংস্থানের জন্য বৈধ ভিসা নিয়ে গিয়ে নানা কারণে অবৈধ হয়ে পড়া প্রায়
৪০-৪৫ হাজার বাংলাদেশি রয়েছেন। তাদের অন্তত ৯০ ভাগই বৈধতার সূযোগ নিতে
যাচ্ছেন।