লাইন ধরে দাড়িয়ে আছেন হাজারো মানুষ। রায়েরবাগ বাস স্ট্যান্ডে মানুষের ভিড়। সকাল ১০টা থেকে  দাড়িয়ে আছেন তারা। সবাই পরিবহন শ্রমিক। এসেছন ত্রাণ নিতে। কিন্তু বেলা সাড়ে এগারটা পর্যন্ত শুরু হয়নি ত্রাণ দেয়া। মেঘলা, হিমালয় ও শ্রাবন পরিবহনের শ্রমিকদের দেয়া হবে ত্রাণ। আগেই জানিয়ে দেয়া হয়েছিল ত্রাণ দেয়ার কথা।

লাইনে দাড়ানো বকর নামে এক শ্রমিক বলেন, সকালে এসে লাইনে দাড়িয়েছি। এখন প্রায় দুপুর এাণই দেয়া শুরু হয়নি। একঘন্টা ধরে লাইনই ঠিক করা হচ্ছে। আর কতক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে কে জানে। রফিক নামের এক শ্রমিক বলেন, জীবনে কল্পনাও করিনি ত্রাণ নিতে লাইনে দাড়াবো। আমরা পরিবহন শ্রমিক। কাজ করেই খেতে চাই। কিন্তু লকডাউনে গাড়ি চলাচল বন্ধ। আমাদের আয় রোজগারও বন্ধ। ফলে ঘরে খাবার নেই। পরিবার পরিজন নিয়ে বেকায়দায় পড়েছি। বাধ্য হয়ে আজ ত্রাণ নিতে লাইনে দাড়িয়েছি। এক শ্রমিক হ্যান্ড মাইকে ঘোষনা করছেন, আপনারা লাইন সোজা করুন। কিছুক্ষণের মধ্যেই ত্রাণ দেয়া শুরু হবে। এখানে এতো লোক সমাগমের খবর পেয়ে ছুটে এসেছেন কদমতলী থানার এক সাব ইন্সপেক্টর। তিনি এসে কর্তৃপক্ষ একজনকে ফোন লাগিয়ে দেন

ফোনের অপর প্রান্তে থানার ওসি। লোকসমাগমের কারণ ব্যাখ্যা করে এ প্রান্ত থেকে বলা হয়, আপনি আমাদের হেল্প করুন। কজন পুলিশ সদস্য পাঠান। দ্রুত ত্রাণ দিয়ে চলে যাবো। ফোন রেখেই তিনি এক শ্রমিককে ডেকে ধমক দেন। বলেন তোদের কারণে ওসি সাহেব আমাকে ফোন করেছে। তাড়াতাড়ি লাইন ঠিক কর। তার পরিচয় জানতে চাইলে জানান, আমি মেঘলা ও হিমালয় পরিবহনের এমডি। নাম মীর সেলিম। তিনি বলেন, চারশ শ্রমিককে ত্রাণ দেয়া হবে। তাদের লিস্টও করা হয়েছে। কিন্তু লাইনে দাড়িয়েছে কয়েক হাজার লোক। আমরা লিস্ট দেখে ত্রাণ দেবো। ত্রাণের মধ্যে রয়েছে চাল, ডাল, তেল, আলু ইত্যাদি।
রায়েরবাগ থেকে জনতাবাগ চৌরাস্তার দিকে দেখা গেছে পুরো রাস্তা জুড়ে বসেছে বাজার। মানুষে গিজিগিজ করছে।

কেউ বসেছেন সবজি নিয়ে। কেউ মুরগি নিয়ে। কেউ কলা নিয়ে। কেউ খেজুর নিয়ে। কেউবা বসেছেন আপেল আর মাল্টা নিয়ে। কেউ টেবিল বসিয়ে, কেউবা রাস্তায় পলিথিন বিছিয়ে, আবার কেউ ভ্যানে মালামাল নিয়ে বসেছেন। রাস্তাজুড়ে বসা এসব বিক্রেতার বেশিরভাগই নতুন মুখ। হঠাৎ করে এতো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এলো কোথা থেকে? মাস দেড়ক আগেও এ রাস্তায় ভ্যান নিয়ে পণ্য বিক্রি করতেন গুটি কয়েক লোক। এখন এত বিক্রেতা কেন? খবর নিয়ে জানা গেল নেপথ্যের কাহিনী। এদের কেউই হকার কিংবা ফেরি করা ব্যাবসায়ী নন। এদের কেউ ছিল গাড়ির হেলপার, কেউ রাজধানীর বিভিন্ন বিপনি বিতানের কোন দোকানের কর্মচারী, কেউবা সিএনজি চালক। আবার কারো ছিল গ্রীলের দোকান, কেউ টাইলস্ মিস্ত্রী। এমন নানা পেশার মানুষ অভাবের তাড়নার সাময়িক পেশা হিসাবে বেছে নিয়েছে রাস্তায় বসে কাঁচা মাল বিক্রি করা। এদের একজন রুবেল হোসেন। আজ বাঙ্গি আর এক ছড়ি কলা নিয়ে বসেছেন। তিনি বলেন, দেড় মাস ধরে কাম কাজ বন্ধ। ঘরে খাবার নেই।

বাধ্য হয়ে এ ব্যবসায় নেমেছি। ছোট বাঙ্গি বিক্রি করছি ২০ টাকা করে। আর কলা ৯০ টাকা ডর্জন। সকালে ঘুম থেকে উঠে যাত্রাবাড়ী আড়ৎ থেকে এগুলো কিনে এনেছি। প্রতিটি বাঙ্গি কেনা পড়েছে ১৬ টাকা। পাশেই ডিম নিয়ে বসেছেন আলতাফ। তিনি বলেন, এলিফ্যান্ট রোডের একটি দোকানের কর্মচারী ছিলাম। দোকান বন্ধ থাকায় আয় বন্ধ। বেশ কদিন খেয়ে না খেয়ে দিন পার করেছি। সন্তানদের মুখের দিকে থাকাতে পারছিলামনা। জুরাইন থেকে ডিম এনে বিক্রি করছি। লাল ডিম ১৫টি ১০০ টাকা। সাদা ডিম ১৬ টি ১০০ টাকা। আলতাফ বলেন, এভাবে আর কতদিন পার করব জানিনা। ক্ষুধার যন্ত্রণায় করোনার ভয় মন থেকে দূরে ঠেলে দিয়েছি।

Share Now
January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031