আর্টিকেল নাইনটিন করোনা ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে আলোকিত বাংলাদেশ ও গাজী টিভিসহ (জিটিভি) কিছু গণমাধ্যম কর্তৃপক্ষের ‘সংবাদকর্মী ছাঁটাই নীতির’ তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। চলমান মানবিক সঙ্কটের মধ্যে গণমাধ্যমকর্মীদের নিয়ম বহির্ভূতভাবে চাকরিচ্যুতির নোটিশ প্রদানের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক এই মানবাধিকার সংস্থা।
সংস্থাটি বলেছে, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা কোনোভাবেই জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে নয়। তাই গণমাধ্যম কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে; পাঠক, দর্শক তথা দেশের মানুষের কাছে তাদের সকল কর্মকাণ্ড ও নেয়া পদক্ষেপের জবাব দিতে হবে। আর্টিকেল নাইনটিন সংবাদকর্মীদের চাকরিচ্যুতির নোটিশ অবিলম্বে প্রত্যাহারের আহ্বানও জানিয়েছে।
মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও তথ্যের অধিকার সুরক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংস্থাটি সোমবার গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আর্টিকেল নাইনটিনের বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ফারুখ ফয়সল বলেন, ‘’করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে সম্মুখসারির কর্মী হিসেবে সাংবাদিকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাধারণ মানুষকে প্রয়োজনীয় তথ্য সেবা প্রদান ও সচেতন করার কাজটি নিরবচ্ছিন্নভাবে করে যাচ্ছেন। এমন সময়ে তাদের স্বাস্থ্যের সুরক্ষা ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সবচেয়ে জরুরি। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকেও এই দুর্যোগকালে কোনো প্রতিষ্ঠানে কাউকে ছাটাই না করার আহ্বান জানানো হয়েছে। অথচ এমন প্রেক্ষাপটেও কিছু গণমাধ্যম কর্তৃপক্ষ কর্মী ছাটাইয়ের সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, যা অন্যায়, নির্মম ও অত্যন্ত হতাশাজনক। এই পরিস্থিতি গণমাধ্যকর্মীদের স্বাধীন সাংবাদিকতাকে বাধাগ্রস্ত করবে। ‘’
গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা গেছে, গত ২৪ এপ্রিল ২০২০ তারিখে ২১ সাংবাদিক, ও কর্মকর্তা-কর্মচারীকে পৃথক চিঠি দিয়ে চাকরিচ্যুত করে আলোকিত বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ। একই দিন কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই দুইজন নিউজরুম এডিটরসহ আরও কয়েকজন কর্মীকে চাকুরি থেকে অব্যাহতির নোটিশ দেয় জিটিভি কর্তৃপক্ষ। এর আগে করোনাভাইরাসের অজুহাত দেখিয়ে গত ২ এপ্রিল আলোকিত বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ পত্রিকাটির ছাপা সংস্করণ বন্ধ করে দেয়। গণমাধ্যমটির কর্মীরা তখন জানিয়েছিলেন, তাদের সাথে আলোচনা না করে এবং বেতন বকেয়া রেখেই কর্তৃপক্ষ এ সিদ্ধান্ত নেয়। ওই সময় তারা চাকরিচ্যুতির শঙ্কাও প্রকাশ করেন।
ফারুখ ফয়সল বলেন, ‘’একটি মুক্ত ও স্বাধীন গণমাধ্যম ব্যবস্থার সঙ্গে সংবাদকর্মীদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা ও নিরাপত্তার বিষয়টি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কর্মীদের সার্বিক সুরক্ষার প্রাথমিক দায়িত্ব অবশ্যই সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যম কর্তৃপক্ষের। তারা কোনোভাবেই এই দায় এড়িয়ে যেতে পারেন না ‘’
এই সঙ্কটময় পরিস্থিতিতেও বেশ কয়েকটি গণমাধ্যম তাদের কর্মীদের নিয়মিত বেতন প্রদান করছে। করোনার সংক্রমণ এড়িয়ে প্রকাশনা ও সম্প্রচার অব্যাহত রাখতে নিজেদের কার্যালয়ে প্রয়োজনীয় সুরক্ষা উপকরণসহ বিকল্প ব্যবস্থা চালু ও কর্মীদের বাসায় থেকে অফিস করার ব্যবস্থাও নিয়েছে।
এ ধরনের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে ফারুখ ফয়সল বলেন, ‘’যে সকল গণমাধ্যমকর্মী করোনার ঝুঁকি নিয়ে মাঠপর্যায়ে কাজ করছেন তাদের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়াও তাদের জন্য ঝুঁকি-ভাতা প্রচলন, অসুস্থ হলে চিকিৎসার দায়িত্ব গ্রহণ ও এই বিশেষ পরিস্থিতিতে নির্বিঘ্নে কর্মস্থলে যাওয়া-আসার জন্য নিরাপদ পরিবহনের ব্যবস্থা করতে হবে। আর্টিকেল নাইনটিন এক্ষেত্রে গণমাধ্যম কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানায়।