অদ্ভুত এক আধার গ্রাস করেছে পৃথিবীকে। কী দ্রুত গতিতেই না সবকিছু পাল্টে গেল।বন্দি কোটি কোটি মানুষ। এই পরিস্থিতির পরিবর্তন কীভাবে হবে তা কেউ জানেন না। একদিকে জীবন, অন্যদিকে জীবিকা।
বাংলাদেশেও কার্যত একমাস ধরে লকডাউন চলছে। যদিও তার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে। কারণ মানুষকে ঘরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে। প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে বাহির হচ্ছেন মানুষ।
বাজারে, রাস্তাঘাটে দেখা যাচ্ছে ভিড়। কিন্তু এতো গল্পের একটা দিক। লাখ লাখ মানুষ এরই মধ্যে তাদের উপার্জন হারিয়ে ফেলেছেন। রাজপথে অভাবী মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। ক্ষুদার্ত মানুষ অপেক্ষা করছেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এর বাইরে মধ্যবিত্ত শ্রেণিও রয়েছেন বড় ধরনের সংকটে। তাদের অনেকেই গত মাসের বেতন পাননি। কেউ আছেন চাকরি হারানোর শঙ্কায়। হাতে জমানো টাকা যা ছিল তাও শেষ। চক্ষুলজ্জার কারণে কারও কাছে কিছু চাইতেও পারছেন না। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে এই মধ্যবিত্ত টিকতে পারবেন তো। নাকি তারা নিম্নবিত্তের কাতারে চলে যাবেন।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো
মোস্তাফিজুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, বাংলাদেশে ১৬ কোটি মানুষের চার কোটি
পরিবার আছে৷ এর মধ্যে নিম্নবিত্ত ২০ ভাগ আর উচ্চবিত্ত ২০ ভাগ৷ মাঝের যে ৬০
ভাগ এরা নিম্ন, মধ্য ও উচ্চ মধ্যবিত্ত৷ এই সংখ্যা আড়াই কোটি পরিবার হবে৷ এর
মধ্যে সরকারি চাকুরিজীবী, মাল্টিন্যাশনাল ও বড় কোম্পানিতে কাজ করা কিছু
মানুষ বাদে অন্যরা সবাই সংকটে আছেন৷ এদের মধ্যে বড় একটা অংশ চাকরি ঝুঁকিতে
আছেন৷ অনেকেরই বেতন হয়নি, অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে৷ ফলে তারা বেতন তো
পাননি, উল্টো চাকুরি হারানোর ঝুঁকিতে আছেন৷ এই মানুষগুলো সরকারি কোন
কর্মসূচির মধ্যেও নেই৷ তবে সরকার এসএমই ঋণ দিয়ে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প
প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্তদের বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছে৷ তবে এই সংখ্যাও
খুব বেশি না৷ বিপুল জনগোষ্ঠী এখনও সহায়তার বাইরে।
অর্থনীতিবিদ খোন্দকার
ইব্রাহিম খালেদ বলেন, যে দেশে বছরের পর বছর শতকরা ৮ ভাগ প্রবৃদ্ধি হয়, যে
দেশ ধনী বৃদ্ধির হারে শীর্ষ স্থান অধিকার করে, সে দেশে নিম্নমধ্যবিত্ত যারা
তাদের ঘরে খাবার নেই। আসলে অর্থনীতির কোনো জনভিত্তি নেই। টাকা পয়সা শুধু
বেড়েছে ধনীদের। কিন্তু দরিদ্র আরো দরিদ্র হয়েছেন।
ব্র্যাকের জরিপ বলছে, করোনার পর মধ্যবিত্তের আয় কমেছে প্রায় ৭৫ শতাংশ।
একদিকে
উন্নয়ন, প্রবৃদ্ধি, বড় বড় প্রকল্প। অন্যদিকে, বৈষম্যের লাফিয়ে লাফিয়ে
বাড়া। করোনা এক কঠিন বাস্তবই সবার সামনে নিয়ে আসলো। মধ্যবিত্ত টিকবেনতো সে
প্রশ্ন বড় হচ্ছে।