বায়ু দূষণের কণায় বিজ্ঞানীরা করোনা ভাইরাস শনাক্ত করেছেন । এখন তারা তদন্ত করে দেখছেন বাতাসের মাধ্যমে এই জীবাণু কতোটা দীর্ঘ দূরত্বে বয়ে নিতে পারে এবং এর মাধ্যমে কোভিড–১৯ এ সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা আরো বাড়িয়ে তুলতে পারে কিনা। ২৪ এপ্রিল দি গার্ডিয়ান এ খবর দিয়েছে।
অবশ্য গবেষণার কাজটি এখনও প্রাথমিক এবং এটি এখনও জানা যায়নি যে ভাইরাস দূষণকারী কণাগুলি এতটা পর্যাপ্ত পরিমাণে টিকে থাকতে পারে, যা কিনা করোনা রোগের কারণ হিসাবে কার্যকর হতে পারে।
ইতালীয় বিজ্ঞানীরা বার্গামো প্রদেশের একটি নগর ও একটি শিল্প সাইটে বায়ু দূষণের নমুনা সংগ্রহের জন্য স্ট্যান্ডার্ড কৌশল ব্যবহার করেছিলেন এবং একাধিক নমুনায় কোভিড -১৯ এর সাথে অত্যন্ত নির্দিষ্ট একটি জিন চিহ্নিত করেছিলেন। একটি স্বতন্ত্র পরীক্ষাগারে ব্লাইন্ড টেস্টিংয়ের মাধ্যমে সনাক্তকরণটি নিশ্চিত করা হয়েছিল।
এই কাজের নেতৃত্বদানকারী ইতালির বোলোগনা বিশ্ববিদ্যালয়ের লিওনার্দো শেঠি বলেছিলেন যে, বায়ু দূষণের মাধ্যমে ভাইরাসটি বায়ুতে আরও ব্যাপকভাবে বহন করতে পারে কিনা তা তদন্ত করা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। “আমি একজন বিজ্ঞানী এবং যখন আমি জানি না, তখন আমি চিন্তিত হয়ে পড়েছিলাম,” তিনি বলেন। “যদি আমরা জানি, আমরা একটি সমাধান খুঁজে পেতে পারি। তবে আমরা যদি না জানি তবে আমরা কেবল পরিণতিগুলিই ভোগ করতে পারি ”।
অন্য দুটি গবেষণা দল ইঙ্গিত দিয়েছিল যে বায়ু দূষণের কণাগুলি করোনা ভাইরাসকে বাতাসে আরও বিস্তারে সহায়তা করতে পারে।
মি. সেট্টির টিমের একটি পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ থেকে জানা গেছে যে, লকডাউন আরোপের আগে উত্তর ইতালির অংশগুলিতে সংক্রমণের উচ্চ হারের সঙ্গে বাতাসের উচ্চতর স্তরের কণা দূষণের সম্পর্ক পাওয়া যায়। এটি অন্য প্রাথমিক বিশ্লেষণ দ্বারাও সমর্থিত একটি ধারণা। অঞ্চলটি ইউরোপের সবথেকে দূষিতদের অন্যতম ।
সেট্টির টিমের উল্লিখিত কোনও গবেষণাই এখন পর্যন্ত পিয়ার-রিভিউ করা হয়নি এবং তাই স্বাধীন বিজ্ঞানীদের দ্বারা তা অনুমোদিত হয়নি। তবে বিশেষজ্ঞরা তাদের প্রস্তাবটিকে বিশ্বাসযোগ্য এবং তাই তার অধিকতর তদন্তে সম্মত হয়েছেন। পূর্ববর্তী গবেষণায় দেখা গেছে যে, বায়ু দূষণের কণাগুলো জীবাণু বৃদ্ধি করে এবং সম্ভবত দূষণের কারণে ভাইরাসগুলো বার্ড ফ্লু, হাম এবং পা-ও মুখের রোগকে অনেক দূরত্বে নিয়ে যায়।
বায়ু দূষণের কণাগুলির সম্ভাব্য ভূমিকাটি করোনভাইরাসকে কীভাবে অন্যের দেহে সংক্রমিত হতে পারে, ব্যাপকভিত্তিতে সেই প্রশ্নের সাথে যুক্ত। সংক্রমিত মানুষের কাশি এবং হাঁচি থেকে ভাইরাসজনিত বড় ফোঁটাগুলি (ড্রপলেট) এক বা দুই মিটারের মধ্যে মাটিতে পড়ে যায়। তবে অনেক ছোট কোনো ফোঁটা বা কণা, যা ৫ মাইক্রনের থেকেও কম ব্যাসযুক্ত, তা বাতাসে কয়েক মিনিট থেকে কয়েক ঘন্টা এবং বাতাসে তা দীর্ঘ সময়ে ভেসে থাকতে পারে এবং তা আরও দূরে ভ্রমণ করতে পারে।
তবে এখন পর্যন্ত বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত নন যে এই ক্ষুদ্র কণাগুলো বা বায়ুবাহিত ফোঁটাগুলো দূরে উড়ে গিয়ে কারো দেহে করোনভাইরাসের সংক্রমণ ঘটাতে পারে কিনা। যদিও তারা জানেন যে ২০০৩ সালে সার্স করোনা ভাইরাসটি বায়ুতে ছড়িয়ে পড়েছিল এবং নতুন ভাইরাসটি ছোট একটি কণার মধ্যেও ঘন্টার পর ঘন্টা বাতাসে কার্যকর থাকতে পারে।
তবে গবেষকরা বলছেন, সম্ভাব্য বায়ুবাহিত সংক্রমণের গুরুত্ব আছে। কারণ দূষণের কণাগুলি বাতাসে উড়তে ও বিস্তার ঘটানোর জন্য সম্ভাবনাময়। সেজন্য সাক্ষ্য–প্রমাণ ছাড়া এটি অবশ্যই উড়িয়ে দেওয়া উচিত নয়।
যুক্তরাজ্যের ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের
অধ্যাপক জোনাথন রিড করোনাভাইরাস বায়ুবাহিত সংক্রমণ নিয়ে গবেষণা করছেন।
“এটি অবাক করার মতো কিছু নয় যে বাতাসে ভেসে বেড়ানোর সময়, করোনার ছোট ছোট
কণাগুলো নগর–দূষণের কণার সাথে মিলিত হতে পারে এবং চারপাশে তা বহন করতে
পারে।”
তিনি বলেন, চীনের ইনডোরে সংগ্রহ করা উড়ন্ত ক্ষুদ্র নমুনায় ভাইরাসটি সনাক্ত করা হয়েছিল।
সেট্টি
বলেছিলেন যে, ০.১ থেকে ১ মাইক্রনের মধ্যে ছোট ছোট কণাগুলো তার নিজের চেয়ে
১০ মাইক্রন পর্যন্ত দূষণের কণার সাথে মিলিত হয়ে আরও ভ্রমণ করতে পারে। এর
কারণ, সংযুক্ত কণাটি তার (ভাইরাস কণা) নিজের থেকে বৃহত্তর এবং ঘনত্ব কম।
সেকারণে তা দীর্ঘসময় বায়ুতে টিকতে পারে।
“দূষণের কণাগুলো একটি
মাইক্রো-এয়ারপ্লেনের মতো এবং তার যাত্রীরা হ’ল ড্রপলেট বা ভাইরাসের কণা,”
মন্তব্য করেন সেটি। অবশ্য রিড আরও সতর্ক: “আমি মনে করি কণাগুলির [সংযুক্ত]
আকারে খুব ছোট পরিবর্তন থাকলে তা খুব বেশি ভূমিকা নিতে পারে না।”
ইম্পেরিয়াল
কলেজ, লন্ডনের প্রফেসর ফ্র্যাঙ্ক কেলি বলেছেন, দূষণ কণার মাধ্যমে
ভাইরাসটিকে আরও দূরে বহন করার ধারণাটি আকর্ষণীয়। “এটি সম্ভব, তবে এই কাজটি
দুটি বা তিনটি দলের দ্বারা পুনরায় করার বিষয়টি দেখতে চাই” “
আরেক
বিশেষজ্ঞ, আয়ারল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি কলেজ কর্কের অধ্যাপক জন সোডাউ।
তিনি বলেছেন: “কাজটি বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে হচ্ছে। তবে এই মুহূর্তে এটিই
বটোম লাইন । কারণ কণাগুলোর মিথস্ক্রিয়া সর্বদা জৈবিকভাবে কার্যকর নয় এবং
বায়ুমণ্ডলে কোনও প্রভাব ফেলতে পারে না। ” তিনি বলেন, বৈজ্ঞানিক গবেষণার
সাধারণ কোর্সে এই জাতীয় আবিষ্কারের সত্যতা নিশ্চিত করতে দুই বা তিন বছর
সময় লাগতে পারে।
অন্যান্য গবেষণা দেখাচ্ছে যে, মহামারীর আগের উচ্চ
বায়ুদূষণের সঙ্গে কোভিড -১৯ এ বর্ধিত মৃত্যুর মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক
নির্দেশ করেছে। দীর্ঘমেয়াদে নোংরা বাতাসের প্রভাবে ফুসফুসের ক্ষতি হতে
পারে। যা সেইসব ব্যক্তিদের কোভিড -১৯- এ সংক্রমণের ঝুকি বাড়িয়ে দিতে পারে।