চট্টগ্রাম : গতকাল শনিবার সকাল থেকে বৃষ্টির পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ৭ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদপ্তর।বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে গতকাল নগরীর অনেক এলাকা পানিতে ডুবে গেছে। অনেক এলাকায় নালা–নর্দমা ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি সহজে নামতে পারেনি। ফলে পানি আর ময়লা আবর্জনায় একাকার ছিল ঐসব এলাকা। গতকাল আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকা, এনায়েত বাজার–গোয়ালপাড়া, বাকলিয়া ইছাকের পুল, মিয়াখান নগর, জিইসি, মুরাদপুর, ওয়াসার মোড়, চান্দগাঁও তালতলা, চকবাজার খালপাড়, বাকলিয়া ডিসি রোড ও বন্দরটিলার প্রায় এলাকা পানিতে ডুবেছে। সন্ধ্যায় এক ঘণ্টার বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় কয়েকটি সড়ক। বৃষ্টির পানি জমে থাকায় সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে দুর্ভোগে পড়েন নগরবাসী। বৃষ্টিতে নগরের প্রবর্তক মোড়, দুই নম্বর গেট, মুরাদপুর, চকবাজারের কাঁচাবাজার, কাপাসগোলা, এমএম আলী রোড, আগ্রাবাদ ও বিমানবন্দর সড়কের সিমেন্ট ক্রসিং এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। নালা ও খালের পানি উপচে বিভিন্ন সড়ক ডুবে যায়। এতে যান চলাচল ব্যাহত হয়। নগরের প্রবর্তক মোড় এলাকায় সন্ধ্যার বৃষ্টিতে কোমরসমান পানি জমে যায়। ফলে যান চলাচল বন্ধ থাকে। রাত সাড়ে আটটায় যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। মুরাদপুর ও দুই নম্বর গেটেও কোমরসমান পানি জমে যায়।
প্রবর্তক মোড় থেকে মোঃ আলমগীর ফোন করে জানান, কোমরসমান পানি জমে যাওয়ায় গাড়ি নিয়ে রাস্তার ওপর এক ঘণ্টা অপেক্ষায় ছিলেন তিনি। রাত সাড়ে আটটায় যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। জিইসি মোড়েও একই অবস্থা বলে জানান আজিম নামের এক কলেজ ছাত্র।
নগরের মুরাদপুর এলাকার বাসিন্দা ও প্রবাসী তসলিম খাঁ রাত সাড়ে আটটার দিকে জানান, ‘মুরাদপুর থেকে কাজীর দেউড়ির উদ্দেশে রওয়ানা হয়েছি সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায়। কিন্তু এখনো দুই নম্বর গেটে গাড়ির জ্যামে আটকে আছি। এখানে কোমরসমান পানি জমে আছে। বাসায় কখন ফিরতে পারব তা এখনো জানি না।’
আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকাও প্রায় হাঁটু সমান পানিতে তলিয়ে গেছে। এনায়েত বাজার–গোয়ালপাড়ায় হঠাৎ করে হাঁটু সমান পানি উঠেছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দা ও নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য পংকজ রায় জানান এখানে কোনদিন পানি উঠেনি। কিন্তু নালার মুখ বন্ধ থাকায় এলাকায় গত রাতে হাঁটু সমান পানি হয়েছে।
এদিকে গতকাল এদিকে বহদ্দারহাট থেকে ফরিদার পাড়া যাওয়ার পথে তালতলা এলাকার নালাটি দীর্ঘদিন ধরে পরিষ্কার না করার অভিযোগ করেছে এলাকাবাসী। যার কারণে অল্প বৃষ্টিতেই রাস্তায় হাঁটু সমান পানি উঠে যায়। গতকালও হাঁটুর চেয়ে বেশি পানি উঠেছে। এরকম চলছে বছরের পর বছর। এদিকে নগরীর অলিগলিগুলোর ভেতরে নালাগুলো পরিষ্কার করা হচ্ছেনা বলেই পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানান এলাকাবাসী।
এদিকে মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে চট্টগ্রামে আগামী ২৪ ঘণ্টায় ভারী বৃষ্টির সতর্ক বার্তা দিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ। তাছাড়া আগামী মঙ্গলবার আষাঢ়ী পূর্ণিমা। পূর্ণিমার প্রভাবে এখন থেকে জোয়ারের বেগ বেশি, তাই নিচু এলাকায় পানি উঠছে বলে জানিয়েছে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস।
গতকাল পতেঙ্গা আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়, উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা তৈরি হওয়ায় বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্রবন্দরগুলোর ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এজন্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের কন্ট্রোর রুম থেকে বলা হয়, গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা বা বজ্রমেঘ প্রতিনিয়ত ছোটাছুটি করছে। এই জন্য উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
মৌসুমী বায়ু দুর্বল হয়ে যাওয়ায় গত ৭ জুলাই থেকে সারা দেশে বৃষ্টির তীব্রতা কমে যায়। বাতাসে জলীয় বাষ্প বেড়ে যায়। ফলে ভ্যাপসা গরম দেখা দেয়।
– See more at: http://www.dainikazadi.org/details2.php?news_id=1393&table=july2016&date=2016-07-17&page_id=1&view=0&instant_status=0#sthash.PYndepUM.dpuf