কৃষকরা নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় সয়াবিনের চাষ করেছে । কিন্তু সয়াবিন ক্ষেতে বিচা পোকার (পাতা খেকো পোকা) আক্রমণ দিশেহারা হয়ে পড়েছে কৃষকরা। এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মাঠের সবুজ ফসল সয়াবিন গাছের পাতা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে নষ্ট হচ্ছে কৃষকদের স্বপ্ন। এ দুঃসময়ে কৃষি বিভাগে থেকে কোন পরামর্শ ও সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন কৃষকরা।
সুবর্ণচর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে ৬ হাজার ৫’শ হেক্টর জমিতে সয়াবিনের চাষ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার সরেজমিন সুবর্ণচর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, চাষিরা সয়াবিন গাছে পাতা রোগ নিয়ে হতাশায় পড়েছেন।
চর হাসান গ্রামের কৃষক সায়েদুল হক, আব্দুল করিম, চর মজিব গ্রামের মোস্তফা, চর পানাউল্যা গ্রামের আবুল কালাম অভিযোগ করে বলেন, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের লোকজন মাঠে এসে কৃষকদের এ পোকা নিরোধ সম্পর্কে কোন ধারনা দেওয়া কিংবা কি ধরনের কীটনাশক প্রয়োগ করলে পোকার আক্রমণ থেকে রেহাই পাওয়া যাবে সে ধরনের কোন পরামর্শ দিচ্ছে না। এমনকি তাদের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলতে চাইলেও তারা কৃষকদের সঙ্গে কথা বলতে অপরাগতা প্রকাশ করেন।
চর জব্বার ইউনিয়নের চর হাসান গ্রামের কৃষক আবদুল করিম বলেন, চলতি বছরে তিনি ৫ হেক্টর জমিতে সয়াবিনের চাষ করেছেন। ফলনও ভালো হবে বলে তিনি আশা করছেন। কিন্তু গত ১৫-২০ দিন ধরে সয়াবিন গাছের সবুজ পাতার নিচে এক ধরনের পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। ওই পোকা পাতার রস চুষে খেয়ে ফেলছে। এতে করে গাছের পাতা ও ডগা শুকিয়ে বাদামি বর্ণ ধারণ করেছে। কৃষি বিভাগের ভাষায় এ পোকার নাম বিচা পোকা বা পাতা খেকো পোকা। ৭-১০ দিনের মধ্যে পোকা গাছের পাতা ও ডালপালা এবং ডগার রস চুষে ফেলছে। একে গাছটি অনেকটা হলুদ হয়ে মরে যায়। এতে করে সয়াবিনের ফুল ফুটছে না এবং সয়াবিন ও ধরছে না।
কৃষক মতলব উদ্দিন ও পন্ডিত বলেন, পাতায় রোগের আক্রমণে চলতি মৌসুমে সয়াবিন উৎপাদন কমে যাবে। এতে করে তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
হতদরিদ্র কৃষক ফারুক বলেন, তিনি ৪ একর জমি বর্গা নিয়ে সয়াবিনের চাষ করেছেন। সয়াবিন ঘরে তুলে তিনি জৈষ্ঠ মাসে মেয়ের বিয়ের কাজে হাত দেবেন। কিন্তু পুরো খেতে বিচা পোকার আক্রমণে ক্ষেতের সয়াবিন গাছ দিনদিন মরে যাচ্ছে। ফলে কাঙ্ক্ষিত ফসল ঘরে তোলার সম্ভাবনা খুবই কম। একদিকে জমি চাষের খরচ অন্য দিকে জমি বাবদ মালিককে অর্ধেকটা ভাগ দিতে হবে। বাড়ির গরু, ছাগল বিক্রি করে ও মহাজনদের কাছ থেকে সুদের উপর টাকা নিয়ে সয়াবিনের চাষ করেছি। এখন সয়াবিনের গাছে পোকা ধরায় গাছগুলো দিন দিন পুড়ে যাচ্ছে সেই সাথে আমার ও পরিবারের সব আশা আর স্বপ্ন ও পুড়ে যাচ্ছে।
সুবর্ণচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম বলেন, সম্প্রতি সয়াবিন ক্ষেতে বিচা পোকা আক্রমণ দেখা দিয়েছে। এটাকে পাতা খেকো পোকা বলা হয়। গরম-ঠান্ডা আবহাওয়ার কারণে এ রোগের সংক্রমণ দেখা দিতে পারে। কৃষকদের অসহযোগিতার অভিযোগের আংশিক সত্যতা স্বীকার করে এর জন্য লোকবল সংকটকে দায়ী করেন তিনি। বিচা পোকা বা পাতা খেকো পোকা সংক্রমিত সয়াবিন খেতে নিয়ম অনুযায়ী ২শ মি.লি. পরিমাণ কীটনাশক ১০ লিটার পানির সঙ্গে মিশিয়ে সয়াবিন গাছে স্প্রে করতে হবে। এমনভাবে স্প্রে করতে হবে যেন পুরো গাছের পাতা ভিজে যায়। কিন্তু কীটনাশকের দাম বেশি হওয়ার কারণে কৃষকরা ২শ মি.লি. এর বোতল ৩০-৪০ লিটার পানির সাথে মিশিয়ে গাছের মধ্যে স্প্রে করার কারণে পোকাগুলো মরছে না। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ২০-২৫ দিনের মধ্যে সয়াবিন ঘরে তোলা যাবে। নতুন করে আক্রান্ত গাছগুলোতে তেমন ক্ষতি হবে না বলে তিনি দাবি করেন। চলতি বছর সয়াবিনের ফলন ভালো হবে বলেও দাবি করেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, সুবর্ণচর উপজেলা কৃষি অধিদফতরে ২৪টি উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার পদ থাকলেও কর্মরত আছে ১২ জন। লোকবল সংকটের কারণে সবগুলো ইউনিয়নে নিয়মিত তদারকি করা সম্ভব হচ্ছে না। এরপরেও তিনি উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাঠে পাঠিয়ে কৃষকদেরকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করছেন।