দোয়ারাবাজারে ধর্ষনের অভিযোগে ছেলের বাড়িতে কিশোরীর অনশনের ঘটনায় সালিশীর নামে গ্রাম্য মাতব্বররা তুলকালাম কান্ড ঘটিয়েছেন সুনামগঞ্জের । বুধবার সকালে অভিযুক্ত ছেলের বাড়িতে সামাজিক দূরত্ব উপেক্ষা করে ব্যাপক লোক সমাগম ঘটিয়ে সালিশ বিচারের আয়োজন করা হয়। প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী সালিশে এই বিষয়ে কোনো সুরাহা দিতে পারেননি গ্রাম্য মাতব্বররা। এ নিয়ে এলাকাজুড়ে এখন তোলপাড় শুরু হয়েছে।
উপজেলার বাংলাবাজার ইউনিয়নের জুমগাঁও (ইসলামপুর) গ্রামের প্রাবাসী আবদুল মান্নানের ছেলে আবু তালেব (১৮) সম্প্রতি একই গ্রামের বারো বছরের এক কিশোরীকে তার বসত ঘরের বাথরুমে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করার অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এক নারী গ্রামবাসীর নিকট সাক্ষী দিতে চাইলে ছেলের পক্ষের লোকেরা ওই দিন সন্ধ্যায় মারধর করতে উদ্যত হয় এবং সাক্ষী না দিতে তাকে হমকি দেয়ার অভিযোগ ওঠে। পরে এ ঘটনা জানাজানি হয়ে গেলে মঙ্গলবার বিকালে কিশোরী ছেলের বাড়িতে অবস্থান নেয়।
এ ঘটনায় বুধবার সকালে বিষয়টি আপোষ নিষ্পত্তি করে দেয়ার লক্ষ্যে সালিশে বসেন গ্রাম্য মাতব্বররা। ওই দিন সকালে বিচার সালিশের নামে শত শত লোক জড়ো হলে উপেক্ষিত হয় স্বাস্থ্যবিধি ও সরকারি নির্দেশনা। তবে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, মেয়ে ও ছেলের বয়স কম হওয়ায় বাল্যবিয়ের অভিযোগ এড়াতে অতিগোপনে মাতব্বরদের যোগসাজসে বিয়ের প্রস্তুতি চলছে।
বিচারে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় ইউপি সদস্য খোরশেদ আলম, সাবেক ইউপি সদস্য হাছিব উদ্দিন, নজরুল ইসলাম ভুঁইয়া, গ্রাম্য মাতব্বর আলা উদ্দিন, মসুর আলী, আব্দুল হাই, মাওলানা শহিদুল্ল্যাহ, হাসন আলী, আজির মিয়া, নুরুল হক, জহিরুল ইসলাম জুলহাস প্রমুখ।
স্থানীয় ইউপি সদস্য খোরশেদ আলম বলেন, মেয়ে ধর্ষণের অভিযোগ এনে ছেলের বাড়িতে আশ্রয় নিলে এলাকাজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। ছেলের পক্ষ মেয়েকে মেনে নিতে রাজি না হওয়ায় বিষয়টি আরও জটিল হয়। আমরা সালিশ বিচারের মাধ্যমে সমাধান দেয়ার চেষ্টা করেছি। বিষয়টি আপোষ নিষ্পত্তির মাধ্যমে সমাধানের জন্য বসলে গ্রামের লোকজন এমনিতেই জড়ো হয়ে যায়।
বাংলাবাজার ইউপি চেয়ারম্যান জসিম মাস্টার এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ছেলে মেয়ের অভিভাবককে ডেকে এনে বাল্য বিয়ের কোনো প্রস্তুতি যাতে না নেয়া হয় এ ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছি। তবে আজকে সালিশ বিচারের নামে জনসমাগমের বিষয়টি কেউ আমাকে জানায়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোনিয়া সুলতানা বলেন, সালিশ বিচারের নামে এত লোক সমাগম হওয়ার উচিত নয়। আমি বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলে খতিয়ে দেখবো।