solkaia-jongi-abir-pic-2-16-07-16_120173

ঢাকা : গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত নিবরাস পরিচয় গোপন করে সাঈদ নামে এই মেসে ছিলেন। মাস খানেক পর নিবরাসের খালাতো ভাই পরিচয়ে সেখানে ওঠেন আবির। ঝিনাইদহ সোনালীপাড়ার সাবেক সেনাসদস্য কওছার আলীর ভাড়া দেয়া মেসে নিবরাসের সঙ্গে থাকতেন  কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় নিহত আবির রহমানও।

আবিরের ছবি দেখে গতকাল শুক্রবার এ তথ্য নিশ্চিত করেন সোনালীপাড়ার বাসিন্দারা। তবে নিবরাসের সঙ্গে ওই বাড়ির মেসে আরও যে ছয়জন ছিল, তাদের নাম-পরিচয় কেউই বলতে পারেনি।

ঝিনাইদহ শহরের সোনালীপাড়ার ওই মেসের পাশের মসজিদের মাঠে স্থানীয় তরুণদের সঙ্গে ফুটবল খেলতেন সাঈদ নামধারী নিবরাস। ওই মাঠে খেলতেন এমন কয়েকজন স্থানীয় তরুণকে আবিরের ছবি দেখালে তারা তাকে সাঈদের খালাতো ভাই হিসেবে শনাক্ত করেন।

নিবরাসদের মেসে রান্নার কাজ করতেন যে নারী, তিনিও আবিরের ছবি দেখে তাকে শনাক্ত করেন। এর আগের দিন বৃহস্পতিবার বাড়ির মালিকের স্ত্রী, গৃহকর্মী ও ফুটবল খেলার সঙ্গীরা ছবি দেখে নিবরাসকে শনাক্ত করেন।

শুক্রবার আবার সেখানে আবিরের ছবি দেখানো হলে স্থানীয় দুজন তরুণ (নিরাপত্তার স্বার্থে নাম প্রকাশ করা হলো না) বলেন, এই ছবি সাঈদ ওরফে নিবরাসের খালাতো ভাইয়ের। তিনি সবার সঙ্গে মিশতেন না, ফুটবলও খেলতেন না। মাঠের পাশে বসে সময় কাটাতেন। মাঝেমধ্যে মাঠের পাশে ছোট জায়গায় বাচ্চাদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলতেন।

ওই দুই তরুণ বলেন, ‘ওই ভাইয়ের নাম কী জিজ্ঞাসা করলে তিনি জবাব দেওয়ার আগেই সাঈদ ভাই বলতেন, এটা আমার খালাতো ভাই।’ তারা বলেন, আবিরের চলাফেরা কিছুটা অপ্রকৃতিস্থ ছিল। কেমন যেন হেলেদুলে হাঁটতেন।

নিবরাসদের মেসে তিন বেলা রান্না করে দিতেন স্থানীয় এক নারী। তিনি বলেন, ‘সাঈদ ভাই (নিবরাস) আর ছবির এই ভাই (আবির) একই রুমে থাকতেন। তারা বেশির ভাগ সময় ঘরেই কাটাতেন।’ তিনি বলেন, সাঈদ ওরফে নিবরাস মাঝে মাঝে মোটরসাইকেলে বাইরে যেতেন, তবে আবিরকে বাইরে যেতে তিনি দেখেননি। আবির কবে মেস ছেড়ে গেছেন, তা তিনি নিশ্চিত করে বলতে পারেননি।

সোনালীপাড়ার ওই বাড়ির মালিক সাবেক সেনাসদস্য কওছার আলী, তার কলেজ পড়ুয়া দুই ছেলে, পাাশের মসজিদের ইমাম মো. রোকনুজ্জামান ও সহকারী ইমাম সাব্বির হোসেনকে ৬ জুলাই ভোরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আটক করে নিয়ে যায় বলে পারিবারিক সূত্র জানায়। তবে গতকাল পর্যন্ত তাদের আটক করার কথা স্বীকার করেনি কোনো বাহিনী। স্থানীয় পুলিশ বলছে, তারা এ ব্যাপারে কিছু জানে না।

গত শুক্রবার বাড়ির মালিকের স্ত্রী বিলকিস নাহার বলেন, মাস চারেক আগে পাশের মসজিদের ইমামের মাধ্যমে প্রথমে দুজন ও পরে আরও ছয়জন ওই বাড়িতে ভাড়ায় ওঠেন। তাদের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বলে জানিয়েছিলেন ইমাম রোকনুজ্জামান, যিনি নিজেও ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।

এর মধ্যে দুজনের পরিচয় মিললেও বাকি ছয়জন কারা ছিলেন, সেটা এখনো জানা যায়নি। বিলকিস নাহার শুক্রবার বলেন, ওই বাড়ি বা মেসে যে আটজন থাকতেন তাদের মধ্যে ছয়জন রোজার শুরুতে বাড়ি যাওয়ার কথা বলে চলে যান। বাকি দুজন গেছেন ২৮ জুন।

আবিরের ব্যাপারে জানতে গতকাল আবার ওই বাড়িতে গেলে বিলকিস নাহার ঘরের দরজা খোলেননি। ঘরের জানালাও বন্ধ ছিল। ঘরের ভেতর থেকে একজন নারী বলেন, তাদের ওপর নানাভাবে চাপ এসেছে। তারা আর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন না। তবে কাারা চাপ দিচ্ছে, সেটা বলতে চাননি তারা।

গুলশান হামলায় নিহত পাঁচ জঙ্গির মতো শোলাকিয়া হামলায় নিহত আবির এবং আহত হয়ে ধরা পড়া শফিউর চার থেকে ছয় মাস আগে বাড়ি ছাড়েন। পরিবারের দাবি অনুযায়ী, এরপর থেকে তারা নিরুদ্দেশ ছিলেন। তাদের মধ্যে আবির গত মার্চ থেকে নিখোঁজ ছিলেন বলে থানায় জিডিতে উল্লেখ করা হয়েছে বলে জানায় ঢাকার ভাটারা থানার পুলিশ।

আর নিবরাস নিখোঁজ ছিলেন পাঁচ মাস। এর মধ্যে মাস খানেক ঝিনাইদহের ওই আস্তানায় থাকার তথ্য মিললেও বাকি সময় তারা কোথায় ছিলেন, সে ব্যাপারে এখনো নিশ্চিত তথ্য মেলেনি।

পরিবারের দাবি অনুযায়ী, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির বিবিএর ছাত্র আবির (২২) চার মাস ধরে নিখোঁজ ছিলেন। তবে রাজধানীর ভাটারা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয় ৬ জুলাই। এর পরদিন ফেসবুক ও গণমাধ্যমে ছবি দেখে স্বজনেরা জানতে পারেন, শোলাকিয়ায় নিহত হয়েছেন আবির। আবিরদের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলায় এবং ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় তাদের বাড়ি রয়েচে।

এদিকে, সাঈদ পরিচয়ে নিবরাসসহ আটজন ঝিনাইদহে বসবাস করার সময় চারটি আলোচিত হত্যাকা- ঘটেছে সেখানে। এসব হত্যাকা-ের মধ্যে গত ৭ জুন ঝিনাইদহ সদর উপজেলার করাতিপাড়া গ্রামের আনন্দ গোপাল গাঙ্গুলি খুন হন। এর আগে গত ৭ জানুয়ারি ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কালুহাটি গ্রামের বেলেখাল বাজারে খ্রিষ্টান হোমিও চিকিৎসক সমির বিশ্বাস ওরফে খাজা সমির ও ১৪ মার্চ কালীগঞ্জ শহরের নিমতলা এলাকার শিয়া মতাবলম্বী হোমিও চিকিৎসক আব্দুর রাজ্জাককে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সর্বশেষ গত ১ জুলাই ঝিনাইদহ সদর উপজেলার উত্তর কাস্টসাগরা গ্রামের স্থানীয় রাধামদন মঠের সেবায়েত শ্যামানন্দ দাস গোসাইকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এসব ঘটনার সঙ্গে তারা জড়িত ছিল কি না তা নিয়ে কৌতূহলের সৃষ্টি হয়েছে ঝিনাইদহবাসীর মধ্যে।

Share Now
January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031