দুই মাস হলো যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানে গেছেন। তাহমিদ হাসান চৌধুরী । সেখানে যাওয়ার পরপরই অদৃশ্য এক ভাইরাসের আক্রমণের শিকার হন। কিন্তু হেরে যাওয়ার পাত্র নয় তাহমিদ। সারা বিশ্ব যখন করোনা আতংকে তখন তিনি ছিলেন দৃঢ়চেতা । ভয়কে করেছেন জয়।
তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়,যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পর বোনের বাসায় ওঠেন তিনি। সেখান থেকে বের হয়েছিলেন মাত্র একদিন। তাও কোনো জনসমাগম এলাকায় যাননি।
কিভাবে আক্রান্ত হলেন তাও চিহ্নিত করতে পারেননি। তিনি বলেন,
আমি আসলে বুঝতে পারিনি আমার করোনা হয়েছে, প্রথমবার ইমার্জেন্সিতে যাওয়ার পর
বললো একিউট নিউমোনিয়া, এক রাত রেখে ছেড়ে দিলো।তিনদিনে কোন ইম্প্রুভ না
হওয়ায় আবার ভর্তি হই। দুইদিন পরে টেস্ট করার পরে করোনা পজিটিভ আসে। এমন
খবর শুনার পর আমি মোটেও বিচলিত হইনি। যেহেতু আক্রান্ত হয়েছি। এখন আমাকে এর
বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে। নিজের মনকে বার বার বুঝিয়েছি হেরে গেলে চলবে না।
আমাকে জয়ী হতে হবে। তবে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর আসলে আমার কিছু করা
লাগেনি। করোনা হওয়ার পর ডাক্তার নার্সই যা করার করেছে, আমি চুপচাপ উনাদের
কথা শুনেছি। তিনি বলেন, করোনার কোন চিকিৎসা নেই, মেডিসিন নেই, ভ্যাকসিন নেই
এখনো পর্যন্ত । আমি যে ১০ দিন হাসপাতালে ছিলাম আমাকে শুধুমাত্র চিকিৎসকরা
সহযোগিতা করেছে।
হাসপাতালে কি ধরনের চিকিৎসা করেছে জানতে চাইলে তিনি
বলেন, আমার প্রচন্ড শ্বাস কষ্ট হয়েছে। আমাকে অক্সিজেন দিয়ে সাপোর্ট করেছে
তারা। আমি কিছু খেতে পারতাম না,আমাকে প্রতিদিন স্যালাইন দেয়া হয়েছে, শরীরে
শক্তির যোগান দিতে ফুড সাপ্লিমেন্ট দিয়েছে। আমার জ্বর ছিলো, আমাকে জ্বরের
জন্য প্যারাসিটেমল আর শরীর স্পঞ্জ করে দিয়েছে। শরীরে এন্টি-অক্সিডেন্ট এর
অভাব ছিল, ফ্রুটস দিয়ে কাভার করেছে। আমার ডায়াবেটিস সমস্যা ছিলো তাই ইনসলিন
দিয়েছে। কিছু মেডিসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় আমার ডায়রিয়া শুরু হয়েছিলো।
সাথে ঘুমের ভয়াবহ সমস্যা তৈরি হয়েছিলো। তবে হাসপাতলে ডাক্তার’রা নানান ভাবে
আমাকে এন্টারটেইন করেছেন।
১০ দিন পর তাকে বাসায় পাঠিয়ে দেয়া হয়। বাসায়
এসে চিকিৎসকদের পরামর্শে ১৪ দিন আইসোলেশনে ছিলেন তিনি। পরে আরো সাত দিন
তিনি স্বেচ্ছায় আইসোলেশনে আছেন।
আইসোলেশনের সময়গুলো যেভাবে কেটেছে: তিনি
বলেন , আইসোলেশনের সময়গুলোতেসআমি মোটেও বিরক্ত ছিলাম না। চিকিৎসকদের
পরামর্শে আমি আইসোলেশন শেষ করেছি। কিভাবে সময়গুলো কেটেছে আইসোলেশনে এবং
একই ছাদের নিচে কিভাবে সবার সঙ্গে ছিলেন এমন প্রশ্নে তাহমিদ বলেন,
আইসোলেশনের সময় আসলে কেটে যাচ্ছিলো ফেসবুকিং করে। আমি চেষ্টা করেছি আমার
অভিজ্ঞতা সবাইকে জানানোর জন্য। মুভি দেখেছি, বই পড়ার চেষ্টা করি, নামাজ
পড়ছি, বাংলাদেশ স্কাউটস এর সদস্য আমি, বিভিন্নভাবে তাদের সঙ্গে সংযুক্ত
থাকার চেষ্টা করছি।
আমার রুমের ১০ ফিটের মাঝে কেউ আসেনি। শুধুমাত্র
খাবার দেয়ার সময় আমার বোন মাস্ক গ্লাভস গাউন পরে এসে খাবার দিয়েছে। পরে
সেগুলো খুলে ফেলে দিয়েছে। আমার বোন জান্নাতুন নাহার চৌধুরী আমার অভিভাবকের
কাজ করছেন। কারণ হাসপাতাল থেকে ছাড়ার সময় আমার বোনকে ফোন দিয়ে নানান
পরামর্শ দিয়ে আমাকে বাসায় দিয়েছে। মাথায় চিন্তা ছিলো আমার দ্বারা যদি
একটাও শর্ত ভাঙ্গা হয়, আমাকে আবার হাসপাতাল যাওয়া লাগবে, আর বোনের নামে
পুলিশে কমপ্লেইনও হতে পারে।
আমার বোন দুই সপ্তাহ আমার ভাগ্নীদের মুখ
দেখে নাই। ওদেরকে আরেকটা খালি বাসায় দুলাভাইকে নিয়ে পাঠিয়ে দিয়ে ছিলো। আমি
শুধু আমার বোনের কান্না শুনেছি ওর মেয়েদের জন্য । কিন্তু কখনো আমাকে কিছু
বলেনি। আমার বোন জামাই তো এখনো বাসায় আসেনি। তিনি নিজেও অসুস্থ হয়ে অন্য
বাসায় ছিলেন। কিন্তু কোন কমপ্লেইন ছিলো না তার। যেখানে কিছু পন্যের কোনো
সাপ্লাই নেই, কিন্তু উনি লাইজল স্প্রে, হ্যান্ড সেনিটাইজার, ওয়াইপস খুঁজে
আমার জন্য এনে দিয়েছেন যাতে আমি শান্তিতে থাকতে পারি। আর আমার ভাগ্নীগুলো
আমার জন্য দুই সপ্তাহ কষ্ট করে ঘরের বাইরে ছিলো, কোন টু শব্দ করেনি , কোনো
অভিযোগ ছিলো না। তবে এই সময়টা করোনা আক্রান্ত রোগীদের পরিবারের সমর্থন
থাকাটা খুবই জরুরী। এখন আমার ২১ দিন চলে। মোটামুটি ভালো আছি। তবে শ্বাস
কষ্ট এখনো রয়ে গেছে। এটা করোনার সাইড ইফেক্ট। আরো কয়েক দিন থাকবে। তাই আপতত
সবার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ রেখেছি। ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ কন্টিনিউ করছি।
ডাক্তারও নিয়মিত খবর নিচ্ছে। আইসোলেশনের মাঝে দুই রাত প্রচন্ড জ্বর
হয়েছিলো। মেডিসিনে তা আবার সেরেছে।
এই সময়টায় কি খেয়েছেন প্রশ্নে তিনি
বলেন, প্রতিদিন স্বাভাবিক খাবার খেয়েছি।প্রচুর পরিমানে ফল খাচ্ছি, সাথে
জুস, প্রচুর পরিমানে পানি খাচ্ছি, আমার সুগার লেভেল এখন কন্ট্রোলে আছে। তবে
এই করোনায় সময়টাতে সবাই আমার পাশে ছিলেন।সবাই ফোন দিয়ে খবর নিয়েছেন,
রান্না করে খাবার পাঠিয়েছেন। যা ভুলার মতো নয়। করোনায় আতেঙ্কর চেয়ে মনোবল
শক্ত রাখাটা খুব জরুরি।