কানাডিয়ানদের কাছে বছরব্যাপী শৈত্যপ্রবাহের প্রভাবে ঠান্ডাজনিত ফ্লু, সর্দি, হাঁচি, কাশি এইধরনের রোগবালাই খুব পরিচিত শব্দ । কিন্তু কানাডার উন্নত চিকিৎসাব্যবস্থা এদেশের নাগরিকদেরকে নিরবচ্ছিন্ন সেবা দিয়ে যায় তাতে ঠান্ডাজনিত কারণে তেমন কোনো বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে না। এই শীতপ্রধান দেশে বিরূপ আবহাওয়াকে অনুকূলে এনে কানাডিয়ানরা সামাজিক সম্প্রতি ও উদার মনোভাব বজায় রেখে শান্তি ও সমৃদ্ধির দেশ হিসেবে ইতিমধ্যে পৃথিবীর বুকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। উত্তর আমেরিকার উত্তরাংশে অবস্থিত এ দেশটি।
তবে অদৃশ্য একটি অনুজীব কোভিড -১৯ এর কাছে গোটা পৃথিবী আজ বিপর্যস্ত। থমকে গেছে মানুষের জীবনযাত্রা। সেখানে কানাডা আজ কোভিড-১৯ এর কাছে হার মেনেছে।
কানাডাতে মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে লকডাউন শুরু হয়েছে কুইবেক, অন্টারিওসহ অনেকগুলো শহরে। পরবর্তী সময়ে করোনার প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে পুরো কানাডা লকডাউন করা হয়েছে।
কানাডাতে বর্তমানে করোনায় আক্রান্তর সংখ্যা ১৯ এপ্রিল সকাল পর্যন্ত ৩৩ হাজার ৯৫১ জন। আর মারা গেছে এক হাজার নয়জন। বাংলাদেশি প্রবাসী মারা গেছেন ছয়জন। কানাডা সরকার করোনার প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে এবং কানাডার প্রত্যেকটি নাগরিকদের জন্য বিশেষ কিছু প্রণোদনা চালু করেছে। যেমন বাড়ি ভাড়াসহ খাবার প্রদান, চাইল্ড বেনিফিটসহ বেশ কিছু জনকল্যাণমুখী প্রণোদনা। এটাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন কানাডার নাগরিকরা।
কানাডাতে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যারা কানাডার নাগরিক তারাই এই সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন। তবে প্রবাসী বাংলাদেশিরা সবাই দীর্ঘ সময়ের হোম কোয়ারান্টাইনে থেকে মানুষিকভাবে অস্বস্তি বোধ করছে। তাছাড়া ঘরে থাকা শিশু কিশোর ও কিশোরীরা স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধ থাকায় তাদের মধ্যেও বিরক্তির ছাপ ফুটে ওঠেছে।
তবে কানাডার সরকার অনলাইনভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যবস্থা চালু করে দিয়েছে। গত দুই সপ্তাহ ধরে ঘরে বসেই সকল শিক্ষার্থী তাদের ভার্চুয়াল ক্লাসে অংশগ্রহণের সুযোগ পাচ্ছেন।
প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিশেষ করে শাক সবজি দেশীয় মাছ- মাংস আগের মতো আর পাচ্ছে না। বাংলাদেশি গ্রোসারি দোকান ও এশিয়ান গ্রোসারিগুলো সীমিত আকারে খোলা থাকলেও সরবরাহ নেই পর্যাপ্ত। সবজি ও কাঁচা মাল, দেশীয় মাছ-মাংস, এক পর্যায়ে দেশীয় খাবারের সংকট বলা চলে।
তবে কানাডায় অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশন সবসময় প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাশে আছে। হাইকমিশন জরুরি প্রয়োজনে সহযোগিতা পাওয়ার জন্য হটলাইন চালু করেছে। করোনার প্রাদুর্ভাবে কোনো প্রবাসী বাংলাদেশিরা যারা সংকটে থাকলে তাদের খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। অনলাইনে ও ডাকযোগে বাংলাদেশি ছাত্রছাত্রীদের কনসুলার সার্ভিস চালু রাখা হয়েছে। কানাডায় নিযুক্ত বাংলাদেশি হাইকমিশনার মিজানুর রহমান নিয়মিতভাবে প্রবাসী বাংলাদেশিদের খোঁজ খবর রাখছেন।
লেখক: কানাডা প্রবাসী