বাহরাইনের বাদশাহ বৈশ্বিক সঙ্কট করোনা বা কোভিড-১৯ এর এই কঠিন সময়ে অবৈধ বা অনিয়মিত বিদেশিদের প্রতি সদয় হয়েছেন। দেশটিতে প্রায় ৪০ হাজার বাংলাদেশিসহ লক্ষাধিক অবৈধ বিদেশীর প্রতি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছেন তিনি। ৩১ শে ডিসেম্বর অবধি সাধারণ ক্ষমার ওই মেয়াদের মধ্যে অবৈধরা নতুন পাসপোর্ট জোগাড় করাসহ অন্যান্য ডকুমেন্ট প্রদর্শনপূর্বক হয় সরকারী না হয় কোম্পানী ফি বা মাশুল ছাড়া ভিসা লাগিয়ে বৈধ হতে পারবেন। অথবা জরিমানা ছাড়া নিজ নিজ দেশে ফিরতে পারবেন। শুধু তা-ই নয়, করোনার কারণে বাহরাইন সরকার এরইমধ্যে বিদেশি কর্মীদের জুন অবধি সব ধরনের মাশুল মওকুফ করে দিয়েছে। তবে যেসব বিদেশি কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা চলছে, তারা সাধারণ ক্ষমার সুবিধা পাচ্ছেন না।
মানামাস্থ বাংলাদেশ মিশনেরর দায়িত্বশীল কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশ কমিউনিটির ধারণা মতে, বাহরাইনে কর্মসংস্থানের জন্য বৈধ ভিসা নিয়ে গিয়ে নানা কারণে অবৈধ হয়ে পড়া প্রায় ৪০-৪৫ হাজার বাংলাদেশি রয়েছেন। তাদের অন্তত ৯০ ভাগই বৈধতার সূযোগ গ্রহণ করবেন।
দূতাবাসের কনস্যুলার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাহরাইনে চলমান লকডাউনের মধ্যেও বৈধতার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।লকডাইন ধীরে ধীরে যত শিথিল হবে বাংলাদেশিদের বৈধতার প্রক্রিয়া ততই দ্রুততর হবে। বাহরাইনে বৈধ-অবৈধ মিলে প্রায় দুই লাখের মতো বাংলাদেশি কর্মী কাজ করেন।
বৈধকরণের প্রক্রিয়ায় সক্রিয় বাংলাদেশ দূতাবাস:
মানামায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন- অবৈধ বাংলাদেশিদের বৈধতার প্রক্রিয়ায় জরুরি হচ্ছে পাসপোর্ট। বাহরাইন পোস্টের মাধ্যমে নতুন পাসপোর্ট ইস্যু কিংবা নবায়নের ব্যবস্থা করছে দূতাবাস। পাশাপাশি বাংলাদেশী কর্মীরা যাতে স্বাচ্ছন্দ্যে এলএমআরএর মাধ্যমে অনলাইনে নিবন্ধন করতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে বাহরাইন ফিন্যান্স কোম্পানিকে যুক্ত করা হচ্ছে।
বাইরাইন প্রবাসী দক্ষিণ সুরমা উপজেলার খালোমুখ বারইগ্রামের বাসিন্দা সাবেক ছাত্রনেতা এ টি এম শাহনেওয়াজ জানান, বাহরাইন সরকার সঙ্কটময় সময়ে বিদেশিকর্মীদেনর প্রতি দয়াপরবশ হয়েছে। তার পরিচিত অনেকেই বৈধতার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। তারা দেশটির সরকারের বিশষত বাদশাহর প্রতি খুবই কৃতজ্ঞ। মৌলভীবাজার সদর উপজেলার রায়পুর এলাকার বাসিন্দা আবেদ কায়সার বলেন, বাহরাইন সরকার এতটা সদয় হবে এটা তাদের ভাবনাও ছিল না। তিনি বহু বছর ধরে দেশটিতে রয়েছেন। তার মতে, ৯০-৯৫ ভাগ বাংলাদেশি সূযোগটি গ্রহণ করবেন এবং বৈধ হবেন।
বাহরাইনের করোনা পরিস্থিতি: সঙ্কটের সূচনা থেকেই করোনা ঠেকাতে সতর্ক বাহরান সরকার। আর এ কারণেই তারা অনেকটা সফল। বাইরাইনে এ পর্যন্ত ১৭৬৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছেন ৭ জন। সুস্থ হয়ে হাসপাতাল বা আইসোলেশন সেন্টার ছেড়েছেন ৭৪১ জন। বাংলাদেশ মিশন ও কমিউনিটি উভয় সূত্রে জানা গেছে দেশটিতে মোটামুটি ৪০ জনের মত বাংলাদেশির করোনা শনাক্ত হয়েছে। তবে তাদের কারও অবস্থা গুরুতর নয়। দেশটির সিস্টেমের কারণে আক্রান্তরা কঠোর আইসোলেশনে রয়েছেন। হাতে এক ধরণের বিশেষ সতর্কতা সংকেতযুক্ত ব্রেসলেট পড়িয়ে দেয়া হয়েছে। যার কারণে তারা নির্ধারিত এরিয়ার বাইরে যেতে পারেন না। ফলে তাদের মাধ্যমে সংক্রমণের আশঙ্কা কম। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশি কেউ মারা যাননি বলেও নিশ্চিত করে বাংলাদেশ দূতাবাস।