ঢাকা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জঙ্গি নির্মূল করে দেশে শান্তি ফেরাতে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। সারাদেশে জঙ্গি বিরোধী বিশেষ কমিটি গঠন করে ইসলামের ‘শান্তির বাণী’ প্রচারের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। আর কেউ যেন বিপথে যেতে না পারেন সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, শিক্ষক, ইমাম,অভিভাবকসহ সকল শ্রেণী পেশার মানুষকে সজাগ দৃষ্টি রাখার আহ্বানও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেষ হাসিনা।
মঙ্গলবার দুপুরে জঙ্গিবাদ বিরোধী প্রচারণার অংশ হিসেবে জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে ভিডিও কনভারেন্সে প্রধানমন্ত্রী এই আহ্বান জানান।
গুলশানে হলি আর্টিজান এবং শোলাকিয়া ময়দানে জঙ্গি হামলায় উত্তবিত্ত পরিবারের চার তরুণের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি উঠে আসে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য। তিনি বলেন,‘ভালো ভালো স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও ইংরেজি মাধ্যমে পড়া শিক্ষার্থীরা কিভাবে ধর্মান্ধ হয়? কারা তাদেরকে এই পথে নিয়ে আসে?-এটা বের করতেই হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চাই না কেউ ভুল পথে গিয়ে অকাতরে জীবন বিলিয়ে দিক’।
ইসলামের নামে কেউ যেন তরুণদের বিপথে নিয়ে যেতে না পারে সে জন্য সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালাতে শিক্ষক, পেশাজীবী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারী, মসজিদের ইমাম এবং অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। এ জন্য জেলায় জেলায় জঙ্গিবিরোধী বিশেষ কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ছেলেমেয়েরা কোথায় কী করে সে বিষয়ে অভিভাবকরা আন্তরিকভাবে যেন চিন্তাভাবনা করেন। কেউ যেন বিপথে যেতে না পারে সে দিকে সতর্ক থাকতে হবে’।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোন এলাকার কোন ছেলেমেয়ে জঙ্গি সংশ্লিষ্ট কোনও তৎপরতায় জড়িয়েছে কি না, সে বিষয়ে খোঁজ রাখতে হবে, অচেনা কেউ এলো কি না সে দিকেও নজর রাখতে হবে’।
জঙ্গিবিরোধী সচেতনতা তৈরিতে মসজিদকে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবেও মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক মসজিদে জঙ্গি-সন্ত্রাসবিরোধী বক্তব্য দেয়া জরুরি। ইসলাম যে পবিত্র ধর্ম-এটি যে শান্তির কথা বলে সেটা বলতে হবে। কেউ যেন এই ধর্মকে কলুষিত করতে না পারে, সে জন্যই প্রচার চালাতে হবে’।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কেউ যদি তরুণদেরকে বিপথে পাঠাতে চায়, তাদেরকেও চিহ্নিত করার দরকার আছে’। এ ক্ষেত্রে আনসার-ভিডিপিকেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান সরকারপ্রধান। বলেন, ‘এই বাহিনীর সদস্যদের জনসম্পৃক্ততা বেশি, তারা এগিয়ে আসলে আমরা সুফল পাবো’।
শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতের অদূরে পুলিশের তল্লাশি চৌকিতে হামলার বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা নামাজ না পরে মানুষ হত্যা করে তারা কোন ইসলাম প্রচার করতে চায় জানি না। ইসলাম তো সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করার শিক্ষা দেয়। এসব ঘটনা ঘটিয়ে তারা ইসলাম ধর্মকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে’।
বিদেশিদের নিরাপত্তার দিকে দৃষ্টি রাখার আহ্বান
গুলশানের আর্টিজান হামলায় যে সাত জন জাপানি নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন তাদের ছয় জনই দেশের প্রথম মেট্রোরেল প্রকল্পে পরামর্শক হিসেবে কাজ করতেন। এই হামলার পর জাপানি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাইকা বাংলাদেশ থেকে কার্যক্রম গুটিয়ে নিতে পারে বলেও গুজব ওঠে। পরে অবশ্য সংস্থাটির এক বিবৃতিতে জানানো হয়, বাংলাদেশের উন্নয়নে সংস্থাটি কার্যক্রম আরও বাড়াবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নের স্বার্থেই বিদেশিদের নিরাপত্তার বিষয়টি জরুরি। তিনি বলেন,
‘যেসব প্রকল্প চলমান আছে সেগুলোতে অনেক বিদেশি কাজ করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও এলাকার মানুষের প্রতি আহ্বান জানাবো, তাদের নিরাপত্তার দিকে দৃষ্টি রাখবেন। আপনারা আমাদেরকে সহযোগিতা করবেন যেন আমরা দেশকে এগিয়ে নিতে পারি’।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে কোনও জঙ্গি-সন্ত্রাসীর স্থান হবে না। আমাদের একটা সংবিধা্ন আছে, আত্মপরিচয় আছে। আমরা মাথা উঁচু করে চলতে চাই, দেশকে গড়ে তুলতে চাই। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলবো’।
জঙ্গি তৎপরতায় দেশি-বিদেশি চক্রান্ত আছে অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জনগণের সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় এসে আমরা উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। দেশের উন্নয়নে ঈর্ষান্বিত হয়ে দেশি-বিদেশি মহল চক্রান্ত শুরু করেছে’।
কোনও ষড়যন্ত্র সফল হবে না মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ সন্ত্রাস-জঙ্গিমুক্ত হবে, মানুষ শান্তিতে নিরাপদে চলতে পারবে, দেশ উন্নতি হবে। এ জন্য আমরা সবার সহযোগিতা চাই’।