দুনিয়াবাসী করোনার থাবায় ক্ষত-বিক্ষত । দেশে দেশে থাকা বাংলাদেশিরাও ভাল নেই। বিশেষ করে বিশ্বের রাজধানী খ্যাত নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের চিত্র অবর্ণনীয়। সেখানে শুক্রবার সকাল অবধি কমপক্ষে ২ লাখ ২৩ হাজার ৬ শ ৯১ জন আক্রান্ত হয়েছেন। শুধু সিটিতেই আক্রান্ত ১ লাখ ২৩ হাজার ১ শ ৪৬ ছাড়িয়েছে। মারা গেছেন কমপক্ষে ১৪ হাজার ৮ শ ৩২ জন। মৃত্যুর ওই মিছিলে রয়েছেন বাংলাদেশ কমিউনিটির বহু পরিচিত মুখ। প্রায় দেড় শতাধিক বাংলাদেশি মারা গেছেন কেবল নিউইয়র্কেই।
লন্ডনে প্রায় অর্ধশত বাংলাদেশির করোনায় করুণ মৃত্যুসহ দুনিয়াজুড়ে বাংলাদেশি মৃতের সংখ্যা প্রায় আড়াই ‘শ হবে অনুমান। দেশে দেশে প্রবাসী আর বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আক্রান্তের সংখ্যাও হাজার হাজার। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা বাংলাদেশ কমিউনিটির হাতাশা জনক এই অবস্থার বিপরীতে ইউরোপের ক্যাপিটাল খ্যাত ব্রাসেলস বা রাষ্ট্র বেলজিয়ামে থাকা বাংলাদেশিদের অবস্থা বলতে গেলে এখনও বেশ ভালই। এক কোটি ১১ লাখ জনসংখ্যার ওই ছোট্ট রাষ্ট্রে করোনার কারণে এ পর্যন্ত মারা গেছেন প্রায় ৫ হাজার মানুষ। আক্রান্ত ৩৬ হাজারের বেশি। অবশ্য সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ত্যাগীর সংখ্যা ৭ হাজারের একটু বেশি। জনসংখ্যা বা আয়তন বিবেচনায় বেলজিয়ামে করোনায় মৃত্যু বা আক্রান্তের হার ইউরোপের মধ্যে সর্বোচ্চই হবে। কিন্তু আশার দিক বা ভাল লাগার বিষয় হচ্ছে দেশটিতে থাকা কম বেশি ৬ হাজার বাংলাদেশি করোনার থাবা থেকে এখনও প্রায় মুক্ত বা ফ্রিই বলা যায়!
বাংলাদেশ কমিউনিটির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ব্রাসেলসে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শাহাদাৎ হোসেন থেকে শুরু করে প্রবাসী বাংলাদেশি সকলে অভিন্ন সুরে বলেন, এটা অবশ্যই স্বস্তির খবর যে দেশটিতে এক পরিবারের ৩ জন এবং সিঙ্গেল থাকা একজন বাংলাদেশি করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন ৪ সপ্তাহ আগে। স্রষ্টার কৃপায় এখন তারা সবাই সুস্থ। দেশটিতে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে ১০ই এপ্রিল, ৪ শ ৯৬ জন মারা গেছেন। ওই দিনে আক্রান্ত হন ১৬ শতাধিক। শুক্রবারও দেশটিতে ৩০৬ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ১৩২৯ জন। ব্রাসেলসের এক্সেল এলাকায় বসবাসরত নোয়াখালী জেলার চাটখিলের বাসিন্দা হারুনুর রশিদ একটি ভিডিও দেখিয়ে বলেন, ইইউর সদর দপ্তর হওয়ার কারণে যে ব্রাসেলসের রাস্তায় হাজার হাজার গাড়ি চলতো এখন সেখানে একটি চলন্ত গাড়ির দেখা পাওয়া ভার। ব্রাসেলসে থাকা বিশ্বনাথের বাসিন্দা আলম হোসেন জানান, বেলজিয়ামে স্কুল, কলেজ, সভা-সেমিনার সব বন্ধ। ৩ই মে পর্যন্ত দেশটিতে চলমান লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। ব্রাসেলসের সেন্টজিলস এলাকায় বসবাসরত মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলার মিঠিপুর এলাকার বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম জানান, ১৭ই মার্চ থেকে লকডাউন অবস্থায় রয়েছেন তারা।রেস্টুরেন্ট ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত জাহাঙ্গীর জানান, তাদের ব্যবসার একটা পার্ট টেইকওয়ে খোলার অনুমতি ছিল। কিন্ত বাড়তি সতর্কতায় তারা ক্ষতি স্বীকার করেছেন, কিন্তু ঝুঁকি নিতে চাননি বলে ব্যবসা পুরোপুরি বন্ধ রেখেছেন। সিলেটের দক্ষিণ সুরমা এলাকার বদিকোণার বাসিন্দা ব্রাসেলসের উকসেল এলাকায় স্বপরিবারে বসবাসরত তৌহিদুল ইসলাম রুমেল জানান, জরুরী কাজ ছাড়া কাউকে সবার বাইরে বের হতে নিষেধ। শুধু মাত্র ফার্মেসি, খাবারের দোকান, পোস্ট অফিস ছাড়া বাকি সব বন্ধ। ৩রা মে’র পর লকডাউন কিছুটা শিথিল হতে পারে। তকে নাইট ক্লাব, বার আগস্ট পর্যন্ত বন্ধের আগাম ঘোষণা রয়েছে। পর্তুগাল থেকে বেলজিয়ামে বেড়াতে গিয়ে লকডাউনে আটকে পড়া মৌলভীবাজার জেলার রাজনগরের কাটাজুড়ি এলাকার আবদুল আজিজ খান জানান, মাসখানেক ধরে দেশটিতে রয়েছেন তিনি। তার মতে বাংলাদেশ কমিউনিটি একটু বেশি সতর্ক বলে এখনও সবাই নিরাপদে আছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জানান, দেশটির ব্যবসায়ীদের তরফে লকডাউন শিথিল করার বেশ চাপ আছে। সরকারের তরফে পরিস্থিতি পর্যালেচনায় ডাক্তার, বিজ্ঞানী, গবেষক, রাজনীতি বিশ্লেষক এবং অর্থনীতিবিদদের নিয়ে একটি কমিটি করে দেয়া হয়েছে। ওই কমিটির মতামত এবং কোভিড ১৯ এর বৈশ্বিক আক্রমণের গতি প্রকৃতি বিবেচনায় ৩রা মে র আগেই পরবর্তী করণীয় বিষয়ক রাষ্ট্রীয় ঘোষণা আসবে।