পুলিশ নভেল করোনাভাইরাসের মহামারির মধ্যে ভাইরাসটিতে আক্রান্ত কি-না শনাক্ত করার টেস্ট কিট একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে উদ্ধার করেছে । বাইরে এসব কিট কেনাবেচার সুযোগ না থাকলেও কী করে খোলা বাজারে গেছে সুস্পষ্ট বক্তব্য নেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের।
তবে প্রতিষ্ঠানটিরই ‘অসাধু’ কর্মকর্তাদের যোগসাজশে এই সময়ে সবচেয়ে জরুরি এই চিকিৎসা উপকরণটি বাইরে বিক্রির উদ্দেশ্যে স্টক করা হচ্ছিল বলে পুলিশের ধারণা। যদিও কেউ কেউ বেসরকারিভাবে কিট সংগ্রহ করে থাকতে পারেন বলে মনে করেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব।
বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর বাংলামোটরে অভিযান চালিয়ে এবিসি করপোরেশন নামে ওই প্রতিষ্ঠানের চার কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারের পর তাদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলাও হয়েছে। কীভাবে তারা করোনা পরীক্ষার কিট পেয়েছে, বিষয়টি জানতে পুলিশের পক্ষ থেকে আদালতে সাত দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে।
২০টি মাস্ক ৩০ হাজার টাকা বিক্রি করা হচ্ছে- এমন অভিযোগ পেয়ে পুলিশ বাংলামোটরের ওই প্রতিষ্ঠানে অভিযানে যায়। এরপরই বেরিয়ে আসে করোনা কিটের বিষয়টি।
পুলিশ বলছে, সরকারিভাবে আনা এসব কিট বেসরকারি কোনো কোম্পানির হাতে যাওয়ার সুযোগ নেই। কোনো অসৎ কর্মকর্তার যোগসাজশে এসব কিট সরকারি অফিস থেকে বাইরে এসেছে কি-না তা জানার চেষ্টা চলছে।
দেশে নভেল করোনাভাইরাস তথা কোভিড-১৯ এ আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে মৃত্যুও। সংক্রমণ ঠেকাতে প্রতিদিন দেড় ডজনের বেশি ল্যাবে করোনা আক্রান্তদের নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। বিশ্বজজুড়ে করোনা প্রাদুর্ভাবের মধ্যেই সরকার গত মার্চে বিভিন্ন দেশ থেকে করোনা পরীক্ষার কিট সংগ্রহ করে। এসব কিট দিয়েই চলছে করোনা রোগী সনাক্তের কাজ।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কিট পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা বিভাগ আইইডিসিআরের পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘টেস্ট কিট তো কোনোটায় এভাবে বাইরে যাবার কথা না। টেস্ট কিট একটা….. মেইনটেইন করতে হয়। সরকারি কিট খোলা বাজারে পাওয়ার মতো কোন কারণ নেই।’
তাহলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বিট পাওয়া গেল কিভাবে- এমন প্রশ্নের জবাবে আইইডিসিআরের পরিচালক বলেন, ‘আমি ঠিক জানি না। এই তথ্যটা আমাকে ভেরিফাইড (নিশ্চিত) হতে হবে। তারপর বিস্তারিত জানাতে পারব।’
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ডিএমপির রমনা জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) এস এম শামীম ঢাকা টাইমসকে জানান, বৃহস্পতিবার রাতে মগবাজার মোড়ে চেকপোস্ট ডিউটি করছিলেন। এসময় এক ব্যক্তি অভিযোগ করেন বাংলামোটরের এবিসি করপোরেশন ২০টি মাস্কের দাম ৩০ হাজার টাকা রেখেছে। যদিও মাস্কগুলোর সবোচ্চ দাম সাড়ে তিন হাজার টাকার মধ্যে হবে। তাৎক্ষণিকভাবে রমনা ও শাহাবাগ থানা পুলিশের দুটি দল নিয়ে বাংলামোটরের জহুরা টাওয়ারে যান। সেখানে অভিযান চালিয়ে প্রতিষ্ঠানটিতে মজুদ থাকা চোরাচালানের মাধ্যমে আনা বিভিন্ন চিকিৎসা সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।
অভিযানে প্রতিষ্ঠানটির ভিতরে বিপুল পরিমাণ করোনা প্রতিরোধ সামগ্রী পাওয়া যায়। যার মধ্যে করোনা টেস্টিং কিটও রয়েছে, বেসরকারিভাবে পাওয়ার কথা না। এই ঘটনায় আনোয়ার হোসেন, অমিত বসাক, শোয়াইব ও শুভ নামের ওই প্রতিষ্ঠানের চার কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশের তথ্য মতে, উদ্ধার হওয়া সরঞ্জামের মধ্যে রয়েছে- ২৭৫ পিস করোনা টেস্ট কিট, ৯০৫০ পিস সাধারণ মাস্ক, ১০০ পিস এন-৯৫ মাস্ক, ১৯৮ পিস পিপিই, ৯৬০ জোড়া হ্যান্ড গ্লাভস, ২৫০ জোড়া চশমা, ৯০০ টি ক্যাপ, ১৪৪০ টি শু-কাভার।
সহকারী পুলিশ কমিশনার শামীম আরও জানান, প্রতিষ্ঠানটি করোনাভাইরাসের চিকিৎসাসেবার বিভিন্ন সরঞ্জাম অধিক মুনাফার লোভে অবৈধভাবে গুদামজাত করে রেখেছিল। এসব তারা বেশি দামে বিক্রি করছিল। তাদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫/২৫(বি) ধারায় শাহবাগ থানায় মামলা হয়েছে।
করোনা কিট তারা কীভাবে মজুদ করছিল জানা গেছে কি-না প্রশ্নে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘তারা একবার বলে চায়না থেকে অবৈধভাবে এনেছে। আবার বলছে শাহবাগের বিএমএ ভবনের ওখান থেকে কিনেছে। কিন্তু সঠিক কোনো কাগজ দেখাতে পারেনি। তদন্ত করে আমরা সঠিকটা বের করব।’
করোনা নির্ণয়ের কিট খোলাবাজারে কিভাবে গেল বিষয়টি যাচাইবাছাই করা দরকার বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন অনুবিভাগ) মো. হাবিবুর রহমান খান।
ঢাকা টাইমসকে তিনি বলেন, ‘কিভাবে কিটগুলো বাইরে গেল সেটা না জেনে বলা ঠিক হবে না। এমনও হতে পারে বেসরকারিভাবে বিভিন্ন লোক কিট সংগ্রহের চেষ্টা করছে।’
‘উদ্ধার হওয়া কিট আমাদের বিশেষজ্ঞ দেখলে হয়ত বলতে পারবে আমাদের মেশিনে যে কিট ব্যবহার করা হচ্ছে সেটা কি-না। সাধারণ কারও বোঝার কথা না, যারা ল্যাবে কাজ করে তারাই এটা বুঝতে পারবে।’
তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বিশেষজ্ঞদের কাছে জমা দিলে বোঝা যাবে সরকারি কোনো জায়গা থেকে এটা লিকেজ হয়েছে কি না। যদি হয় তাহলে তো ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর যদি সরকারি কিট না হয় তাহলে আমাদের কিছুর করার প্রয়োজন পড়বে না।’
ডিএমপির রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) সাজ্জাদুর রহমান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘অভিযানে বিভিন্ন চিকিৎসা সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে করোনা কিট রয়েছে। কীভাবে তারা পেয়েছে, সে বিষয়টি জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে তাদের সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন করা হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।’