পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন করোনাভাইরাসের কারণে চাকরির বাজারে মারাত্মক প্রভাব পড়ায় প্রাথমিকভাবে মধ্যপ্রাচ্যের সর্বোচ্চ ১৫ হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিক দেশে ফিরে আসতে পারেন বলে আভাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ গত দুই সপ্তাহ ধরে কারাগারে আটকদেরসহ অনিবন্ধিত কর্মীদের ফিরিয়ে আনার জন্য ঢাকার প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে এবং এই পর্যায়ে আমরা প্রত্যাশা করছি যে, আমাদের ফিরিয়ে আনা কর্মীর সংখ্যা ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার হতে পারে।
বার্তা সংস্থা বাসসকে মোমেন বলেন, নীতিগতভাবে বাংলাদেশ তার নাগরিকদের গ্রহণ করতে প্রস্তুত। তবে, ঢাকা সংশ্লিষ্ট মধ্যপ্রচ্যের দেশগুলোকে জানিয়েছে, ‘আমরা তাদেরকে পর্যায়ক্রমে ফিরিয়ে নিয়ে আসবো, আমরা ফিরিয়ে এনে তাদেরকে কোরেন্টাইনে রাখার প্রস্তুতি নিাচ্ছি এবং তাদের আবাসনের জন্য যথাযথভাবে সুযোগ-সুবিধা তৈরি করা হচ্ছে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ৩৬৬ জন বাংলাদেশি প্রবাসী শ্রমিকের প্রথম ব্যাচটি গতরাতে সৌদি আরব থেকে রাজকীয় ব্যয়ে সৌদি এয়ারলাইন্সের একটি বিশেষ ফ্লাইটে দেশে পৌঁছেছে।
প্রক্রিয়াটির সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাদের মধ্যে প্রায় ২০০ জন সৌদি কারাগারে ছিলেন, ১৩২ জন পবিত্র ওমরাহ পালন করতে গিয়ে আটকা পড়েছিলেন এবং বাকিরা অনিবন্ধিত বেকার শ্রমিক।
মোমেন বলেন, দেশগুলো বাংলাদেশি শ্রমিকদের নিজস্ব ব্যয়ে ফেরত পাঠাতে সম্মত হয়েছে, তারা বিশেষ বিমানের ব্যবস্থা করেছে। এর মধ্যে প্রায় ৩৫০ জন কুয়েত থেকে এবং ৪৪০ জনকে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে প্রথম পর্যায়ে ফিরে আসতে হবে।
মন্ত্রী বলেন, ওমান, লেবানন এবং কাতারের পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী মহামারি বিবেচনায় অনিবন্ধিত বাংলাদেশি শ্রমিকদের বের করে দিতে চাচ্ছে।তিনি বলেন, তাদের সংখ্যা যা-ই হোক না কেন প্রত্যেককে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মেডিক্যাল চেকআপ করানো হবে এবং তারপরে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের ব্যবস্থাপনায় ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারান্টাইনে প্রেরণ করা হবে।
মোমেন বলেন, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ বর্তমানে পাঁচ হাজারেরও বেশি লোকের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন সুবিধা চূড়ান্তকরণের জন্য কাজ করছে এবং তাদের কাজ সম্পন্ন করার পরে ‘আমরা প্রতি সপ্তাহে ৩০০০ থেকে ৪০০০ জনকে নিরাপদে কোয়ারেন্টাইনে পাঠাতে সক্ষম হবো।’
মন্ত্রী জানান, এর আগে গতকাল প্রত্যাবাসন ইস্যু নিয়ে তার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত তৃতীয় আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে যে, বেকার প্রবাসী শ্রমিকদের দেশে ফেরত আনার জন্য সরকার পাঁচ থেকে সাত লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেবে।
সিদ্ধান্ত অনুসারে, প্রত্যেক প্রত্যাবাসী বিমানবন্দরে পৌঁছে পাঁচ হাজার টাকা করে পাবেন এবং করোনাভাইরাসে মারা যাওয়া প্রবাসী শ্রমিকদের পরিবার তিন লাখ টাকা করে পাবেন।
এদিকে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) দু’দিন আগে এক বিবৃতিতে বলেছে, কাজের জগতে কোভিড-১৯-এর তীব্র অর্থনৈতিক প্রভাবগুলোর মধ্যে কেবল মাত্র তিন মাসের মধ্যে প্রায় ২০০ মিলিয়ন চাকরি হারাতে পারে।’
জাতিসংঘের এই শ্রম সংস্থাটি জানিয়েছে, তাদের সর্বশেষ মূল্যায়নে বলেছে, সারা বিশ্বের দেশগুলোতে পুরো বা আংশিক লকডাউনগুলোর কারণে প্রায় ২ দশমিক ৭ বিলিয়ন শ্রমিককের কাজে প্রভাবিত করেছে। যা বিশ্বের শ্রমিকদের প্রতি পাঁচজনের মধ্যে চারজন।
আইএলও জানিয়েছে, ‘প্রায় দুই বিলিয়ন লোকের জন্যও উদ্বেগ বাড়ছে যারা অনানুষ্ঠানিকভাবে কাজ করেন, তাদের বেশিরভাগই উদীয়মান এবং উন্নয়নশীল দেশের শ্রমিক।