জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাসিমা বেগম করোনাভাইরাসে উদ্ভূত পরিস্থিতির মধ্যে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ।
একইসঙ্গে তিনি করোনার কারণ সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা সেবা না পাওয়ার ঘটনা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন বলে মন্তব্য করেছেন।
বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান এমন উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
বিবৃতিতে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, ‘কমিশন গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছে, করোনার এই দুর্যোগ পরিস্থিতিতেও নারী এবং শিশুদের পারিবারিক সহিংসতার পাশাপাশি বিভিন্ন যৌনবিকৃত মানুষের যৌন সহিংসতার শিকার হতে হচ্ছে।’
‘বিভিন্ন গবেষণা ও তথ্য উপাত্ত থেকে এটি প্রতীয়মান, যে কোনো দুর্যোগ, বিপর্যয় বা মহামারিতে নারী-শিশু, প্রতিবন্ধী এবং হিজড়াসহ অনগ্রসর জনগোষ্ঠী অধিকতর ঝুঁকি বা দুরাবস্থায় থাকেন। করোনাভাইরাসের এই সংকটকালীন সময়ও এর ব্যাতিক্রম নয়।’
বিবৃতিতে নাসিমা বেগম বলেন, ‘করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে ঘরে থাকার কোনও বিকল্প নেই। এ লক্ষ্যে সবাই একসঙ্গে ঘরে থাকার কারণে নারীকে অধিকাংশ সময়ই রান্না ঘরে কাটাতে হয়। পরিবারে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে সেবার দায়িত্বটিও অবধারিতভাবে নারীকেই পালন করতে হয়। অল্প কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া অধিকাংশ পুরুষ সদস্যই গৃহস্থালী কাজে নারীর পাশে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন না।’
করোনা আক্রান্ত রোগীর পাশাপাশি সাধারণ রোগীদের অনেকে চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না উল্লেখ করে কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, ‘কমিশন আরও লক্ষ্য করছে, করোনা আক্রান্ত রোগীর পাশাপাশি সাধারণ রোগীদের অনেকে চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না। বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করছেন, যা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।’
বিবৃতিতে নাসিমা বেগম বলেন, ‘প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের ব্যাপক সংক্রমণ পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মানবিক বিপর্যয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটিকে বৈশ্বিক মহামারি হিসেবে ঘোষণা করেছে। আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশও করোনাভাইরাসের ক্রমাগত সংক্রমণে এই ভয়াবহ বিপর্যয়ের সম্মুখীন।
করোনা প্রতিরোধে দ্রুততম সময়ের মধ্যে দিনমজুর এবং নিম্ন-মধ্যবিত্ত কর্মহীন মানুষের তালিকা তৈরি এবং অসহায় নারী-শিশু-প্রতিবন্ধী-হিজড়াসহ অনগ্রসর জনগোষ্ঠীদের তালিকা করে বাড়ি বাড়ি খাবার পাঠিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করেন মানবাধিকার চেয়ারম্যান।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘লকডাউনের ফলে দিনমজুর শ্রেণির কোনো কাজ না থাকায় তাদের প্রত্যেককে তালিকাভুক্ত করে ত্রাণ বিতরণে প্রধানমন্ত্রীর কঠোর অনুশাসন সত্ত্বেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে এর ব্যত্যয় ঘটছে, যা কাম্য নয়।’
‘অধিকাংশ ক্ষেত্রে ত্রাণ বিতরণের সময় জনসমাগমের ফলে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিও বেড়ে যাচ্ছে। কমিশন মনে করে, দ্রুততম সময়ের মধ্যে দিনমজুর এবং নিম্ন-মধ্যবিত্ত কর্মহীন মানুষের তালিকা তৈরি এবং অসহায় নারী-শিশু-প্রতিবন্ধী-হিজড়াসহ অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে তাদের বাড়িতে বাড়িতে খাবার পৌঁছে দেওয়া এখন সময়ের দাবি।’
এক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংগঠন, স্বেচ্ছাসেবী, ধনাঢ্য ব্যক্তি যারা এগিয়ে এসেছেন তাদের সবাইকে কমিশনের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানান চেয়ারম্যান।
বিবৃতিতে নাসিমা বেগম আরও বলেন, ‘কমিশন মনে করে, এক্ষেত্রে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ কর্তৃক অভিযোগ গ্রহণ সম্পর্কিত হটলাইন সার্ভিস চালু রেখে নিবিড় পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে জরুরি স্বাস্থ্যসেবা ও আইনগত সেবা নিশ্চিত করতে হবে। করোনা রোগীর চিকিৎসা সেবার সঙ্গে জড়িত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও সুরক্ষার জন্য পর্যাপ্ত সুরক্ষাসামগ্রীর ব্যবস্থা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।’
করোনায় আত্রান্ত কাউকে অবহেলা না করার আহ্বান জানিয়ে চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদের মনে রাখতে হবে, করোনা আক্রান্ত রোগীরা অচ্ছুৎ কেউ নন। যে কেউ যেকোনও সময় এই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন। সুতরাং ‘সকলের তরে সকলে আমরা, প্রত্যেকে মোরা পরের তরে’— এটি মনে রেখে করোনা আক্রান্তদের মনোবল চাঙা রাখতে হবে।’
‘কমিশন তাদের দ্রুত রোগ মুক্তির প্রার্থনা করে। ইতোমধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা সেবা প্রদানকারী ডাক্তারসহ যারা মৃত্যুবরণ করেছেন, তাদের প্রত্যেকের আত্মার মাগফিরাত কামনাসহ শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছে কমিশন।’
গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে আরও বলা হয়, কমিশন মনে করে, জাতীয় এই মানবিক দুর্যোগ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সবাই ঘরে থাকবো, স্বাস্থ্যবিধি এবং সামাজিক দূরত্ব মেনে চলবো। পরিবারের সবাই সৌহার্দ্য ও আন্তরিকতার সঙ্গে গৃহের কাজে অংশগ্রহণসহ নারী-শিশু ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা সুরক্ষায় একসঙ্গে কাজ করবো।
এতে আরও উল্লেখ করা হয়, আসুন, সবাই স্বাস্থ্যবিধি, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলি, নিরাপদে ঘরে থাকি। পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ও গোটা বিশ্বকে নিরাপদ রাখি। সবার সম্মিলিত সহযোগিতা, সচেতনতা ও মানবিক আচরণের মাধ্যমে করোনা যুদ্ধে আমাদের নিশ্চিত জয় হবে ইনশাআল্লাহ। আঁধার কেটে আলো আসবেই।