ঢাকার দারুসসালাম, মিরপুর, উত্তর ও দক্ষিণখানসহ বিভিন্ন এলাকায় গার্মেন্টস শ্রমিকরা রাস্তায় নেমে আসে। বকেয়া বেতনের দাবিতে শত-শত গার্মেন্টস শ্রমিক বুধবার ঢাকা এবং এর আশপাশের এলাকায় রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছে। এছাড়া গাজীপুর এলাকায়ও শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেছে।
বিক্ষোভে অংশ নেয়া শ্রমিকরা অভিযোগ করছেন, বহু গার্মেন্টস মালিক করোনাভাইরাস পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে বেতন আটকে রেখেছেন।
গাজীপুরের বোর্ড বাজার এলাকায় অবস্থিত একটি গার্মেন্টস কারখানার শ্রমিক সাবিনা আক্তার টেলিফোনে বিবিসি বাংলাকে বলেন, গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে তাদের কোন বেতন দেয়া হয়নি। তিনি বলেন, ‘আজকে ১৫ তারিখে আমাদের অফিসে আসতে বলছে। আজকেও আমাদের স্যালারি দিতেছে না। আমরা কীভাবে আমাদের পেটে ভাত দেব?’
সাবিনা আক্তার জানান, গত ৭ এপ্রিল পর্যন্ত তারা কারখানায় কাজ করেছেন। এরপর মালিকপক্ষ নোটিশ দিয়ে কারখানা বন্ধ করে।
ঢাকার উত্তরখান এলাকায় একটি গার্মেন্টসে কাজ করেন মাসুদ রানা। তিনি টেলিফোনে বিবিসি বাংলাকে জানান, তাদের গত দুই মাসের বেতন পরিশোধ করেনি মালিকপক্ষ।
‘আমাদের তো বাঁচতে হবে। আমরা তো গত দুই মাস ডিউটি করছি। ওই দুই মাসের বেতন দিক। মালিকরা করোনার টালবাহানা দিতেছে।’
গার্মেন্টস শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করেন জলি তালুকদার। তিনি বলেন গত একমাসে হাজার-হাজার গার্মেন্টস শ্রমিককে চাকরি থেকে ছাঁটাই করা হয়েছে।
‘আমরা ৪০-৪৫ টা গার্মেন্টসে প্রায় ২৫ হাজার শ্রমিক ছাঁটাইয়ের তালিকা করেছি।’
তিনি অভিযোগ করেন, বিভিন্ন কারখানায় শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করার জন্য মালিক-পক্ষ একাধিক দিন ধার্য করলেও তাতে কোন কাজ হয়নি। ফলে শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি প্রশ্ন তোলেন, গার্মেন্টস খাতে প্রতিবছর রপ্তানি আয় প্রায় ৩৫ বিলিয়ন ডলার হলেও কেন তারা শ্রমিকদের একমাসের বেতন নিশ্চিত করতে পারলো না?
জলি তালুকদার অভিযোগ করেন, শ্রমিকদের মজুরি আটকে রেখে এবং ছাঁটাই করার মাধ্যমে মালিক-পক্ষ হয়তো সরকারের কাছ থেকে সুবিধা আদায় করার ক্ষেত্র প্রস্তুত করছে।
‘মালিকরা শ্রমিকদের দিয়ে আরেক ধরনের চাপ তৈরি করে এরা বড় ধরনের দরকষাকষির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে আমার ধারণা।’
মালিকপক্ষ কী বলছে?
করোনাভাইরাস সংক্রমণ-জনিত অর্থনৈতিক সংকট সামলাতে বাংলাদেশ সরকার গার্মেন্টসসহ রপ্তানি খাতের জন্য প্রণোদনা হিসেবে পাঁচ হাজার কোটি টাকা বিতরণের এক রূপরেখা চূড়ান্ত করেছে। তবে শর্ত হলো, এ টাকা দিয়ে শ্রমিকদের বেতন দিতে হবে।
মালিকরা এই টাকা পাবেন দুই শতাংশ হারের সুদে ঋণ হিসাবে।
সরকার যে টাকা দিয়েছে সেটি দিয়ে এপ্রিল মাস থেকে বেতন পরিশোধ করার কথা। কিন্তু মার্চ মাসের বেতন মালিকদের পরিশোধ করার কথা।
তৈরি পোশাক কারখানার মালিকদের সংগঠন বা বিজিএমইএ’র সভাপতি রুবানা হক বিবিসি বাংলাকে বলেন, বিজিএমইএ’র আওতায় যত কারখানা আছে সেখানে প্রায় ২৬ লাখ শ্রমিক কাজ করে। এর মধ্যে প্রায় সাড়ে ১৬ লাখ শ্রমিকের বেতন পরিশোধ করা হয়েছে।
বিজিএমইএ’র আওতার বাইরেও আরো প্রায় ২০ লাখ শ্রমিক আছে বলে শ্রমিক নেতারা বলছেন।
রুবানা হক বলেন, আগামী ১৬ এপ্রিল শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করার সর্বশেষ সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার।
‘এখানে মালিকদের দোষ দেবার আগে আপনারা ক্রেতাদেরও একইভাবে বলবেন।’
তিনি বলেন, এক ধরনের অনিশ্চয়তা থেকে শ্রমিকরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করছে।
‘ওয়ার্কারের এই অনিশ্চয়তা মালিকপক্ষ থেকে আসেনি। এটা এসেছে ক্রেতারা ক্রয়াদেশ বাতিল করেছেন বলে।’
শ্রমিকদের বেতন আটকে রেখে কিংবা ছাঁটাই করার মাধ্যমে মালিক নতুন করে দরকষাকষির নতুন কোনো ক্ষেত্র প্রস্তুত করছে কি?
এমন প্রশ্নে রুবানা হক বলেন, ‘প্রশ্নই উঠে না। এটা যদি কেউ বলে থাকেন, মিথ্যা কথা বলছেন। আমরা এর শক্ত প্রতিবাদ করছি।’
‘যেখানে আমরা পোশাক শিল্পে ক্রান্তিলগ্নে পৌঁছেছি, সেখানে আমারা আমাদের কোটি-কোটি টাকার ইনফ্রাস্টাকচারকে আমরা এভাবে সামনে ঠেলে দেব হুমকির মুখে?’
রুবানা হক বলেন, ৮০ শতাংশ কারখানা প্রত্যেক মাসে ঠিকমতো দেয়। বাকি ২০ ভাগ হয়তো ঠিকমতো বেতন দিতে পারে না বলে তিনি উল্লেখ করেন। -বিবিসি বাংলা