স্বামী ফেনীতে ফেসবুক লাইভে এসে স্ত্রী তাহমিনা আক্তারকে (২৮) কুপিয়ে হত্যা করেছেন। বুধবার দুপুরে ফেনী পৌরসভার উত্তর বারাহীপুর ভুইয়া বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ গৃহবধূর স্বামী ওবায়দুল হক টুটুলকে(৩২) আটক করেছে। টুটুল ওই বাড়ির গোলাম মাওলা ভুঞার ছেলে। নিহত তাহমিনার দেড় বছর বয়সী একটি মেয়ে সন্তান রয়েছে।
নিহতের বোন রেহানা আক্তার জানান, কুমিল্লা জেলার গুনবতী এলাকার আকদিয়া গ্রামের সাহাবুদ্দিন এর মেয়ে তাহমিনা আক্তারের সাথে ৫ বছর পূর্বে ওবায়দুল হক টুটুলের প্রেমের সম্পর্কে পালিয়ে চট্টগ্রামে বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে আর্থিক অসচ্ছলতা নিয়ে তাদের পরিবারের মাঝে প্রায় সময় ঝগড়া বিবাদ লেগে থাকতো।
এরইমধ্যে স্বামী টুটুল শশুড় বাড়ি থেকে বেশ কয়েক দফা টাকা নেয়। এক পর্যায়ে আরো টাকার জন্য চাপ দিলে স্ত্রী তাহমিনা টাকা দিতে অপরারোগতা প্রকাশ করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বুধবার দুপুরে ফেসবুক লাইভে এসে স্বামী টুটুল তার স্ত্রীকে এলোপাতাড়ি দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে।
এদিকে স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যার আগমুহুর্তে ভিডিওতে ওবায়দুল হক সকলের কাছে মাফ চায় এবং ঘটনার জন্য সে নিজেরই দায়ী বলে স্বীকার করেন। এছাড়া পারিবারিক অশান্তির জন্য স্ত্রীকে দায়ী করেন। তার স্ত্রী পরিবারকে ব্লাকমেইল করতো বলেও দাবী করেন। আজ থেকে তার পরিবার আর কোন ব্লাকমেইলের শিকার হবেনা। তিনি ভিডিওতে তার মেয়েটাকে ও ভাই-রোনকে দেখভালের জন্য সবার কাছে অনুরোধ করেন।
নিহত তাহমিনার বাবা সাহাব উদ্দিন জানান, ‘আমার মেয়েকে অনেকটা জোর করে বিয়ে করে জামাই টুটুল। বিয়ের পর আমার মেয়ে স্বামীসহ চট্টগ্রামে থাকতো। গত কয়েক বছর ধরে যৌতুকের জন্য তাহমিনাকে নির্যাতন করতো জামাই টুটুল। আমি কয়েকদফা ধার করে টাকা দিয়েছে টুটুলকে। গত কয়েক দিন পূর্বে ব্যবসার জন্য মেয়ের মাধ্যমে টুটুল ফের ২০ হাজার টাকা দাবি করে। আমি ধার করে ১০ হাজার টাকা প্রদান করে। এরপর বাকি ১০ হাজার টাকার জন্য আমার মেয়েকে নিয়মিত নির্যাতন করতো। আজ আমার মেয়েকে কুপিয়ে হত্যা করে।’
টুটুলের চাচাতো ভাই জহিরুল ইসলাম জানান, ‘টুটুলের মধ্যে কখনও খারাপ কোন আচারণ দেখেনি পরিবারের সদস্যর। সে দীর্ঘদিন ঢাকায় কাপড়ের দোকানে চাকরি করতো। করোনা ভাইরাস সংক্রমনের পরিপেক্ষিকে ঢাকায় লকডাউন দেওয়া হলে ওবায়দুল হক ফেনীর বাড়ীতে চলে আসেন। আজ দুপুরে ঘটনার সময় আমরা তার ঘরের পাশের ঘরে থাকলেও এমনটা আঁচ করতে পারিনি’।
ফেনী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সাজেদুল ইসলাম, ঘটনার পর অভিযুক্ত টুটুল ৩৩৩ তে নিজে ফোন করে পুলিশকে তার বাড়িতে যেতে বলে। পরে ৩৩৩ থেকে ফেনী মডেল থানার ডিউটি অফিসরাকে জানায়। খবর পেয়ে পুলিশ টুটুলের বাড়িতে যেয়ে টুটুলকে আটক করে। একই সাথে হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র দা ও মুঠোফোন উদ্ধার করে। পরে পুলিশ নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ফেনী জেনারেল হাসপতাল মর্গে প্রেরণ করে।
ফেনী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আলমগীর হোসেন জানান, পুলিশ প্রাথমিক ভাবে ধারণা করছে পারিবারিক কলহের জের ধরে এমন ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনয় নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি চলছে।