বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ এবং শেয়ারবাজার বিশেষজ্ঞ। ড. এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম। তিনি ২০০৭-০৮ সালের নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপনা করছেন। করোনা সংকটের প্রেক্ষাপটে গত ২৬শে মার্চ থেকে সারা দেশে অঘোষিত অবরোধ চলছে। ফলে এখন বাধ্য হয়ে হোম কোয়ারেন্টিনেই থাকতে হচ্ছে তাকে। এ অবস্থায় সারা দিন কিভাবে কাটছে, দেশের উন্নয়ন কার্যক্রম তথা সার্বিক অর্থনীতিতে করোনা ভাইরাসের প্রভাব কী পড়তে পারে এবং এই সংকট উত্তরণে করণীয় কি তা নিয়ে তিনি কথা বলেছেন মানবজমিনের সঙ্গে।

প্রথমে সময় কাটানোর প্রশ্নের জবাবে মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, সকালে উঠে নাস্তার পর চা খেতে খেতেই এক দুইটা খবরের কাগজ পড়ি।

টকশো তে যাচ্ছি না। কেউ কেউ বাসায় এসে স্বাক্ষাতকার নেয়। তাদের জন্য কিছুটা সময় দিতে হয়। এতে সারা দিন বাসায় থাকতে যে বিরক্তিভাব সৃষ্টি হয় সেটা অনেকটা কেটে যায়। কেউ আবার হোয়াটস অ্যাপে ভিডিও কলে স্বাক্ষাতকার নিচ্ছে। আবার কেউ ফোনে কমেন্ট নিয়ে স্থির ছবি দিয়ে টিভিতে অন এয়ার করছে। তিনি বলেন, দুপুরের পর কিছু সময় পড়াশুনায় ব্যস্ত থাকি। আর সন্ধায় টিভি দেখি। কিছুটা নিউজ প্রোগ্রাম দেখি। এভাবেই দিন কাটছে।

করোনাকালীন প্রণোদনা প্যাকেজ বিষয়ে মির্জ্জা আজিজ বলেন, সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজটি সার্বিকভাবে একটি কাঙ্ক্ষিত পদক্ষেপ। করোনা ভাইরাসের কারণে দেশের অর্থনীতি যে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। রপ্তানি ও প্রবাসী আয় কমার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডও মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে। তাই সার্বিক বিবেচনায় এ সময়ে এমন একটি প্রণোদনা দরকার ছিল।

তিনি বলেন, প্রণোদনা প্যাকেজের যথাযথ ব্যবহার করতে হবে। মনে রাখতে হবে, আমাদের ব্যাংকিং খাতের প্রধান সমস্যা হচ্ছে- বিশাল অংকের খেলাপি ঋণ। এই প্রণোদনা প্যাকেজের একটি টাকাও যেন খেলাপি না হয়, সে বিষয়টি নিশ্চিত করেই ব্যাংকগুলোকে ঋণ বিতরণ করতে হবে।

তবে এখন যে প্রশ্নটি সামনে চলে এসেছে সেটি হলো কারা অর্থ পাবেন, যথাযথভাবে প্রণোদনার অর্থ দেয়া হবে কি না- এসব নিয়ে সন্দেহের যথেষ্ট অবকাশ আছে। দেখা যাবে, ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে যাদের পাওয়ার কথা, তারা হয়তো না-ও পেতে পারেন। রাজনৈতিক প্রভাব বা অন্য কোনো সম্পর্কের কারণে যাদের সুবিধা পাওয়ার কথা নয়, তারাও ঋণ পেয়ে যেতে পারেন।

তিনি বলেন, আমাদের দেশে সব প্রণোদনাতেই দুর্নীতি দেখা দেয়। যতোদূর সম্ভব দুর্নীতিটা কমানোর চেষ্টা করতে হবে। এজন্য প্রশাসন এবং যারা নেতৃত্ব দেবেন, সবাই মিলে পর্যবেক্ষণ করতে হবে।

ড. আজিজুল ইসলাম বলেন, করোনা প্রভাবে আমদানি-রপ্তানি, রেমিটেন্স, রাজস্ব আহরণ, ব্যাংকিং খাতসহ সব সেক্টরের কার্যক্রমই বন্ধ রয়েছে। যার ফলে ব্যাংকের আমানত ও বেসরকারি খাতে প্রবৃদ্ধি কমে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে দেশের বিনিয়োগ বাড়াতে হবে, যোগাযোগ, এনার্জি ও পাওয়ার সেক্টর, মেগা প্রকল্পসহ চলমান প্রকল্পগুলো নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে পারলে খুব দ্রুতই বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াবে।

কৃষকদের নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক এই উপদেষ্টা বলেন, কৃষকদের ফার্মার্স কার্ড আছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সিডর পরবর্তী সময়ে কৃষকদের প্রণোদনা দেয়ার জন্য ফার্মার্স কার্ডের সিস্টেম চালু করা হয়েছিলো। সে কার্ড এখনো রয়েছে এবং সেটাকে আরো মডিফাই করা হয়েছে বলে আশা করা যায়।

তিনি বলেন, যাদের ব্যাংক একাউন্ট রয়েছে তাদের সরাসরি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাঠানো যেতে পারে, না হলে মোবাইল একাউন্টের মাধ্যমে পাঠানো যায়। এর ফলে দুর্নীতি কম হবে।  যাদের কিছু জমি আছে তাদের ফার্মার্স কার্ড থাকার কথা। যাদের একেবারেই জমি নেই, বর্গাচাষি বা অন্যের জমিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করে তাদের ফার্মার্স কার্ড নাও থাকতে পারে। বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় তাদের তালিকা রয়েছে, ফার্মার্স কার্ড না থাকলেও সেখান থেকে তাদের কাছে প্রণোদনা পৌঁছে দেয়া যাবে।

আজিজুল ইসলাম বলেন, এডিবি করোনা পরিস্থিতি বিবেচনা না করেই প্রবৃদ্ধি নিয়ে এ ধরনের প্রাক্কলন করেছে। করোন যেভাবে বিস্তার করেছে তাতে দেশ তথা বিশ্বপ্রবৃদ্ধির ওপর আঘাত আসবে এটাই স্বাভাবিক।

ড. এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম তত্কালীন ব্রিটিশ ভারতের পাবনার সুজানগরে ২৩শে ফেব্রুয়ারি ১৯৪১ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৬১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর করে যুক্তরাষ্ট্রে গমন করেন এবং সেখানকার উইলিয়ামস কলেজ থেকে উন্নয়ন অর্থনীতিতেও স্নাতকোত্তর ও বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি সম্পন্ন করেন।

তিনি ১৯৬২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। এর পরে ১৯৬৪ সালে পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে (সিএসপি) কর্মকর্তা হিসাবে নিয়োগ লাভ করেন এবং ১৯৮২ সালে জাতিসংঘে যোগ দেন। পরবর্তীতে তিনি বাংলাদেশের শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ভিজিটিং প্রফেসর। এছাড়া পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো ৩০টি কোম্পানি খুঁজে বের করার জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত ১৫ সদস্যের জুরি বোর্ডের আহ্বায়ক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।

Share Now
January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031