পাইকারী ব্যবসায়ীরা করোনার ভাইরাসের প্রভাবে পরিবহন সংকটের অজুহাতে চাষীদের কাছ থেকে কেজি প্রতি তিন টাকা এবং মণপ্রতি ১০০ থেকে ১২০ টাকা করে টমেটো কিনছেন । এ নিয়ে রাগ আর ক্ষোভে চাষীদের মাথায় হাত। অথচ ব্যবসায়ী থেকে খুচরা ক্রেতারা ক্রয় করতে হচ্ছে ৮-১০ টাকা দরে।
চাষীরা বলছেন, প্রতি বিঘা জমিতে টমেটা চাষ করতে ১ লাখ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা ব্যয় হলেও তার প্রাপ্য দাম পাচ্ছেন না। পাইকাররা বলছেন, পরিবহণ সংকট ও শহুরে ব্যবসায়ীরা কমদামে কিনছেন বলেই দাম পড়ে গেছে। আর টমেটোর মৌসুম এখন শেষের দিকে হওয়াতে চাহিদাও কম।
রবিবার মিরসরাই উপজেলার ১৫ নং ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের টমেটো চাষীদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শতকের পর শতক জমিতে টমেটো চাষীরা চাষ করলেও প্রাপ্য মজুরি হতে বি ত হচ্ছেন। অনেক চাষী ক্ষেত থেকে টমেটো তুলে পাইকারদের ভাল দামের আশায় রাস্তায় পাশে ঝুড়ি ভরে রেখেছেন আবার অনেক চাষী ক্ষোভ নিয়ে তারা পুরো জমি উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। তারা বলছেন, কেউ যদি ছিড়ে নিতে পারেন তবে নিয়ে যান। যার কোন মূল্যই পাচ্ছি না, আমরা তা ছিড়েও লাভ নেই।
তবে মিরসরাই সদর বাজারের কয়েকজন খুচরা ক্রেতা জানান, এখনো ১০ টাকার নিচে টমেটো কিনতে পারিনি। শুরু ৪০-৫০ টাকায় ক্রয় করলেও এখন ১০ টাকায় কিনতে হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবার উপজেলায় ১৪০ হেক্টর জমিতে টমেটো চাষ হয়েছে। ফলনও ভালো হয়েছে, দামও খারাফ না। কিন্তু বিগত কিছুদিন করোনা ভাইরাসের প্রভাবে দাম কমে গেছে। উপজেলার হিঙ্গুলী, জোরারগঞ্জ, দুর্গাপুর, মিরসরাই সদর, খৈয়াছড়া ও ওয়াহেদপুর ইউনিয়নে টমেটার চাষ করা হয়।
ভালো লাভের আশায় টমেটো চাষ করেন মধ্যম ওয়াহেদপুর এলাকার মোশারফ হোসেন ও শাহদাত। একই সাইফুল্লা, মো. শাহজাহান ও কাজল মিয়াও টমেটো চাষ করেন। কিন্তু মৌসুমের শেষ দিকে এসে টমেটোর দাম একেবারে কমে যাওয়ায় এখন তাদের মাথায় হাত।
চাষী মো. শাহজাহান বলেন, তিন কেজি চালের দামে এক মণ টমেটো পাওয়া যাচ্ছে। নায্য দাম না পাওয়ায় ক্ষেত থেকে টমেটো তুলছি না কেউ। এতে করে আমাদের উৎপাদিত কষ্টের ফসল জমিতেই পচে নষ্ট হচ্ছে। তাই বলে দিলাম যার যার ইচ্ছেমত জমি থেকে তুলে নিতে।
চাষী মো. মোশারফ বলেন, ৩০ শতক জমিতে টমেটো চাষ করতে খরচ হয়েছে ৬০ এক টাকার মত। অথচ এখন পর্যন্ত মাত্র ২৫ হাজার টাকার টমেটো বিক্রি করেছি। ভেবেছিলাম টমেটো বিক্রি করে সংসারের অভার দূর করবো। কিন্তু লাভ তো দূরের কথা এখন উল্টো লোকসান হচ্ছে।
তারা আরও জানান, গত সোমবারও বড়দারোগাহাট বাজারে প্রতিমণ টমেটো ১৮০ থেকে ২০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। অথচ বৃহস্পতিবার ব্যবসায়ীরা আকার দেখে ১০০ থেকে ১২০ টাকার উপরে উঠছেন না। এই টাকায় জমি থেকে টমেটো তোলা শ্রমিকের মজুরি ও পরিবহনের খরচও উঠছে না। শুরু দিকে টমেটোর বাম্পার ফলনে চাষীদের মুখে হাসি ফুটলেও শেষের দিকে এসে তাদের মধ্যে হতাশা নেমে এসেছে।
মিরসরাই উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রঘুনাথ নাহা বলেন, করোনা মহামারিতে সারাদেশ এখন লক ডাউন। তাই বেপারিরা চাহিদামত টমেটো বা সবজি কিনতে পারছেন না। অনেক সময় পরিবহনও পাওয়া যায় না। চালকরা করোনা আতঙ্কে ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। তাই পরিবহন সচল না থাকলে প্রতিটি সবজির দাম কমে যায়। করোনা আতঙ্ক এবং সবকিছু পুনরায় সচল হলে টমেটোর দাম পুনরায় উঠতে পারে। মৌসুমের শেষ পর্যায়ে বিধায় কৃষকদের আর অসুবিধা হবে না।