ঢাকা : মাদক বিক্রি ও পাচারের অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক সেলিম সিকদারের অন্যতম সহযোগী কালু মিয়া (৪০) কে।
বৃহস্পতিবার তাকে গ্রেপ্তারের পর শুক্রবার সকালে গোপনে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর মির্জাপুর কলেজের সাবেক জিএস সেলিম সিকদার উপজেলা সদরের বাওয়ার রোডের মাথায় ব্যক্তিগত অফিস নেন। টাঙ্গাইলের খান পরিবারের আশির্বাদপুষ্ট এই নেতা সেখানে স্থানীয় কয়েকজন যুবককে দিয়ে মাদকের ব্যবসা শুরু করেন। এক পর্যায়ে তিনি এলাকায় অপ্রতিরোধ্য হয়ে পড়েন।
বিকাল থেকেই শুরু হতো মাদকের রমরমা ব্যবসা। চলতো ভোররাত পর্যন্ত। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মাদক সেবীদের ভিড়ও বেড়ে যেতো। সন্ধ্যার পর বাওয়ার রোড দিয়ে নারীসহ সাধারণ মানুষের চলাচল করা দায় হয়ে যেত। টাঙ্গাইলের আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক হত্যা মামলায় সাংসদ আমানুর রহমান ও তার তিন ভাই পলাতক থাকার পর সেলিম সিকদার কিছুটা নিভৃত হন। তবে গত বছরের ২৬ এপ্রিল সেলিম সিকদারকে আহ্বায়ক করে উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করার পর তিনি আগের চেয়ে বেশি অপ্রতিরোধ্য হয়ে পড়েন। তার মাদকের রমরমা ব্যবসা আরও বেড়ে যায়।
মির্জাপুর থানা পুলিশের একটি সূত্র মতে, সেলিম সিকদারের মাদক ব্যবসা দেখভালে প্রধান দায়িত্বে ছিলেন গ্রেপ্তারকৃত কালু মিয়া। তিনি স্থানীয় কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে মাদকের ব্যবসা করতেন। মির্জাপুর পৌরসভার ওয়ার্ড কাউন্সিলর সহিদুর রহমান শিপনও সেলিম সিকদারের সঙ্গে মাদক ব্যবসায় জড়িত ছিলেন। গত ২১ জুন রাতে সহিদুর রহমান তার কথিত স্ত্রী শ্যামলী আক্তারকে নিয়ে মির্জাপুরে ইয়াবা নিয়ে আসছিলেন। এসময় গাজীপুরের কোনাবাড়ি পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই শাহীন ও রফিক তাঁদের গ্রেপ্তার করে। এছাড়া তল্লাশি করে ৫২০ পিস ইয়াবাও উদ্ধার করে।
এ খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে ওই রাতেই মির্জাপুর থানা পুলিশ সেলিম সিকদারের কার্যালয়ে হানা দেয়। ওই রাতে পুলিশ সেখান থেকে মেহেদী হাসান লাভলু নামে একজনকে হেরোইনসহ গ্রেপ্তার করে। পরদিন একই দলের আরেক মাদক বিক্রেতা নাহিদ মিয়াকে গ্রেপ্তারের পর মাদকের মামলায় (নম্বর ১৬, তারিখ ২১-০৬-২০১৬) তাঁদের দুজনকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠায় পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃত লাভলুকে পুলিশ আটকের পর সে পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে খারাপ আচরণও করে বলে অভিযোগ রয়েছে।
তাদের দুজনকে গ্রেপ্তারের খবরে সেলিম সিকদারসহ অন্যরা গাঁ ঢাকা দেন। ওই সময় মির্জাপুর থানার এক উপপরিদর্শক (এসআই) ও এক সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) এর সঙ্গে কথা হলে তাঁরা জানিয়েছিলেন, মাদক বিক্রি ও পাচারের জন্য সেলিম সিকদারের প্রধান সহযোগী কালু মিয়াকে পুলিশ খুঁজছে।
সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার পুলিশ কালু মিয়াকে গ্রেপ্তার করে। এ ব্যাপারে অভিযানে থাকা মির্জাপুর থানার এক এসআই নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, কালুকে গ্রেপ্তারের পর সেলিম সিকদার তাকে ছাড়িয়ে নিতে রাতভর মির্জাপুর থানায় অবস্থান করেন। কিন্তু পুলিশ তাকে ছাড়েনি। বরং সেলিম সিকদারকে মাদক বিক্রি কিংবা এর সঙ্গে সম্পৃক্ততা থেকে সরে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
এদিকে সেলিমের দুই সহযোগী মাদক ব্যবসায়ীসহ কাউন্সিলর শহিদুর রহমানকে গ্রেপ্তারের পর বাওয়ার রোডে থাকা সেলিমের কার্যালয় বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে এলাকাবাসীর মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসে।
বৃহস্পতিবার রাতে কালু মিয়া গ্রেপ্তারের খবরে এলাকাবাসীর মাঝে পূর্ণ স্বস্তি ফিরে আসে। শুক্রবার বিকালে বাওয়ার রোডে গিয়ে দেখা গেছে সেলিম সিকদারের ব্যক্তিগত অফিস বন্ধ রয়েছে। এছাড়া স্থানীয়দের মধ্যে ঈদের আনন্দের সঙ্গে বাড়তি আনন্দও দেখা গেছে।
এ ব্যাপারে সেলিম সিকদার এর মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করে বন্ধ পাওয়া যায়।
মির্জাপুর থানার এস আই রাজিউর রহমান কালুকে গ্রেপ্তারের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, তাকে গ্রেপ্তারের পর শুক্রবার সকালে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।