সবকিছু স্তব্ধ হয়ে গেছে মহামারি করোনায় । করোনায় মারা গেলে তার জানাজা, দাফন-কাফনেও লোক মিলছে না। সংক্রমণ ছড়ানোর গুজবে কোথাও কোথাও দাফনেও বাধা দেয়া হচ্ছে। শুধু তাই নয়, করোনার উপসর্গ নিয়ে কেউ মারা গেলেও এমন আচরণ করা হচ্ছে।

তবে এমন পরিস্থিতির মধ্যেও কিছু মানুষের দায়িত্ববোধ প্রশংসার দাবি রাখে। ফরিদপুর জেলা হাসপাতাল থেকে ঝিনাইদহ সদরের সামাদ আলী নামের একজন করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়ার পর তার মরদেহ নিজ এলাকায় নেয়া হয় শনিবার বিকালে। কিন্তু স্বজন, প্রতিবেশী করোনার ভয়ে পাশেও আসেননি। এমনকি জানাজা দেয়ার জন্যও কেউ ছিলেন না। পরে মৃত ব্যক্তির জানাজা পড়ান সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. বদরুদ্দেজা শুভ।

পরে দাফন কমিটি ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের লোকজন মিলে সামাদ আলীকে দাফন করা হয়। আর পুরো বিষয়টি উপস্থিত থেকে তদারকি করেন ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ইউএনওর জানাজা পড়ানোর ছবি ভাইরাল হয়েছে। এতে সবাই সরকারি এই কর্মকর্তার মহানুভবতাকে দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করেছেন। কেউ বলছেন, পেশাগত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে এই কাজটি উদাহরণ হয়ে থাকবে।

৩০ তম বিসিএসের প্রশাসন ক্যাডারের সদস্য বদরুদ্দোজা শুভ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। তার গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালী সদরের সবুজবাগে।

তার ব্যাচমেট ইমরান রুহুল জানাজার ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, যিনি জানাজায় ইমামতি করছেন তিনি পেশায় ইমাম নন। তিনি ঝিনাইদহ সদরের উপজেলা নির্বাহী অফিসার বদরোদ্দোজা শুভ। করোনা ভয়ে কেউ এগিয়ে না এলেও এগিয়ে এসেছেন এই কর্মকর্তা। ব্যাচমেট তোমাকে অনেক ধন্যবাদ।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বদরুদ্দোজা শুভ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘কে ছবি তুলে পরে ফেসবুকে শেয়ার করেছে জানি না। অনেক পরিচিতজনদের কাছ থেকে পরে জানতে পেরেছি। ’

তিনি বলেন, শনিবার ফরিদপুর হাসপাতাল থেকে একটি সরকারি অ্যাম্বুলেন্সে করে করোনা উপসর্গ নিয়ে এক ব্যক্তি মারা গেছেন বলে ঝিনাইদহে পাঠানো হয়। সঙ্গে মারা যাওয়া ব্যক্তির এক ভাই ছিলেন। খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথসহ আমরা যেখানে মরদেহ নিয়ে আসা হবে সেখানে উপস্থিত হই। মৃত ব্যক্তির বাসা পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের খাজুরা গ্রামে। কিন্তু তার মরদেহ নিয়ে আসার পর সবাই একরকম দৌড়ে যায়। এরমধ্যে একদিকে মাগরিবের নামাজের সময় হয়ে যাচ্ছিল, অন্যদিকে হঠাৎ ঝড় শুরু হয়। পরে দাফন কমিটির লোকজন দ্রুত জানাজা দিয়ে দাফন করার অনুরোধ করেন। কিন্তু জানাজা পড়ানোর মতো কাউকে পাইনি। পরে সবার অনুরোধে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এবং দাফন কমিটির কয়েকজনকে নিয়ে আমিই জানাজা পড়াই। পরে দাফন করা হয়। পুরো প্রক্রিয়া উপস্থিত থেকে তদারকি করেন জেলা প্রশাসক মহোদয়।

এই লোক ফরিদপুরে থাকতেন বলে জানান ইউএনও।

Share Now
January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031