সময় নষ্ট না করে এটা আগে ঠিক করুন এই মুহূর্তে করণীয়গুলো কী? মনে রাখতে হবে, এটা নতুন এক সংকট। অনেক তথ্য গোপন করা যায়। কিন্তু মহামারির তথ্য গোপন করা যায় না। সাময়িকভাবে চেষ্টা করা যেতে পারে। কিন্তু আখেরে এগুলো বুমেরাং হয়ে যায়। শতবছর পরেও গবেষণায় বেরিয়ে আসে আসল তথ্য। এতে করে জনগণের বিপদ বাড়ে।
উহানের তথ্য গোপন করে চীন এখন কড়া সমালোচনার মুখে। চীন বলেছিল, মাত্র সাড়ে তিন হাজার মানুষ মারা গেছে। এই তথ্যটা ছিলো অবিশ্বাস্য। ওয়াশিংটন পোস্ট আর বিলেতের ডেইলি মেইল হাটে হাঁড়ি ভেঙ্গে দিয়েছে। ওয়াশিংটন পোষ্ট দালিলিক প্রমাণসহ মৃত্যুর সংখ্যা ৫০ হাজার বলে জানিয়েছে। চলমান করোনা সংকট সামনে ভয়াবহ রূপ নেবে এটা কমবেশি সবাই জানেন। কিন্তু মানুষ নিশ্চিত হতে পারছেনা কীভাবে এই সংকট মোকাবেলা করা হবে। গোড়াতেই আমরা যথেষ্ট সময় পেয়েও সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারিনি। জাতিসংঘের ফাঁস হওয়া রিপোর্টকে আমরা একবাক্যে উড়িয়ে দিয়েছি। কিন্তু আমরা একবারও দেখিনি কোথায় গলদ ছিল। সময় যত গড়াচ্ছে ততই এটা পরিষ্কার- আমরা অনেকটা হাবুডুবু খাচ্ছি। কার্যত এখন দেশটা লকডাউন হয়ে গেছে। ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের অবস্থা ভয়াবহ। যেসব তথ্য আসছে তা অনেক ক্ষেত্রে প্রকাশও করা যাচ্ছেনা। এটা হঠাৎ কোন মহামারি নয়। জানান দিয়েছে অনেক আগেই। দায়িত্বশীলরা সবসময় বলেছেন, আমাদের সব আছে। কোন সমস্যা হবেনা। এখন তারা মুখ লুকাচ্ছেন। দায়িত্ব এড়িয়ে একে অপরকে দোষারোপ করছেন। বাংলাদেশে এখন সবচেয়ে আতঙ্কিত চিকিৎসকরা। খালি হাতে তাদেরকে যুদ্ধে নামিয়ে দেয়া হয়েছে। কত ডাক্তার এরমধ্যে সংক্রমিত হয়েছেন সেই তথ্য হাজির করা জরুরি। কারণ বাস্তবকে অস্বীকার করলে ফল আরও ভয়ঙ্কর হতে পারে। সামনের দিনগুলোর ভয়াবহতা অনুমান করে আমরা কয়েকটি মতামত দিচ্ছি-
১. চলমান করোনা সংকটের দুটি আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। একদিকে জীবন, অন্যদিকে জীবিকা। জনস্বাস্থ্যের বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। এখন পর্যন্ত এক্ষেত্রে যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তা উল্লেখ করার মত নয়। চিকিৎসক এবং হাসপাতালগুলোকে দ্রুত লজিস্টিক সাপোর্ট নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে সর্বশক্তি নিয়োগ করুন।
২.যারা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন তাদের চেয়ে যারা অনাহারে থাকছেন তাদের জন্য অর্থনৈতিক পদক্ষেপ আরও বেশি জোরালো করা উচিত।
৩. অত্যাবশ্যকীয় নয় এমন খাতে খরচ কমিয়ে এবং মেগা প্রকল্পগুলো বিলম্বিত করে বাজেট পুননির্ধারণ করুন।
৪. সারা দেশে পরিস্থিতির উপর নজরদারি করতে দিনরাত ২৪ ঘন্টার জন্য কেন্দ্রীয় পর্যায়ে একটি ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট ইউনিট তৈরি করুন।
৫. কর্মকর্তাদের বিশেষ দায়িত্ব পালনের ভাতা এবং তাদের জন্য বিশেষ পরিচয়পত্র ইস্যু করুন।
৬. যথাযথ পরিসংখ্যানসহ ছয় ঘণ্টা পর পর পরিস্থিতির আপডেট প্রকাশ করুন।
৭. জনগণকে আশা ও সাহস দিন। কিন্তু আমরা যে সংকট মোকাবিলা করছি এর ব্যাপ্তি ও মেয়াদ সম্পর্কে সঠিক তথ্য দিন।
৮.লকডাউন সাময়িক সমাধান। স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা এক্ষেত্রে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে।
৯.গরিবের খাদ্য যারা লুট করছে তাদেরকে কঠোর শাস্তির আওতায় আনুন।
১০. সংকট মোকাবিলায় মুখ্য ভূমিকা পালন করতে পারে বিশ্বাসযোগ্য গণমাধ্যম।