গোটা বিশ্ববাসীর নভেল করোনাভাইরাসের ঘুম হারাম । প্রাণ সংহারক এই ভাইরাস থেকে বাঁচতে বিজ্ঞানী-গবেষকরা নানা পর্যায়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিদিনই বিজ্ঞানীরা নানান আশার কথা শোনাচ্ছেন। এমন একটা সময়ে আশার কথা জানালেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের করোনাভাইরাস গবেষক অনুজীববিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. মো. আলিমুল ইসলাম।

একজন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বনামধন্য গবেষক ড. আলিমুল ইসলাম। তিনি এর আগে ডেঙ্গু, চিকনগুনিয়া, সার্স করোনা-১-সহ বিভিন্ন ভাইরাস নিয়ে গবেষণা করেছেন। ২০০৩ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অধীনেও কাজ করেছেন।

এই অনুজীববিজ্ঞানী বলছেন, ইথানলের মাধ্যমে কোভিড-১৯ ভাইরাসকে দমন করা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন। যদিও বিষয়টি নিয়ে এখনো ল্যাবরেটরিতে গবেষণা শুরু করেননি তিনি। তবে সরকার চাইলে তিনি এ বিষয়ে গবেষণা করতে প্রস্তুত আছেন।

ড. আলিমুলের ভাষ্য, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রামক রোগে ইথানল বেশ কার্যকরী। তিনি নিজেই নিজের দেহে তা প্রয়োগ করে সুফল পেয়েছেন। অধ্যাপক আলিমুল ইসলামের এক শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা নিতে জাপানে রয়েছেন। তিনিও জানিয়েছেন যে, জাপানেরও একজন গবেষক একইভাবে গবেষণা চালিয়ে সফল হয়েছেন।

করোনা আক্রান্ত মুরগির থেকে এর ভাইরাসে প্রয়োগ করে কার্যকারিতা দেখা গেছে বলে দাবি করেন এই অধ্যাপক। তার দাবি যে কোনো ভাইরাসের দুটি স্তর থাকে যা ইথানল বা সাবানে গলে যায়।

আলিমুল ইসলাম বলেন, এই ধরণের ভাইরাসে আমার যখন ইথানল ব্যবহার করবো তখন ওই তৈলটা গলে যাবে আর ভাইরাসের যাবতীয় গুণাগুন নষ্ট হয়ে যাবে। ভাইরাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে জিনিস আরএনএ সেই আরএনএটাও ধ্বংস হয়ে যাবে।

আরএনএ গোত্রের করোনাভাইরাসের বেশ কয়েকটি জাতের মধ্যে কোভিড-১৯ একটি এর আগে মুরগি আক্রান্ত হয়েছিল এভিএন ইনফেকশাস ভ্রুঙ্কাইটিস ভারসা ও ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসে ইথানল ব্যবহার করে এটি ধ্বংস করা গেছে।

এই বিজ্ঞানী আরও বলেন, এই ভাইরাসের ইনভেলাপে যে পরিমাণ লিপিডি থাকবে কোভিড-১৯, সার্স করোনা-২, সার্স করোন-১ বা মার্স করোনার একই ধরণের লিপিডি থাকবে।

আর এই অবস্থায় কিপরিমাণ ইথানল ব্যবহার করতে হবে সেসবও বাতলে দিযেছেন এই বিজ্ঞানী। তিনি বলেন, মারাত্মক গলা ব্যথা নাক দিয়ে পানি পরলে মানুষ কিন্তু অসুস্থ হয়ে যায়। সেই সময়ে ইথানল দুই থেকে তিনবার টানবে প্রতিদিন। সাধারণ ফ্লুর ক্ষেত্রে এক থেকে দুই মিনিটের মধ্যেই সেরে যাবে। আর যদি কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয় সেই ক্ষেত্রে আরো এক থেকে দুদিন বেশি লাগতে পারে।

তিনি আরও জানান, যেসকল রোগীর ইথানলে এলার্জী নাই, অ্যাজমার সমস্যা নাই, যাদের টিভি নাই, আগে থেকে হাঁপানি রোগ নাই, যাদের রেসপাইরেটরি প্রবলেম নাই এই ধরণের রোগীদের ক্ষেত্রে সরকার যদি ব্যবহারের অনুমতি দিতো তাহলে কাজে আসতো।

এই অনুজীববিজ্ঞানী ও তার আট ছাত্র গবেষণা করে সাধারণ জ্বর ও শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ইথানল ব্যবহার করে এর কার্যকারীতা পেয়েছেন বলে জানান। তিনি জানান, করোনা গোত্রের যা রাট গোত্র আছে আলফা, বিটা, গামা, ডেলটা। মানুষ যে দুইটা গোত্র দ্বারা আক্রন্ত হয় সেটা হলো আলফা এবং বিটা। আর মুরগী আক্রান্ত হয় গামা গোত্র থেকে। গামা গোত্র ভাইরাস দ্বারা মানুষ আক্রান্ত হয় না।

গৃহপালিত হাঁস মুরগিতে যে করোনা হয় সেটি কোভিড-১৯ নয়। এটা মানুষকে জানতে হবে। তা না হলে মানুষ ভুল বুঝবে হাঁস মুরগি থেকে করোনা ছড়ায়। কিন্তু এই ধরেণের কোনো রেকর্ড নেই।

কোভিড-১৯ আক্রান্ত হলে মানুষের ওপর ইথানল কিভাবে কাজ করবে জানতে চাইলে এই বিজ্ঞানী আরও বলেন, আমরা কিন্তু মুরগির ওপর এই টেস্টটা করিনি । মুরগিকে যেটা আক্রান্ত করে সেই ভাইরাসটা পরীক্ষাগারে নিয়ে আমরা সাধারণ ফ্লু এবং করোনার ফ্লুর প্রয়োগ করেছি। ইথানল ব্যবহার করে দেখেছি এক মিনিটের মধ্যে ইনভেলাপটা ধ্বংস হয়ে যায় এবং ভাইরাসটা ইনঅ্যাকটিভ হয়ে যায়।

তিনি বলেন, সাধারণ গলা ব্যথা ও জ্বর ঠান্ডা কাঁশিতে কেউ যদি বাইরে যেতে না পারে সেক্ষেত্রেও এটা প্রয়োগ করা যেতে পারে। বেশ উপকার পাবে। আমি নিজেও এটা ব্যবহার করে উপকার পেয়েছি।

কোভড-১৯ এর ক্ষেত্রে এর প্রয়োগ কি হবে প্রশ্নে তিনি বলেন, স্টেরিলাইজেশন পদ্ধতিতে তিনি ব্যবহার করেছেন তিনি কোভিডে ব্যবহার করে তিনি সফল হয়েছেন।

ড. আলিমুল বলেন, যেকোনো ভাইরাসের দুটি আবরণ থাকে। ইথানল কিংবা সাবান প্রয়োগে ওই দুটি স্তর গলে যায়। এমতাবস্থায় ধ্বংস হতে অনেকটাই বাধ্য ভাইরাসটি। বাংলদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই বিজ্ঞানী জানান, আরএনএ গোত্রের করোনা ভাইরাসের বেশ কয়েকটি জাত রয়েছে। কোভিড-১৯ তার একটি। করোনার কোনো কোনো গোত্রকে ইথানল প্রয়োগে ধ্বংস করা যায়। আরএনএ গোত্রের প্রতিটি ভাইরাসের চরিত্র প্রায় কাছাকাছি বলে ইথানলে কোভিড-১৯ সারবে বলে মনে করছেন তিনি। এক্ষেত্রে করোনা আক্রান্ত রোগী কী মাত্রায় এই ইথানল ব্যবহার করবেন সেটিও তিনি জানান। তিনি বলেন, ইথানল-মিশ্রিত কুসুম গরম পানির কুলকুচি করে বা বাষ্প টেনে এর সুফল পাওয়া যেতে পারে। ড. আলিমুল বলেন এটি কোনো চিকিৎসা নয়। চিকিৎসা সহায়ক পদ্ধতি।

তিনি বলেন, সাধারণ সর্দি জ্বর কাশি ও গলা ব্যাথাসহ শ্বাসকষ্টের রোগীরাও এটি করে ফল পেতে পারেন। করোনায় আক্রান্ত রোগীরাও এটি করে কার্যকর ফল পেতে পারেন। তবে ইথানল ব্যবহারে সরকারের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অনুমতি নিতে হবে। কারণ ক্লিনিক ও ল্যাবরেটরিতে গবেষণার কাজ ছাড়া এর ব্যবহারে অনুমতি নেই। সরকার চাইলেই এটি সম্ভব।

ড. আলিমুল বলেন, তিনি নিজে ও তাঁর আটজন ছাত্র ইথানল ব্যবহার করে এরই মধ্যে জ্বর ও সর্দি কাশিসহ শ্বাসকষ্টের সমস্যা থেকে মুক্তি পেয়েছেন। তবে ইথানল ব্যবহারে অ্যালার্জি রয়েছে এমন হৃদরোগী, অ্যাজমা ও ডায়াবেটিস রোগীদের এটি ব্যবহার বারণ বলে জানান তিনি। সরকার চাইলে এ বিষয়ে তার শিক্ষার্থীদের নিয়ে গবেষণা শুরু করব।

Share Now
December 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031