ঢাকা : রাজধানীবাসী পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে স্বজনদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ উদযাপন করতে বাড়ি ফিরছে । বিগত বছরগুলোতে দেখা গেছে ঈদে কমলাপুর স্টেশন মানে যাত্রীদের ভোগান্তির পালা। পছন্দমতো টিকিট না পাওয়া, টিকিট কালোবাজারি, ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকার মতো ভোগান্তি প্রতি বছরের চিত্র। কিন্তু অন্যান্য বারের চেয়ে এবারের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন।
এবারের ঈদে দীর্ঘ ছুটি থাকায় ঘরমুখো মানুষদের সেরকম ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে না কমলাপুর রেল স্টেশনে। আজ সোমবার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে গন্তব্যের উদ্দেশে যাচ্ছেন ২৬ জুন প্রদান করা অগ্রিম টিকিটের যাত্রীরা। আজ ভোরের ট্রেনগুলো সময়মত ছেড়ে গেলেও সকাল ৯টার পর ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয় হচ্ছে। ৯টার পর থেকে প্রতিটি ট্রেনই ছেড়েছে দেরিতে।
রেল সূত্রে জানা যায়, গতকাল রবিবারের শিডিউলে থাকা সব আন্তঃনগর ট্রেনই ঠিক সময়ে ঢাকা ছেড়েছে। তবে ঢাকা থেকে খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস ও রাজশাহীগামী ধুমকেতু এক্সপ্রেসের ঢাকা ছাড়তে একটু বিলম্ব হয়েছে।
সোমবার ৯টার আগের ট্রেনগুলো সময়মত ছেড়ে গেলেও জামালপুরের সরিষাবাড়ীগামী অগ্নিবিণা এক্সপ্রেস ট্রেন ছেড়ে যায় সাড়ে ১০টায়। অথচ সিডিউল অনুযায়ী ট্রেনটি ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে। দিনাজপুরগামী একতা এক্সপ্রেস কমলাপুর থেকে সকাল ৮টা ১০ মিনিটে ছাড়ার কথা থাকলেও সেটি সময়মত ছাড়তে পারেনি।
এ বিষয়ে ঢাকাটাইমসের সঙ্গে কথা হয় কমলাপুরের স্টেশন মাস্টার সাখাওয়াত হোসেনের। তিনি বলেন, গতকালের সব আন্তঃনগর ট্রেন সময়মতোই কমলাপুর স্টেশন থেকে ছেড়ে গেছে। তবে সুন্দরবন এক্সপ্রেস ও ধুমকেতু এক্সপ্রেস পৌঁছতে একটু বেশি সময় নিয়েছে। এছাড়া ইঞ্জিন পরিবর্তন, পরিষ্কার পচ্ছিন্নতার জন্য কিছুটা সিডিউল বিপর্যয় হচ্ছে।
এদিকে গতকাল থেকে রাজধানীতে থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ায় রাস্তায় গণপরিবহনের সংখ্যা তুলনামূলক কম। ফলে স্টেশনে পৌঁছতে যাত্রীদের কিছুটা ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। অনেককে ভেজা শরীরে কমলাপুর স্টেশনে পৌঁছতে দেখা গেছে।
কমলাপুর স্টেশনে ঘরমুখো যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাধারণত ট্রেনের সময়সূচির কোনো বিপর্যয় দেখা দিলে যাত্রীদের দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয় প্লাটফর্মে। এবার প্রায় ট্রেনই নির্ধারিত সময়ে আসায় ও ছেড়ে যাওয়ায় যাত্রীদের স্টেশনে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হচ্ছে না। সে কারণে তেমন একটা ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। তবে আজ ৯টার পর ট্রেনগুলো দেরি করে আসছে এবং ছাড়তেও কিছুটা দেরি হচ্ছে।
ফারিয়া আক্তার মৌ রাজশাহীগামী সিল্ক সিটি এক্সপ্রেসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। ক্ষোভ প্রকাশ করে ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘কয়েকদিন ধরেই সংবাদ মাধ্যমে শুনছি ট্রেনগুলো নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ছেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু এখন স্টেশনে এসে দেখি সময়মতো ছাড়ছে না। এই দীর্ঘ অপেক্ষার ফলে বিরক্ত লাগছে।’
সিলেটগামী জয়ন্তিকা এক্সপ্রেসের যাত্রী আব্দুল কাদের। তিনি সিলেট যাওয়ার জন্য দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করছেন। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘দীর্ঘ ভ্রমণের শুরুতেই দেখছি দেরি হচ্ছে। জানি না সিলেট কখন পৌঁছাতে পারবো। বিগত বছরগুলোতে যে ভিড় দেখেছি এবার সেই ভিড় না থাকায় ভালোই লাগছে।’
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের সার্বিক নিরাপত্তার ব্যাপারে ঢাকা রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল মজিদের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘কমলাপুর স্টেশনের সার্বিক নিরাপত্তায় সার্বক্ষণিক সিসি ক্যামেরা মনিটরিং করা হচ্ছে। কাউকে সন্দেহজনক আচরণ করতে দেখলে জিজ্ঞাসাবাদ করছি। এর বাইরে নিয়মিত বাহিনীর পাশাপাশি সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা আছেন। যাত্রীদের যাত্রা নিঘ্নিত করতে সবধরনের ব্যবস্থাই নেয়া হয়েছে।
অন্যান্য ঈদের মতো এবার কমলাপুরে তেমন ভিড় নেই। তবে কমলাপুর থেকে ছেড়ে যাওয়া সবগুলো ট্রেনের ভিড় স্বাভাবিক থাকলেও এয়ারপোর্ট স্টেশনে তা কিছুটা বেড়ে যায়। এছাড়া এবার স্টেশনে ভিক্ষুক ও হকারদের উৎপাতও অপেক্ষাকৃত কম। ফলে অনেকটা স্বস্তিতেই বাড়ি ফিরছেন যাত্রীরা।