ভারত সরকারের প্রতি আবদেন জানিয়েছেন নির্বাসিত বাংলাদেশী লেখিকা তাসলিমা নাসরীন প্রতিবেশী দেশগুলোর নাস্তিক ও ইসলাম ধর্মের সমালোচকদের নাগরিকত্ব দিতে। তিনি আরো তথ্য প্রকাশ করেন যে, তার আগেকার নিষিদ্ধ বই ”লজ্জা”র ধারাবাহিকতায় ” লজ্জাহীন” অচিরেই ভারতে প্রকাশ পাবে।
ভারতীয় সংবাদ সংস্থা আইএএনএস জানায়, “যদি নাগরিকত্ব সংশোধন আইন (সিএএ) প্রতিবেশী দেশগুলোর নিপীড়িতদের নাগরিকত্ব দেওয়ার বিষয়ে হয়, তবে ভারত সরকাররের প্রতি আমি প্রতিবেশী দেশগুলোর নাস্তিক ও নিপীড়িত মুসলমানদের জন্যও তা প্রসারিত করার আবেদন করছি।”
বাংলাদেশী নির্বাসিত লেখিকা তসমিলমা নাসরিন মন্তব্য করেছেন।
ঠিক যেমন হিন্দু, খ্রিস্টান এবং বৌদ্ধরা বৈষম্যমূলক আচরণের মুখোমুখি, তেমনি বাঙলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে ইসলামের সমালোচনাকারী ও নাস্তিকদের কুপিয়ে হত্যা করা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাই অবস্থাপন্ন ভুক্তভোগীরা রাজনৈতিকভাবে আশ্রয় পেতে ইউরোপ বা আমেরিকাতে বসতি স্থাপনের সুযোগ করে নেন, তবে বাদবাকিদের কী হবে? তাই এই সমস্যার সুরাহায় ভারতকে অবশ্যই এগিয়ে আসতে হবে,” মন্তব্য করেন লেখক তসলিমা নাসরিন । ‘লজ্জা’ উপন্যাসের জন্য সর্বাধিক পরিচিত এই লেখিকা, যিনি একটি “মৌলবাদী দল দ্বারা ইসলামের সমালোচনা” করার কারণে ফতোয়ার শিকার হন। ১৯৯৩ সালে ফতোয়া জারির পরে ২৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি নির্বাসনে আছেন।
তাসলিমা এখনও ইউনিফর্ম সিভিল কোডের একজন দৃঢ় সমর্থক। তার রচনা সমগ্র ৩০ টিরও বেশি ভাষায় অনুবাদ হয়েছে। তিনি আরও বলেছেন, “আসুন আমরা পরিষ্কার করে বলি, সমস্ত ধর্মই নারীবিরোধী এবং এর সমালোচনামূলক পর্যালোচনা প্রয়োজন।”
তার কথায়, বিবাহের ভিত্তিতে সমতা থাকতে হবে।

আধুনিক এই সময়ে, উত্তরাধিকার, বিবাহবিচ্ছেদ ইত্যাদির ক্ষেত্রে পুরুষদের অনুকূলে কীভাবে আপনি প্রত্নতাত্ত্বিক যুগের আইন বহাল রাখতে পারেন? “
পেশায় চিকিত্সক নাসরিন, যিনি ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ ছেড়ে পালিয়ে এসে পরের এক দশক সুইডেন, জার্মানি, ফ্রান্স এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। ২০০৪ সালে তিনি কলকাতায় আসেন। এমনকি ২০০৭ সালে তাকে পশ্চিমবঙ্গ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল।
তার প্রশ্ন: এটাকে কি অযৌক্তিক মনে হয় না যে – একজন বাঙালি লেখক, তার জায়গা হয় না পূর্বে বা পশ্চিমবঙ্গে? আমি ইউরোপ থেকে কলকাতায় চলে এসেছি বাংলা ভাষার প্রতি ভালবাসার জন্য। আমার শিকড়ের নিকটবর্তী থাকতে। এখন আমার কেমন লাগছে? আমি ”পরিত্যাক্ত”, অনুভূতি বোঝাতে এই শব্দটিই বলতে হচ্ছে। তিনি বিলাপ করেন মন্তব্য করেন।

ভারতে সম্প্রতি প্রকাশিত তাঁর বই ‘মাই গার্লহুড’ বা আমার মেয়েবেলা (পেঙ্গুইন হামিশ হ্যামিল্টন), যা বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, সম্পর্কে নাসরিন বলেন, “এটি আমার সেই সময় থেকেই শুরু হয়েছিল যখন আমার জন্ম হয়নি। আর এটির বয়ান রয়েছে আমার ১৫ বছর বয়স পর্যন্ত।” সুইডেনে থাকতে তিনি বইটি লিখেন, লস এঞ্জেলস টাইমস এটিকে শ্রেষ্ঠ ননফিকশন বলেছে।
তিনি বলেন, আমি ১৯৬৯ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে গণআন্দোলন , একাত্তরের যুদ্ধ প্রত্যক্ষ করেছি। নয় মাস কীভাবে আমাদের পরিবারকে পাকিস্তানীদের হাত থেকে বাঁচাতে গ্রাম থেকে গ্রামে চলে যেতে হয়েছিল। সৈন্যরা যেদিকেই গিয়েছিল, ধ্বংসযজ্ঞ তৈরি হয়েছিল।
“অশ্লীলতা”র অভিযোগে বাংলাদেশ তার বইটিকে নিষিদ্ধ করে। কারণ এতে তিনি তার পরিবারের এক সদস্য দ্বারা ১৫ বছর বয়সী এক কিশোরীকে যৌন হেনস্থার কথা বলেছিলেন। “সুইডেনে থাকাকালীন যে বইটি লেখা হয়েছিল, সে সম্পর্কে লেখক উক্ত মন্তব্য করেন।
নির্বাসনের এক সিকি শতাব্দী অবশ্যই নাসরিনের জন্য হোম বা ঘরের অর্থ বদলে দিয়েছে। নির্বাসনের প্রথম দিকের পাঁচ-ছয় বছর বাড়ি বলতে শারীরিক বসবাস অর্থেই ছিল। আস্তে আস্তে ‌’বাড়ি’ এমন জায়গা হয়ে উঠেছে, যা মনের ভিতরে থাকে।
“এখন বাড়ি সেটাই যেখানে থেকে আমি নিরাপদ, সুরক্ষিত এবং ভালোবাসা বোধ করি। যেখানে আছে সংহতি, শ্রদ্ধা এবং সমর্থন । শারীরিকভাবে তো বিশ্বের যে কোনও জায়গায় আপনি বসবাস করতে পারেন। এত দীর্ঘ দিন পরে, বিভিন্ন সংযোগগুলো আমার নিজের দেশ থেকেই ভেঙে পড়তে শুরু করে … বাবামা মারা গেছেন, আপনি আপনার বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ হারিয়ে ফেলেছেন … “

তবে নাসরিনের লেখার উপজীব্য অতীতের ক্ষত নয়।(” আমার গার্লহুড ” একটি স্মৃতিকথা)। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন যে তার লেখনীতে যদি আত্মজীবনীমূলক উপাদান থাকে, তাবে সেখানে তিনি সমাজ, রাজনীতি, মহিলা এবং পুরুষতন্ত্র সম্পর্কে কথা বলেছেন।
“আমি গল্পগুলি বলি, যাতে আমরা দুর্ভোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারি। আমার উদ্দেশ্য সবসময়ই এমন একটি সমাজ সম্পর্কে কথা চালিয়ে যাওয়া, যেটি হবে সদয়, উদার এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, আরও বেশি মানবিক। “

” লজ্জাহীন ” (হার্পারকোলিনস ইন্ডিয়া) তার প্রকাশিতব্য বই। এটি হবে তাঁর ” লজ্জা ” বইয়ের সিক্যুয়াল। অদূর ভবিষ্যতে বের হবে। ২০০৪ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে কলকাতায় থাকাকালীন এটি লিখেছিলেন। তিনি বলেন যে, এটি বাংলাদেশ থেকে কলকাতায় পালিয়ে আসা একটি বাংলাদেশী হিন্দু পরিবারকে নিয়ে লেখা। এই পরিবারটির কথা ‌তার ‘লজ্জা’য় ছিল।
“কলকাতায় থাকাকালীন, আমি শহরটির শরণার্থীদের অবস্থা সম্পর্কে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা পেয়েছি। আমি এটি ২০০৭ সালে শেষ করেছি। কিন্তু পরে দেশ ছেড়ে চলে যেতে হয়েছিল। যে খসড়াটি আছে, সেটি ঘষামাজা করতে দরকার ছিল ভারতের মাটিতে থাকার। আর সেকারণেই প্রকাশে তার বিলম্ব ঘটল।”

Share Now
January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031