ঢাকা : গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ অভিযোগ করে এবারের ঈদে দেশের সড়কপথে প্রায় ২২০০, নৌপথে প্রায় ১২০০, রেলপথে টিকেট কালোবাজারিরা প্রায় ৩০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নামে লুটপাট করেছে বলে অভিযোগ বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির। গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ অভিযোগ করে সংগঠনটি।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এবারের ঈদে লম্বা ছুটির কারণে ২৫ রমজান পর্যন্ত অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ে পরিবহনগুলো সুবিধা করতে না পারলেও ২৬ রমজান থেকে দেশব্যাপী বিভিন্ন গন্তব্যে বিভিন্ন পরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য ও লুটপাট শুরু হয়েছে। রিকশা, অটোরিকশা, টেম্পো, হিউম্যান হলার, বাস, মিনিবাস, লঞ্চ, ট্রলার, নৌকা, স্পিডবোট এমনকি রেলপথেও চলছে এই নৈরাজ্য। এসব নৈরাজ্য বন্ধে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি অনুরোধ জানালেও তাতে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। নামেমাত্র বিআরটিএ’র পক্ষ থেকে কিছু অভিযান এবং দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গুটিকয়েক কাউন্টারে অভিযান চালালেও এসব অভিযান নৈরাজ্য বন্ধে উল্লেখযোগ্য কোনো ভূমিকা রাখছে না। এতে করে ২৬ রমজান থেকে ঈদের দিন পর্যন্ত পাঁচ দিনে সারাদেশে প্রায় ৮০ লাখ যাত্রী এই অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্যের শিকার হচ্ছে। বিশেষত নিম্ন আয়ের লোকজন বা বেসরকারি কারখানার নিম্ন বেতনভুক্ত শ্রমজীবী-কর্মজীবী মানুষ এবং গার্মেন্টস কারখানার কম বেতনভুক্ত নারী শ্রমিকেরা এই নৈরাজ্যের শিকার হচ্ছে বলে অভিযোগ করে সংগঠনটি।
সংগঠনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী রিকশায় গন্তব্যভেদে ঈদ বকশিশের নামে ১০-১০০ টাকা পর্যন্ত, টেম্পু হিউম্যান হলারে যাত্রাপথে ১০-২০ টাকা পর্যন্ত, বাস-মিনিবাসে ১০০-৮০০ টাকা পর্যন্ত, লঞ্চে ১০০-১৫০০ টাকা পর্যন্ত, সিএনজি অটোরিকশা ও টেক্সিক্যাবে ৫০-২০০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি ভাড়া আদায়ের চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। সংগঠনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এবারের ঈদে লম্বা ছুটি কাজে লাগাতে দেশের সড়ক, রেল, নৌ ও আকাশ পথে ঢাকা থেকে ৯২ লাখ, চট্টগ্রাম মহানগর থেকে ৩১ লাখ, সিলেট থেকে ৮ লাখ, খুলনা থেকে ১২ লাখ, রাজশাহী থেকে ৯ লাখ, বরিশাল থেকে তিন লাখ মানুষ দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে যাচ্ছে। এর মধ্যে তিন লাখ যাত্রী ওমরা পালন সহ বিদেশে ঈদ ভ্রমণ করছে। এছাড়াও দেশের এক জেলা থেকে অপর জেলায় যাতায়াত করছে আরও চার কোটি ৬০ লাখ যাত্রী।
প্রতিবেদনে সংগঠনের মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী অভিযোগ করেন, ব্যবস্থাপনায় গলদ থাকায় প্রতিবছর ঈদ আনন্দ যাত্রায় দেশের যাত্রী সাধারণ ভোগান্তি, হয়রানি, ভাড়া নৈরাজ্যসহ নানাভাবে হয়রানির শিকার হয়। দেশের সব পথে গণপরিবহনের সংকটকে পুঁজি করে ঘটছে নানা অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা ও হয়রানি। প্রকৃতপক্ষে ঈদের এই পাঁচ দিনে দেশের সব পথে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় প্রায় ১০ গুণ বেশি যাত্রী যাতায়াত করে থাকে। এতে গণপরিবহনের চাহিদার বিপরীতে বিশাল ঘাটতি সামাল দিতে গিয়ে সরকার, প্রশাসন, পুলিশ, মালিক সমিতি, শ্রমিক সমিতির নেতৃবৃন্দকে গলদঘর্ম হতে হয়।
তিনি আরও বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশে আমরা অনেক পথ এগিয়ে গেলেও ঈদের টিকিট কাটতে কমলাপুর স্টেশনে বা গাবতলীতে এখনো রাতের পর রাত পার করতে হয়। রিটার্ন টিকেটের জন্য ঈদের আনন্দ নষ্ট করে কাউন্টারে কাউন্টারে ঘুরতে হয়। তিনি ডিজিটাল পদ্ধতিকে যাত্রী সাধারণ দোরগোড়ায় টিকিট ইস্যুর দাবি জানান।