ভাইরাস প্রতিরোধের কয়েকটি পদক্ষেপের মধ্যে অন্যতম সোশ্যাল দূরত্ব বজায় রাখা গ্রামের বয়বৃদ্ধরা তোয়াক্কা করছেন না। মহামারি করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সারাদেশে যখন চলছে এক অঘোষিত লকডাউন তখন গ্রামের মানুষের অবস্থা কী?
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে গ্রামের মানুষের মধ্যে সচেতনতা কেমন? জানতে চেয়ে ফোন করেছিলাম যশোরে আমার বন্ধু রাজের কাছে। বন্ধু একবুক আফসোস ও হতাশা নিয়ে বলেন, ‘কোনোভাবেই বাবাকে বাড়ির বাইরে যাওয়া বন্ধ করা যাচ্ছে না। তিনি হাটবাজারে যাচ্ছেন, মোড়ের দোকানে যাচ্ছেন। গ্রামের চায়ের দোকানে প্রায় দশ বিশ জনের ভিড় লেগেই আছে।
করোনাভাইরাস সম্পর্কে অনেক বুঝিয়েও লাভ হচ্ছে না। তার ধারণা এটি শহরের মানুষের মাঝে ছড়াচ্ছে। গ্রামে নয়। এটি যে অত্যন্ত ছোঁয়াচে রোগ। আর এটি হলে বয়স্করাই বেশি মারা যাচ্ছে বলার পরেও তেমন কর্ণপাত করছে না।
এমন অবস্থায় পুলিশ বা সেনাবাহিনীর সামনে পড়ার কথা জানিয়ে বন্ধু রাজ বলেন, যদি পুলিশ বা সেনাবাহিনীর সামনে একবার পড়ত তাহলে শিক্ষা পেত।
এদিকে বরিশালের আমার এক ছোট ভাই মাহফুজুর রহমান আপন বলেন, ‘ আব্বাকে কোনোভাবেই ঘরে রাখা যাচ্ছে না। নিয়মিত মসজিদে নামাজ পড়তে যাচ্ছেন। অনেক বুঝিয়েও কাজ হচ্ছে না।
খুব টেনশনে আছি উল্লেখ করে আপন বলেন, আমাদের গ্রামে আমেরিকা ফেরত প্রবাসীর করোনা ভাইরাস ধরা পড়েছে। তিনি এখন আইসোলেশনে আছেন ঢাকাতে। এই প্রবাসীর মাধ্যমে যে কতজনের ছড়িয়েছে তা আল্লাহ্ মাবুদই জানেন।
আজ দুদিন হলো আমার ছোট ভাই জ্বর ও কাশিতে ভুগছেন। খুব ভয় হচ্ছে । গ্রামের মানুষের মধ্যেও তেমন সচেতনতা নেই। সবাই যে যার মত কাজ করছেন। চলাফেরা করে বেড়াচ্ছেন।
অন্যদিকে ঝিনাইদহে আমার ছোটভাই মুহিবের কাছ থেকে জেনেছি- পুলিশ গ্রামের স্কুলের মাঠে বিকেলে এসে ধাওয়া দিয়ে গেছে। বিকেলে খেলার মাঠে সব খেলায় মেতেছিল।
আবার মসজিতে সবাই নামাজ পড়তে যাচ্ছে। গ্রামের চায়ের দোকানগুলোতেও চলছে চা বিড়ি খাওয়ার সঙ্গে করোনা নিয়ে আলাপ। খোশগল্পে মেতে আছেন।
কেউ কেউ মাস্ক পরলেও অনেকেই পরছেন না। হাত ধোয়ার ক্ষেত্রে বাচ্চাদের নিয়ে রীতিমত বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে।
মৌলভীবাজারের বন্ধু জাহাঙ্গীর বলেন, এদিকে গ্রামের ভেতরে মানুষ চলাফেরা করলেও শহরের দিকে তেমন কেউ চলাচল করছে না। মুরুব্বিরা আর কিছু না করলেও মসজিদে নামাজ পড়তে যাচ্ছেন।
সিলেটের বন্ধু রাজু আহমেদ বলেন, বাজারঘাট সব বন্ধ। আমরা বাড়িতেই অবস্থান করছি। এদিকে ওষুধ ও মুদি দোকান বাদে সবকিছু বন্ধ রয়েছে। তবে একদম খেঁটে খাওয়া মানুষ কাজের সন্ধানে বাড়ির বাইরে যাচ্ছেন।
হবিগঞ্জের ছোট ভাই তানভীর সোহাগ বলেন, গ্রামের মানুষেরা স্বাভাবিকভাবেই চলাফেরা করছেন। তবে কিছুটা সচেতনতা বেড়েছে। বাজারের দোকানপাট সব বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজন ছাড়া আমরা এখন আর কেউ বাইরে যাচ্ছি না। খেলাধুলা বন্ধ। পুলিশ এসে টহল দিচ্ছে।
কোটচাঁদপুরে সদর হাসপাতালে স্বামী-স্ত্রী মিলে ভ্যানে চড়ে যাচ্ছিলেন। পুলিশ পথে ভ্যান আটকিয়ে অনেক জেরা করার পর ছেড়ে দিয়েছে বলে জানান মানিক মিয়া। কতদিন এরকম অবস্থা থাকবে পারে জিজ্ঞাসা করেন তিনি।
ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা সেবা নেওয়ার অভিজ্ঞতা জানিয়ে মানিক মিয়া বলেন, আমার জ্বর কাশির কথা শুনে ডাক্তার দূরত্ব বজায় রেখে আমাকে দেখলেন। মোটেও কাছে আসেননি। এখন তো মনে হচ্ছে করোনাভাইরাস মারাত্বক। এতোদিন তেমন করে ভাবিনি বলেও জানান মানিক মিয়া।