পবিত্র লাইলাতুল মিরাজ সারা দেশে আজ পালিত হবে । প্রতিবছর ২৬ রজব দিবাগত রাতে পালিত হয় পবিত্র এ রজনী। বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ (দ) নবুওয়াত লাভের একাদশ বর্ষে এই রাতে মহান আল্লাহর বিশেষ মেহমান হিসেবে ঊর্ধ্বাকাশে (আরশে আজিমে) আরোহণ করেন এবং আল্লাহর সাক্ষাত লাভ করেন। এ রাত পবিত্র ও মহান আল্লাহর অফুরন্ত রহমত-বরকতে সমৃদ্ধ। বিশ্ব মুসলিমের কাছে এ রাতের তাৎপর্য অপরিসীম। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশে পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত, মিলাদ মাহফিল, নফল রোজা ও নফল নামাজ আদায়ের মধ্য দিয়ে মুসলমানরা শবে মিরাজ পালন করে থাকেন। তবে, সারাদেশে করোনাভাইরাসের কারণে জনসমাগম নিষিদ্ধ থাকায় অনেকস্থানেই নির্ধারিত কর্মসূচি সীমিত করা হয়েছে। মসজিদে নামাজ শেষ করে বাসায় একাকী ইবাদতে মগ্ন থাকার জন্য পরার্মশ দিয়েছেন ইসলামী ব্যক্তিত্বরা।
৬২০ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ রজব দিবাগত রাতে মহানবী (দ) আল্লাহর সান্নিধ্যে লাভে মিরাজ গমন করেন। পবিত্র কুরআনের সূরা বনি ঈসরাইল ও সূরা নজমের আয়াতে, তাফসিরে এবং সব হাদিস গ্রন্থে মিরাজের ঘটনার বর্ণনা রয়েছে।
জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলীয়া মাদরাসা অধ্যক্ষ হযরতুল আল্লামা মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ অছিয়র রহমান বলেন, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র মিরাজ হচ্ছে আল্লাহর মহিমা ও কুদরাতের বহিঃপ্রকাশ। আল্লাহ পাক মিরাজের মাধ্যমে তাঁর হাক্বীকত উন্নত মর্যাদায় অভিষিক্ত করেন। মিরাজ রজনীতে মুসলমানদের প্রধান ইবাদত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হয়। তাই হাদীস শরীফে বলা হয়েছে ‘আস্‌সালাতু মিরাজুল মুমিনীন’। নামাজ মুমিনদের মিরাজ স্বরূপ। মিরাজ শরীফকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে। মক্কার হেরেম শরীফ থেকে বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত সফর হচ্ছে ইসরা আর বায়তুল মুকাদ্দাস হতে সরাসরি সপ্তম আসমান অতিক্রম করে সিদরাতুল মুনতাহা হয়ে আল্লাহ পাকের সান্নিদ্ধ পর্যন্ত গমনকে মিরাজ বলা হয়। এ রাত্রে সাইয়্যেদুল মুরসালীন ও খাতেমুন নাবীয়ন হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বায়তুল মুকাদ্দেসে সকল নবী ও রসূল আলায়হিমুস্‌ সালাম সাথে নিয়ে নামাজের জামাতে ইমামতি করেন। পরে হুযুর করীম (দ) সপ্তম আসমান পাড়ি দিয়ে আরশ মোবারকে উপস্থিত হন এবং আল্লাহ তা’য়ালার সাথে দিদার করেন। যেটা আর কোনো নবীর বেলায় হয়নি। আল্লাহ পরওয়ারদেগারের অনুগত বান্দা হিসাবে মিরাজের সৃষ্ট উপহার পাঁচওয়াক্ত নামাজের প্রতি আমাদের সবাইকে অত্যন্ত যত্নশীল হতে হবে।
খ্যাতিমান এ ইসলামী স্কলার বলেন, পবিত্র এ রাতে মানুষকে আল্লাহর দরবারে বেশি বেশি ইস্তেগফার ও দরুদ শরীফ পাঠ করতে হবে। কেননা, তওবার মাধ্যমে এবং দরুদ শরীফ পাঠের মাধ্যমে আল্লাহর রহমত নাযিল হয়, আর যেখানে আল্লাহর রহমত থাকে সেখানে বিপদ আপদ দূর হয়ে যায়। আমাদের মনে রাখতে হবে, আল্লাহর অনুগ্রহ ছাড়া বাঁচা যাবে না।
নগরীর মোমিন রোডস্থ কদম মোবারক শাহী জামে মসজিদের খতিব আল্লামা বদিউল আলম রিজভী বলেছেন, দেশের এ পরিস্থিতিতে মানুষকে বেশি বেশি আল্লাহর অনুগ্রহ কামনা করতে হবে। স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সরকারের নির্দেশনা মেনে চলে আল্লাহর দরবারে বিগত জীবনের গুনাহ থেকে মুক্তির জন্য প্রার্থনা করতে হবে। বেশি বেশি নফল নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, দরুদ শরীফ পাঠ, খতমে ইউনুস পাঠসহ নফল ইবাদতে মনোযোগ বাড়াতে হবে।
পবিত্র লাইলাতুল মিরাজ উপলক্ষে নগরীর বলুয়ার দিঘী পাড়স্থ খানকায়ে ক্বদেরিয়া ছৈয়্যদিয়া তৈয়াবিয়ায় পবিত্র মিরাজুন্নবী (দ.) উপলক্ষে রাত ৯ টায় এশা’র নামাজের পর পবিত্র কোরআন মজিদ তেলোওয়াত, পবিত্র নাতে রাসূল (দ), পবিত্র খতমে গাউছিয়া শরীফ এবং আলোচনা সভা, সালাতু-সালাম বিশেষ মোনাজাত এবং রাত ২টায় জামায়াতে তাহাজ্জুদের ১২ রাকাত নামাজ, মিলাদ মাহফিল ও আখেরী মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে।

Share Now
January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031