‘মিথ্যা’ মাদক মামলায় ফাঁসানো হয়েছিল খুলনার স্থানীয় দৈনিক খুলনাঞ্চল পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার এমএ জলিলকে। আদালত ওই মামলা থেকে তাকে অব্যাহতি দিয়েছে। একইসঙ্গে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
বুধবার দুপুরে খুলনা জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইবুনালের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মো. সাইফুজ্জামান হিরো এই আদেশ দেন।
যাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তারা হলেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর খুলনার গোয়েন্দা পরিদর্শক পারভীন আক্তার ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা একই অধিদপ্তরের ক-সার্কেলের পরিদর্শক হাওলাদার মো. সিরাজুল ইসলাম। এদের বিরুদ্ধে মানহানি ও ক্ষতিপূরণের মামলারও নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
আদালতের উচ্চমান বেঞ্চ সহকারী মো. ছায়েদুল হক শাহিন জানান, বুধবার ছিল ওই মামলার চার্জ গঠনের জন্য নির্ধারিত দিন। মামলার আসামিপক্ষ মামলা থেকে অব্যাহতি পেতে আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের চার্জ গঠন বিষয়ে শুনানি শেষে বিচারক এই আদেশ দেন।
আদেশে বিচারক উল্লেখ করেন, এমএ জলিলের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে চার্জ গঠনের মূল উপাদান প্লেস অব অকারেন্স (অপরাধ সংগঠনের স্থান) নেই। এ কারণে আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের আইনগত কোনো সুযোগ নেই। তদন্ত কর্মকর্তা তার রিপোর্টে আসামির বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে বলে উল্লেখ করছেন। কিন্তু আসামির দখল ও হেফাজত থেকে কথিত মাদক উদ্ধার ও জব্দ করার বিষয় প্রমাণিত হয়েছে, এ ধরনের কিছু উল্লেখ করেননি।
এ ছাড়া বাদী তার এজাহারে উল্লেখ করেছেন সাংবাদিকতার আড়ালে আসামি এমএ জলিল দীর্ঘদিন ধরে ফেনসিডিল ক্রয়-বিক্রয় করে আসছেন। তদন্ত রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে আসামি এমএ জলিল একজন কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী। কিন্তু তদন্তকারী কর্মকর্তা কী কী দালিলিক এবং মৌখিক সাক্ষ্যেরভিত্তিতে আসামিকে কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে উল্লেখ করেছেন তা রিপোর্টে উল্লেখ বা ব্যাখ্যা করেননি।
আদালত জানায়, এজাহারকারী ও তদন্ত কর্মকর্তা পরিকল্পিতভাবে অসৎ উদ্দেশ্যে এমএ জলিলকে মাদক মামলায় ফাঁসানোর জন্যই মিথ্যা মামলা ও তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করেছেন।
মামলার এজাহারকারী পারভীন আক্তার ও তদন্ত কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে আসামি এমএ জলিলকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের জন্য দেওয়ানি আদালতে এবং মানহানিজনিত কারণে ফৌজদারি আদালতে মামলা করতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে আদালতের আদেশের অনুলিপি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও খুলনার অতিরিক্ত পরিচালক বরাবর পাঠানোর আদেশ দেন।
গত বছরের ৭ জুলাই সকালে খুলনা নগরের সদর থানার মুসলমানপাড়া এলাকার সাংবাদিক এমএ জলিলের বাড়িতে অভিযান চালায় খুলনা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। এ সময় তার বাড়ির পাশের একটি নালা থেকে ১০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার দেখিয়ে তাকে আটক করে নিয়ে যায়। ওই ঘটনায় একই দিন খুলনা সদর থানায় মামলা করেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের গোয়েন্দা পরিদর্শক পারভীন আক্তার। তদন্তকারী কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম ২৮ আগস্ট আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।
সাংবাদিক জলিল ঘটনার সময় খুলনা প্রেসক্লাবের সহকারী সম্পাদক ছিলেন। এছাড়া তিনি খুলনা ক্রাইম রিপোটার্স অ্যাসোসিয়েশনের কোষাধ্যক্ষ। তাকে গ্রেপ্তার করার পর খুলনায় কর্মরত সাংবাদিকরা মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধনসহ প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছিলেন।