ঢাকা : স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুর মৃত্যু এবং গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে টানা ১৪ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের ঘটনায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন পুলিশ কর্মকর্তা এসপি বাবুল আক্তার। এখন তিনি শ্বশুরবাড়িতেই থাকছেন। তবে কোনো সাংবাদিকের সঙ্গে দেখা করছেন না কিংবা ফোনও ধরছেন না।
সোমবার বাবুল আক্তারের শ্বশুর পুলিশের সাবেক পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন এসব কথা জানান।
খিলগাঁও থানার মেরাদিয়া ভূঁইয়াপাড়ার ২২০/এ নম্বরে বাবুলের শ্বশুরবাড়ির সামনে তিনজন পুলিশের সদস্য প্রহরায় নিয়োজিত। এই বাড়িতেই আছেন বাবুল আক্তার। দরজা নক করলে দরজা খোলেন বাড়ির কাজের লোক। সাংবাদিক পরিচয় দেয়ার ড্রয়িং রুমে নিয়ে বসানো হয় এই প্রতিবেদককে।
একটু পর বাবুল আক্তারের শ^শুর মোশাররফ হোসেন আসেন ভেতর থেকে। পরিচয়ের পর তিনি জানান, বাবুল আক্তার এই বাড়িতেই আছেন। তবে বাইরের কারো সঙ্গে দেখা করছেন না তিনি।
বাবুল আক্তার ও তার সন্তানদের ব্যাপারে জানতে চাইলে মোশাররফ হোসেন বলেন, মিতুর মৃত্যুর পর তার ছেলে আক্তার মাহমুদ মাহির (৭) ও মেয়ে তাবাসসুম তাজনীন তাপু (৪) মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাদের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ দেখানো হচ্ছে। যেদিন বাবুলকে ডিবি পুলিশ ডেকে নিয়ে যায়, ওই দিন তাদের ডাক্তারের কাছে যাওয়ার অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছিল। কিন্তু যেতে পারেনি।”
মিতুর বাবা বলেন, “বাবুল এখন মানসিকভাবে অনেকটাই ভেঙে পড়েছে। একে তো তার স্ত্রী মারা গেছে, অন্যদিকে ছোট দুটি বাচ্চাকে নিয়ে চিন্তা। আপনারা সাংবাদিকরা হেল্পহ্যান্ড। আপনাদের মাধ্যমে আমি আমার মেয়ে হত্যার ন্যায়বিচার চাই।”
মিতু হত্যাকা-ে বাবুল আক্তারকে জড়িয়ে যেসব কথা শোনা যাচ্ছে সেগুলো তারা বিশ^াস করেন না বলে জানান মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, “ওদের দাম্পত্য জীবনে কোনো কলহ কিংবা অবিশ^াস ছিল না। ফলে বাবুলের পক্ষে এসব করা সম্ভব নয়। তার পরও আপনি বাবুলের মোবাইল ফোনের নম্বর নিয়ে যোগাযোগ করে দেখতে পারেন।” বলে তিনি বাবুলের ফোন নম্বর দেন।
এরপর একাধিকবার বাবুল আক্তারের মোবাইল ফোনে যোগোযোগের চেষ্টা করলেও তিনি সাড়া দেননি।
গত ৫ জুন ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে গিয়ে বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতু চট্টগ্রামের জিইসি এলাকায় দুবৃত্তদের ছুরিকাঘাত ও গুলিতে খুন হন। এ ঘটনায় বাবুল আক্তার বাদি হয়ে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। এরপর পুলিশ কয়েকজন সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করে। কিন্তু কোনো কূল করতে পারেনি।
হঠাৎ গত শুক্রবার ( ২৪ জুন) দিবাগত রাত পৌনে দুইটার দিকে শ্বশুরবাড়ি থেকে বাবুল আক্তারকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা কার্যালয়ে (ডিবি) নিয়ে যান মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার ও খিলগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। সেখানে তাকে টানা ১৪ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। শনিবার বিকালে বাসায় ফেরেন বাবুল আক্তার।
এর মধ্যে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে মিতু হত্যায় বাবুল জড়িত সন্দেহে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই গুঞ্জন আরও ডালপালা মেলে যখন শনিবার দুপুর পর্যন্ত বাবুলের অবস্থান সম্পর্কে কারও কাছে নিশ্চিত কোনো তথ্য ছিল না।
সর্বশেষ শনিবার রাতে মহসিন ও আনোয়ার নামে আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদে তাদের মিতু হত্যায় সংশ্লিষ্টতার তথ্য পায় পুলিশ। রবিবার তাদের আদালতে পাঠালে মুখ্য মহানগর হাকিম হারুন অর রশিদের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় দুজন।
এদিন চট্টগ্রামের মহানগর পুলিশ কমিশনার সাংবাদিকদের জানান, ওই দুজন ভাড়াটে খুনি। এই হত্যাকাণ্ডে সাত-আটজন জড়িত। তাদের নির্দেশদাতার খোঁজ চলছে। তদন্ত শেষ হলে সবকিছু জানানো হবে।
তিনি আরও জানান, এ হত্যাকাণ্ডে জঙ্গিসংশ্লিষ্টতার বিষয়টি চূড়ান্ত নয়।
এমন পরিস্থিতিতে মিতু হত্যাকাণ্ড নিয়ে এখনো ধূম্রজাল চলছে। বিভিন্ন মহল থেকে বাবুলের প্রতি সন্দেহের তীর ছোড়া হচ্ছে।