চট্টগ্রাম : গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন। ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারী লালদিঘী ময়দানে আওয়ামীলীগ সভানেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশে গুলি বর্ষণ করে ২৪জনকে হত্যার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় রবিবার আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন
চট্টগ্রামের বিভাগীয় স্পেশাল জজ মীর রুহুল আমিনের আদালতে বেলা ১১ টা থেকে সাক্ষ্য দেন ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন। এসময় তাকে আসামী পক্ষের আইনজীবিরা জেরা করেন।
বিভাগীয বিশেষ আদালতের পিপি এডভোকেট মেজবাহ উদ্দিন জানিয়েছেন, সাক্ষ্যতে মোশারফ হোসেন ২৪ জানুুয়ারী ১৯৮৮ সালে সংগঠিত হত্যা কান্ডের বর্ণনা দেন, তৎকালীন পুলিশ কমিশনার রকিবুল হুদার নির্দেশে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে শেখ হাসিনার গাড়ী বহরের উপর বিনা উস্কানীতে গুলি চালানো হয়, যাতে নাম জানা ২৪জন নিহত হয়।”
এই মামলার মোট ৭০জন সাক্ষীর মধ্যে ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন ৩৭তম সাক্ষী, তাকে আসামী পক্ষের আইনজীবিরা তাকে জেরা করেন, উল্লেখ করেন তিনি।
মেজবাহ উদ্দিন অারো জানান, “সাক্ষ্য চলাকালে এই মামলার সাত আসামীর মধ্যে ৫জন আদালতে হাজির ছিলো, প্রধান আসামী রকিবুল হুদা সময় প্রার্থনা করেন এবং অপর আসামী জেসি মন্ডল পলাতক আছেন।
আদালত সূত্রে জানাগেছে, সাক্ষ্যতে মোশারফ হোসেন বলেছেন, আওয়ামীলীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে ট্রাকে করে লালদীঘির পাড়ের সমাবেশের উদ্দেশ্যে অা সতেছিলেন। আমি প্রথমে এই ট্রাকে থাকলেও পরবর্তীতে নেমে আমি সুজনের (খোরশেদুল আলম সুজন) মোটরসাইকেলে উঠে ট্রাকের আগে আগে যাচ্ছিলাম। কোতোয়ালি মোড় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মাঝামাঝিতে আসার পর নির্বিচারে গুলি করা হয়।
এরশাদ সরকারের পতন হলে ১৯৯২ সালের ৫ মার্চ ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষ থেকে প্রয়াত আইনজীবী শহীদুল হুদা বাদি হয়ে চট্টগ্রাম মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় হত্যাকান্ডের সময় চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ (সিএমপি) কমিশনারের দায়িত্বে থাকা মীর্জা রকিবুল হুদাকে প্রধান আসামি করা হয়। মামলার আসামিরা সরকারি কর্মচারি হওয়ায় এবং মামলা চালানোর জন্য সরকারের অনুমতি না মেলায় আদালত মামলাটি ওই সময় খারিজ করে দেয়। পরবর্তীতে বাদিপক্ষ উচ্চ আদালতে রিভিশন মামলা দায়ের করলে মামলাটি তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সিআইডির ওপর দায়িত্ব পড়ে।
মূলত ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ সরকার গঠন করলে বহুল আলোচিত এই হত্যা মামলাটি পুনরুজ্জীবিত হয়। আদালতের নির্দেশে সিআইডি দীর্ঘ তদন্ত শেষে প্রথম দফায় ১৯৯৭ সালের ১২ জানুয়ারি সিএমপির তৎকালীন কমিশনার মীর্জা রকিবুল হুদাকে এবং পরবর্তীতে ১৯৯৮ সালের ৩ নভেম্বর দ্বিতীয় দফায় অধিকতর তদন্তের মাধ্যমে মীর্জা রকিবুল হুদাসহ ৮ পুলিশ সদস্যকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশীট দাখিল করে।
আদালতে দুই দফায় আলোচিত এ মামলার চার্জ গঠন (দ্বিতীয় দফায় সংশোধিত আকারে) করা হয়। প্রথম দফায় ১৯৯৭ সালের ৫ আগষ্ট এবং দ্বিতীয় দফায় ২০০০ সালের ৯ মে ৮ আসামির বিরুদ্ধে দন্ডবিধির ৩০২/২০১/১০৯/৩২৬/৩০৭/১১৪/৩৪ ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়।
ইতিহাসের নৃশংসতম চট্টগ্রাম গণহত্যা মামলাটি প্রায় ২৮ বছর চট্টগ্রামের প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন থাকার পর গত জানুয়ারিতে সেটি পাঠানো হয়েছে বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে।