আগুনে বেশির ভাগ বাসিন্দাদের ঘরের মালামাল পুড়ে গেছে রূপনগর বস্তিতে । কারও কারও ঘরের সব মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। কেউবা কিছু কিছু মালামাল বা দামি জিনিসপত্র বের করতে পেরেছেন। তবে আগুন থেকে বাঁচিয়ে আনা সেই মালামালই নিয়ে গেছে চোর। বস্তির বাসিন্দারা যখন ঘরের মালামাল বের করে আনতে ব্যস্ত, তখন তাদের শেষ সম্বলটুকুও চুরি গেছে অনেকের।
বুধবার সকাল পৌনে দশটায় রাজধানীর রূপনগর বস্তিতে আগুনের সূত্রপাত হয়। তিন ঘন্টার বেশি সময় ধরে আগুনে দেড় হাজারের বেশি ঘর পুড়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সাংসদ ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, আগুন লাগার ঘটনার সময় বস্তির অধিকাংশ বাসিন্দাই যে যার মতো কাজে ব্যস্ত ছিলেন। আগুনের খবর পেয়ে ছুটে এসে দেখতে পান, দাউ দাউ করে জ্বলছে বস্তি। যাদের ঘরে তখনো আগুন লাগেনি, তারা মালামাল সরিয়ে নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ঘর থেকে মালামাল এনে রাখেন পাশের রাস্তায়। কিন্তু সেখানেও ভাগ্য সহায় হয়নি। আগুনের হাত থেকে মালামাল বের করে আনতে পারলেও রক্ষা হয়নি চোরের থেকে। বস্তির অন্তত অর্ধশত পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা ঘর থেকে যেটুকু মালামাল বের করে নিয়ে আসতে পেরেছিলেন, তার মধ্যে থাকা দামি মালামাল চুরি হয়ে গেছে।
গৃহকর্মী হিসেবে বাসাভাড়িতে করেন শামসুন নাহার। প্রতিদিনের মতো সকালে কাজে চলে যান। সেখান থেকে মুঠোফোনে জানতে পারেন বস্তিতে আগুন লেগেছে। ছুটে এসে দেখতে পান তখনো তার ঘরে আগুন লাগেনি। ফলে তাড়াহুড়ো করে ঘরের মালামাল বের করতে শুরু করেন। সব জড়ো করে রাখেন ১২ নম্বর সড়কের রাস্তার পাশে। বেশির ভাগ মালামাল বের করতে সক্ষম হন তিনি। সেখামে মালামাল রেখেছিলেন, কিছুক্ষণ পর সেখানে দেখতে পান, কিছু জামা-কাপড় ছাড়া দামি কোনো মালামাল নেই। সব চোর নিয়ে গেছে।
মধ্য বয়সী এই নারী কান্না ভেজা কন্ঠে বলেন, ‘অনেক কষ্টের জিনিস বাবা! বহু কষ্টে কিনছিলাম। সব চোরে নিয়া গেছে।’ ১৩ বছর বয়সে বিয়ে হয়েছিল শামসুন নাহারের। বিয়ের সময় বাবা একটি স্বর্নের নাকের ফুল দিয়েছিলেন। বাবাও মারা গেছেন বছর পাঁচেক আগে। ২১ বছর আগলে রাখার পর বাবার দেয়া সেই নাকের ফুলটি আজ হারিয়ে ফেলেছেন তিনি। মালামাল বের করার তোড়জোরের মধ্যে তার নাক ফুলটি হারিয়ে যায়।
আগুনে না পুড়লেও মালামাল খুইয়েছেন জহুরা বেগম। ১২ নম্বর সড়কের মার্কেটের সামনে রাখা বড় হাড়ি-পাতিল সব চোর নিয়ে গেছে।
আগুন লাগার পর ঘরের টিভি-ফ্রিজ, খাট নিয়ে মূল সড়কে রাখেন রোকন নামের একজন। তার খোয়া গেছে টিভি, ফ্রিজ আর খাট। মালামালগুলো রাস্তায় একে একে রেখে এসে অন্য মালামাল বের করার ফাঁকে চুরি হয়ে গেছে সব কিছু। রোকন বলেন, ‘মানুষ এতো খারাপ! আমার টিভি-ফ্রিজ আর খাটটা আইনা রাস্তায় রাখলাম। সব নিয়া গেছে।’
একইভাবে ৩২ ইঞ্চি এলইডি টিভি চুরি হয়েছে বস্তির বাসিন্দা গার্মেন্টস কর্মী সুফিয়া বেগমের। রান্নার হাড়ি-পাতিল আর ফ্যান চুরি হয়েছেচ রিকশা চালক আব্দুল আউয়ালের। তিন বস্তা বড় আকারের পাতিল চুরি গেছে বস্তির মজিবরের বাড়ির ভাড়াটিয়া ঝর্ণা বেগমের।
টাকা-পয়সা চুরি গেছে সবুজা বেগমের। ঢাকা টাইমসকে তিনি বলেন, ‘ঘরে আর কেউ ছিল না। একাই ঘরের মালা সামান বাইর করতে ছিলাম। আমি মাল সামানা নিয়া বাইরে আসছি, চোর ঘরে ঢুইকা টাকা-পয়সা সব নিয়া গেছে।’