মোহাম্মদ রায়হান। একটি বাস পরিবহনের লাইনম্যান। দীর্ঘদিন ধরে আছেন এ পেশায়। তাই পরিবহন সেক্টরে বেশ পরিচিত তিনি। বেড়াতে ভালোবাসেন, তাই প্রায় যান কক্সবাজার, টেকনাফ ও বান্দরবান। বাস ভাড়া করে পরিচিতদের সঙ্গে নিয়ে প্রায় বেরিয়ে পড়েন ভ্রমণে। গত নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চারবার গেছেন কক্সবাজার-টেকনাফ। প্রতিবার সেখানে থেকেছেন চার-পাঁচ দিন। উপলক্ষ পিকনিক। ভ্রমণে খরচের তিন ভাগের একভাগ দিতেন নিজেই। খরচ কম হওয়ায় অন্যদের তার সঙ্গে বেড়ানোর আগ্রহ বেশি।
বেড়াতে যাওয়ার ছদ্মবেশে প্রতিবারই ইয়াবার বড় চালান আনতেন রায়হান। কিন্তু সঙ্গে থাকা কাউকে টের পেতে দেননি তা। পিকনিকের বাসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তল্লাশি কম, তাই এই পন্থা বেছে নিয়েছিলেন তিনি। চারবার ইয়াবাসহ ধরাও পড়েছেন। সবশেষ গত নভেম্বরে র্যাবের হাতে ২৫০০ ইয়াবাসহ ধরা পড়েন।
র্যাবের একাধিক সূত্র জানায়, একাধিকবার আটকের কারণে রায়হানের ওপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর বেড়ে যাওয়ায় তিনি আড়ালে চলে গেছেন। তাই বলে তার এই পিকনিক চোরাচালান থেমে নেই। এবার তার অন্য কৌশল।
গত ৪ মার্চ রাজধানীর শ্যামলীতে চেকপোস্ট বসিয়ে একটি বাস থামায় র্যাব। বাসটির সামনে লাগানো ব্যানারে লেখা- ‘বার্ষিক ভ্রমণ ২০২০: স্থান কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিন’। পরে বাসটি তল্লাশি করে সাবান, পেস্টের প্যাকেট ও বাসের লাইট থেকে ২০ হাজার ইয়াবা উদ্ধার হয়। এ সময় রায়হানের শ্যালক মুস্তাকসহ পাঁচজন ধরা পড়ে।
সূত্রটি জানায়, কয়েকবার ধরা পড়া রায়হান আড়ালে থেকে তার এই পথে সদস্য বাড়িয়েছেন। তাদের মধ্যে আছে তার নিকটাত্মীয় ও বিশ্বস্ত লোকজন। তাদের পাঠান ইয়াবার চালান আনতে। তার দলে প্রায় ডজন খানেক সদস্য আছে, যারা বিভিন্ন প্রন্থায় মাদক আনা নেওয়ার সঙ্গে জড়িত। পিকনিকের সদস্য ও বাস নিজেই ঠিক করে দেন রায়হান।
সাভারের চন্দ্রার লাইনম্যান রায়হান
রাজধানী থেকে রাজশাহীগামী দূরপাল্লার পরিবহন চন্দ্রার লাইনম্যান রায়হান। প্রায় ১৫ বছর ধরে এই পেশায়। দীর্ঘদিন এই পেশায় থাকায় এবং চতুর প্রকৃতির বলে গাড়ির চালক ও তার সহযোগীদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক তার। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে দেশের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা থেকে মাদকের চালান এনে রাজধানী ও আশপাশে বিক্রি করেন। আগে চারবার ধরাও পড়েছে। প্রতিবার বেরিয়ে লাইনম্যানের পাশাপাশি মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। সবশেষ পাকস্থলিতে করে ইয়াবা বহনের সময় রায়হান ধরা পড়েন র্যাবের হাতে।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যমে শাখার উপপরিচালক মেজর রইসুল ইসলাম বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারির মধ্যে মাদক কারবারিরা বিভিন্ন সময় অভিনব পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে তাদের ব্যবসা চালানোর চেষ্টা করে। তা র্যাবকে বেশি ফাঁকি দিতে পারে না। চোরাচালানিরা ভাবেনি পেটে ইয়াবা আনলে ধরা পড়বে। কিন্তু সেটাতে তারা এখন সফল না। তেমনি পিকনিকের যাওয়ার আড়ালে যারা এসব অপরাধ করছে তারাও ধরা পড়ছে।’