চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামে আতঙ্ক সর্বত্র ৩২ দিনে ১২ খুনের ঘটনায় । তবে কোনো ঘটনাতেই এখন পর্যন্ত ধরা পড়েনি প্রকৃত আসামি।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। এই মুহূর্তে পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতু হত্যাকাণ্ড নিয়ে মাঠে কাজ করছে তাদের ১০টিরও বেশি গোয়েন্দা সংস্থা। অপর ঘটনাগুলোতে মামলা অনুযায়ী আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
অন্যদিকে সচেতন নগরবাসী এই ধরনের ঘটনায় আতঙ্কে ভুগছেন। সিসি ক্যামেরাসহ নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানো নিয়ে অনেকে রয়েছে উদ্বেগে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ইকবাল বাহার বলেন, হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। পুলিশ সুপারের স্ত্রীর খুনের ঘটনায় আমরা বসে নেই। যারাই এসব অপকর্ম করছে তাদের ধরতে মাঠে নেমেছে পুলিশ। এ ব্যাপারে তথ্য দিয়ে সাধারণ জনগণকে সহযোগিতা করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছি।
গত ২১শে জুন রাতে দুই ঘণ্টায় নগরীতে ডাবল মার্ডারসহ ৩ জনকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়েছে। নারী কেলেঙ্কারির বিরোধের জের ধরে পাঁচলাইশের হামজারবাগ এলাকায় খুন করা হয় মিজানুর রহমান ও মো. ইয়াছিন নামে দুই জনকে।
পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মহিউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ইয়াছিনের বাবা জহির উদ্দিন বাদী হয়ে গ্রেপ্তারকৃত সজীব, মহরম, ফারুক হোসেন, সাগর সহ অজ্ঞাত আরো ১০ থেকে ১৫ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন। গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ ও স্বীকারোক্তি অনুযায়ী এই ঘটনায় জড়িত অন্যদেরও গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চলছে বলে জানান ওসি।
সোমবার রাত ৯টায় পাঁচলাইশ থানার এম নাজের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ থেকে মিজানুর রহমানের লাশ পাওয়া গেছে। অন্যদিকে এর এক ঘণ্টা পর ১০টার দিকে বায়েজীদ থানার আমিন কলোনির আনসার ক্যাম্পের পাশের মাঠ থেকে মো. ইয়াছিনের লাশ উদ্ধার করা হয়।
এদের দুইজনের পিঠে ছুরিকাঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হামজারবাগ এলাকার থাইফুডের কর্মচারী বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।
একই সময়ে নগরীর ডবলমুরিং থানার পোস্তারপাড় এলাকায় পূর্ব শত্রুতার জের ধরে বদিউজ্জামান সাগর নামে এক গার্মেন্ট কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
কেবল এই ৩টি হত্যাকাণ্ডই নয়, চলতি জুন মাসে আরো বেশ কয়েকটি চাঞ্চল্যকর খুনের ঘটনা ঘটেছে। গত ৩রা জুন নগরীর কোতোয়ালি থানার আলকরণ এলাকায় সেলুন কর্মচারী মোমিন খুন হয়। ওই সময় পার্শ্ববর্তী নিউ মার্কেট এলাকায় সন্ত্রাসীরা হত্যা করে হোটেল ম্যানেজার রফিক নামের একজনকে।
৮ই জুন হালিশহর থানার আনন্দবাজার এলাকার ডাস্টবিনে পাওয়া যায় এক নারীর ৫ টুকরো লাশ। তার দুইদিন পর পাহাড়তলী এলাকায় পাওয়া যায় আরো একটি পোড়া লাশ। স্থানীয় একটি নালার ভেতর থেকে লাশটি উদ্ধারের পর বেরিয়ে আসে সেটি স্বেচ্ছাসেবক দলের একজন কর্মীর।
তবে চাঞ্চল্যকর খুনের ঘটনা ঘটে গত ৫ই জুন। চট্টগ্রামে বাসা থেকে বাচ্চাকে নিয়ে বেরিয়ে খুব সকালে নগরীর জিইসি মোড়ে খুন হন পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতু। দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করা এই ঘটনায় খুনিদের গ্রেপ্তারের দাবি উঠলেও এখন পর্যন্ত মূল খুনিদের কেউই ধরা পড়েনি বলে স্বীকার করেছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।
প্রথমদিকে এই ঘটনায় জঙ্গিদের সম্পৃক্ততার কথা বললেও পরবর্তীতে এর সঙ্গে সোনা চোরাকারবারিদের যোগাযোগ থাকার বিষয়ে সন্দেহ তৈরি হয় তদন্ত কর্মকর্তাদের। তবে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে গুন্নু ও বুলবুল নামের দুই আসামিকে ইতিমধ্যে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, খুনের ঘটনা রাস্তার মোড়ের সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা হলেও পরে তা অস্পষ্ট হওয়ায় অপরাধীদের শনাক্ত করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় তদন্ত কর্মকর্তাদের। ফলে চেহারা পরিষ্কার বোঝা না যাওয়ায় শনাক্ত করা যাচ্ছে না কারা মেরেছে পুলিশ সুপারের স্ত্রীকে।
এ বিষয়ে মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার দেবদাস ভট্টাচার্য বলেন, তদন্ত চলছে। শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাবে না। প্রকৃত আসামিদের গ্রেপ্তার করতে অভিযান শুরু হয়েছে।