চট্টগ্রাম : ড. রণজিৎ কুমার বিশ্বাস (রণজিৎ বিশ্বাস) গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন।সাবেক সিনিয়র সচিব ও নন্দিত লেখক ড. রণজিৎ কুমার বিশ্বাস (রণজিৎ বিশ্বাস) আর নেই। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬০ বছর। তিনি স্ত্রী ও এক মেয়ে রেখে গেছেন। তার স্ত্রী শেলী সেনগুপ্তা একজন শিক্ষক। কন্যা মুক্তা বিশ্বাস উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য কানাডায় অবস্থান করছেন।
পাঠকপ্রিয় লেখক রণজিৎ বিশ্বাসের আকস্মিক মৃত্যুর খবরে চট্টগ্রামে শিল্প–সাহিত্য ও সংস্কৃতিজনদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে। তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন জানান, একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্যে বুধবার রাতে চট্টগ্রাম এসে সার্কিট হাউজে উঠেছিলেন রণজিৎ কুমার বিশ্বাস। দুপুরে তিনি চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজের ভিআইপি কক্ষ ‘বকুল’ এ বিশ্রাম নিচ্ছিলেন।
বিকালে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে তার পরিচিত লোকজন ডাকতে এলে ভেতর থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে দরজা ভেঙে সার্কিট হাউসের কর্মচারীরা ভেতরে ঢুকেন। সেখানে বিছানায় শোয়া অবস্থায় রণজিৎ বিশ্বাসের প্রায় নিথর দেহ দেখতে পান তারা। রণজিত বিশ্বাসকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয় বলে জানান তিনি।
চিকিৎসক ডা. সাইফুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, তিনি হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেছেন। হার্ট এটাক করেছেন। এর আগে তার বমি হয়েছিলো। সন্ধ্যা ৬.৪১ মিনিটে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে নিয়ে আসা হয়। হাসপাতালে আনার ৪৫ মিনিট আগেই তিনি মারা যান। সাবেক সচিব রণজিৎ বিশ্বাস দীর্ঘদিন ডায়াবেটিসে ভুগছিলেন।
চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পোমরা গ্রামে ১৯৫৬ সালের ১ মে জন্মগ্রহণ করেন রণিজিৎ বিশ্বাস। তার পিতা অপর্ণাচরণ বিশ্বাস ছিলেন স্কুলশিক্ষক। ১৯৮১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি তথ্য কর্মকর্তা হিসেবে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন ড. রণজিৎ। প্রধানমন্ত্রীর উপ–প্রেস সচিবের দায়িত্বেও ছিলেন তিনি। এর আগে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১১ সালের ১৪ মার্চ সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিবের দায়িত্ব পাওয়ার পর একই বছরের ১০ অক্টোবর একই মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে পদোন্নতি পান।
২০১৩ সালের ২৫ মার্চ সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব হন রণজিৎ বিশ্বাস। গত বছরের ২৭ এপ্রিল অবসরে যাওয়ার দুইদিন আগে তিনি জ্যেষ্ঠ সচিব হিসেবে পদোন্নতি পান। ৩০ এপ্রিল তিনি অবসরউত্তর (এলপিআর) ছুটিতে যান।
১৯৭৩ সাল থেকে লেখালেখির জগতে আসেন। মুক্তিযুদ্ধ, মানুষ ও মানবতা নিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম দৈনিক আজাদীতে ‘প্রতিদিনের পথের ধুলায়’ নামে নিয়মিত কলাম লিখতেন। একই সাথে তিনি বিভিন্ন পত্রিকায় ক্রিকেট বিষয়ক প্রতিবেদনও লিখতেন। তাঁর লেখা বইয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য-‘কুড়িয়ে পাওয়া সংলাপ’, ‘মানুষ ও মুক্তিযুদ্ধের সংলাপ’, ‘শুদ্ধ বলা শুদ্ধ লেখা’, ‘হৃদয়ের ক্ষরণকথা’ অসঙ্কোচ প্রকাশ, ব্যবহারিক বাঙলায় ভ্রমকণ্টক, অসবর্ণ, চার কোণে চারজন, গৌরব আমার গানি আমার। সরকারি আমলা হিসেবে খ্যাতিমান রণজিৎ বিশ্বাস লেখক হিসেবেও পাঠকনন্দিত ছিলেন।
নিজেকে শ্রমজীবী লেখক হিসাবে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন এই লেখক ও সাবেক আমলা। কাপ্তাই পিডিবি স্কুল থেকে মেট্রিক, চট্টগ্রাম কলেজ থেকে এইচএসসি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। শিক্ষা জীবনের শেষে দৈনিক জামান নামে একটি পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেন।
ভাই সুজিত কান্তি বিশ্বাস জানান, তার জন্মস্থান রাঙ্গুনিয়ার দক্ষিণ পোমরার নিজ বাড়িতে তার শেষকৃত্য করা হবে।
চট্টগ্রাম গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সম্পাদক সাইফুল আলম বাবু জানান, ড. রণজিৎ বিশ্বাসের প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে উজ্জ্বল উপস্থিতি ছিল। বিকেলে ঘুমন্ত অবস্থায় তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে এইভাবে মারা যাবেন সেটা আমরা কল্পনাও করিনি।
প্রাক্তন সংস্কৃতি সচিব ড. রণজিৎ বিশ্বাস এনডিসির মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন সৎসঙ্গ বিহার চট্টগ্রামের নেতৃবৃন্দ। নেতৃবৃন্দ বলেন, রণজিৎ বিশ্বাস সৎসঙ্গ বিহার চট্টগ্রামের উপদেষ্টা এবং শুভাকাঙক্ষী ছিলেন।
রণজিৎ বিশ্বাসের মরদেহ আজ শুক্রবার সকাল ১১ টায় শ্রদ্ধা জানানোর জন্য চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে আনা হবে বলে প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মহসিন চৌধুরী জানিয়েছেন। এরপর মরদেহ বাড়িতে নেয়ার পর তাঁর শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হবে।